ঢাকা, শনিবার, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ৩১ মে ২০২৫, ০৩ জিলহজ ১৪৪৬

কর্পোরেট কর্নার

বেবি আইসক্রিম থেকে সেভয় কেক: দেশি আইসক্রিমের পথচলার গল্প

বিজনেস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:০৩, মে ২৯, ২০২৫
বেবি আইসক্রিম থেকে সেভয় কেক: দেশি আইসক্রিমের পথচলার গল্প

বরফশীতল মিষ্টান্নের প্রতি মানুষের আকর্ষণ নতুন কিছু নয়। ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলেই দেখা যায়— মার্কো পোলো চীন থেকে ফিরে তার ভ্রমণ কাহিনিতে শরবতের মতো একটি খাবারের কথা উল্লেখ করেন, ইংল্যান্ডের রাজা চার্লস নিয়মিত আইসক্রিম খেতেন, উপমহাদেশে মুঘলদের কুলফি সবাইকে বরফে মোড়া মিষ্টির মোহে আবিষ্ট করেছিল।

যুগে যুগে বদলেছে স্বাদ-রূপ-উপকরণ, তবে বদলায়নি আইসক্রিমের প্রতি মানুষের ভালোবাসা। আর সেই দীর্ঘ ঐতিহ্যের হাত ধরেই উঠে এসেছে বাংলাদেশের আইসক্রিম শিল্প।

ঢাকার প্রথম আইসক্রিম

দেশভাগের পরপরই ঢাকার আইসক্রিম শিল্পে সূচনা হয় এক নতুন অধ্যায়ের। জহির রায়হান পাকিস্তানের প্রথম রঙিন ছবি ‘সংগম’ বানান। এতে নায়ক ছিলেন হারুন। হারুনের বাবা ৫০-এর দশকে বেবি আইসক্রিম কারখানা চালু করেন। বেবি আইসক্রিমই ছিল ঢাকায় প্রথম রঙিন প্যাকেজে আইসক্রিম বিক্রির উদ্যোগ। প্রথমে স্কুলগেট আর পাড়ায় পাড়ায় বিক্রি হলেও দ্রুতই এটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

তখনকার দিনে ‘পাখা আইসক্রিম’ নামের ছাঁচে বানানো পাখা বা ছাতার মতো আকৃতির মজার আইসক্রিম ছিল শিশুদের প্রিয়। এগুলো কাপে নয়, কাঠি-যুক্ত হতো। আবার ধনী পরিবারগুলো ঘরে বরফ ভেঙে হাতের যন্ত্রে বানাতেন ঘরোয়া আইসক্রিম।

চট্টগ্রামেও ১৯৬০-এর দশকে গড়ে ওঠে মার্বেল টেবিল ও কাঠের চেয়ারে ঘেরা আকর্ষণীয় আইসক্রিম শপ, যেখানে পাওয়া যেত তিন টাকা পঁচিশ পয়সায় টুটি-ফ্রুটি আইসক্রিম, যা এখনো অনেকের স্মৃতিতে রয়ে গেছে।

দেশের আইসক্রিম বাজার ও ট্রেন্ড

২০১০ সালের পর থেকে বাংলাদেশের আইসক্রিম বাজারে দেখা যায় দ্রুত প্রবৃদ্ধি—প্রতি বছর গড়ে ১২–১৫ শতাংশ হারে। কোভিডকালীন ধাক্কা সামলে বাজার আবার চাঙ্গা হয়েছে।

এ প্রবৃদ্ধির পেছনে প্রধান চালিকাশক্তি: দেশের উষ্ণ আবহাওয়া, দীর্ঘ গ্রীষ্মকাল, নগরায়ণ, মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশ এবং তরুণদের রুচির পরিবর্তন। বর্তমানে বাজারের আকার আড়াই হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি, যেখানে ৯৭ শতাংশ দখলে দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর।

দেশি ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে ইগলু, পোলার, কোয়ালিটি, বেলিসিমো, সেভয়, ব্লুপ, লাভেলো, জেন এন জি, মাই আমোরে উল্লেখযোগ্য। বেবি আইসক্রিম এখন আর না থাকলেও ইগলু বা সেভয়ের মতো কোম্পানিগুলো দেশের আইসক্রিম প্রেমীদের সদা পরিবর্তনশীল স্বাদের চাহিদা মিটিয়ে চলেছে বেশ সফলতার সাথেই।

এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় সেভয়ের ফিউশন ডেসার্ট আইসক্রিম-কেক এর কথা। দুটি ভ্যারিয়েন্টে এ কেক পাওয়া যায়, প্রথমটি হলো ভ্যানিলা ভ্যারিয়েন্টে গোল্ডেন ডিলাইট। এ কেকে রয়েছে ৭টি স্তর, যার মধ্যে রয়েছে ভ্যানিলা স্পঞ্জ, স্ট্রবেরি সস, প্রিমিয়াম ভ্যানিলা আইসক্রিম এবং উপরে কেজু নাট ক্র্যাকলস। অন্যটি হলো চকোলেট ভ্যারিয়েন্টে ‘ডার্ক ডিসায়ার’ এই কেকেও রয়েছে সাতটি স্তর, যার মধ্যে রয়েছে চকোলেট স্পঞ্জ, লিকুইড ফাজ, প্রিমিয়াম চকোলেট আইসক্রিম এবং উপরে ডার্ক চকোলেট ফ্লেক্স।



প্রথম পর্যায়ে শুধুমাত্র ঢাকায় সীমাবদ্ধ ছিল এই পণ্যটির বাজারজাতকরণ। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যে সেভয় কর্তৃপক্ষের প্রত্যাশাকেও ছাপিয়ে যায় গ্রাহক চাহিদা। শুধুমাত্র রাজধানী নয়— দেশের নানা প্রান্ত থেকেই সেভয় আইসক্রিম-কেক এর প্রতি প্রবল আগ্রহ দেখা যায়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই কেককে ঘিরে তৈরি হওয়া আলোড়নের সূত্র ধরে গ্রাহকরা একে ভালোবেসে ডাকতে শুরু করেন ‘ভাইরাল সেভয় কেক’ নামে। ব্যবহারকারীদের রিভিউ, আনবক্সিং ভিডিও, জন্মদিন ও বিভিন্ন উদযাপনের মুহূর্তে সেভয় কেক- এর উপস্থিতি যেন ইন্টারনেট জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।

বাজারে থাকা প্রচলিত আইসক্রিম কেক যেখানে অনেক সময় কেবল বরফের ছাঁচে তৈরি আইসক্রিম পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে, সেখানে সেভয় তাদের পণ্যে যুক্ত করেছে আসল কেক এবং প্রিমিয়াম আইসক্রিম। অনেকেই যেখানে সাধারণ কেকের ভারী ক্রিম বা ফ্রস্টিং পছন্দ করেন না, সেখানে সেভয়ের কেক-কাম-আইসক্রিম এ সমস্যার চমৎকার সমাধান দিয়েছে।

এছাড়া, থার্মোকল প্যাকেজিং-এর কারণে এটি ফ্রিজ ছাড়া ঘরের তাপমাত্রায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় ভালো থাকে— যা ঠাণ্ডা পণ্যের বাজারে এক বিরল সুবিধা। এর পাশাপাশি, সহজলভ্যতা ও দেশের প্রধান সুপারস্টোর ও স্থানীয় দোকানে সহজেই পাওয়া যাওয়ায় গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাতে তেমন বেগ পেতে হয়নি।

যখন শুধুমাত্র ঢাকায় পাওয়া যাচ্ছিল সেভয় আইসক্রিম কেক, তখন দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকেও দারুণ চাহিদা তৈরি হচ্ছিল। এ পরিস্থিতিতে কোম্পানিটিকে পরিকল্পনার চেয়ে দ্রুত গতিতে সারা দেশব্যাপী পণ্য ছড়িয়ে দিতে হয়।

এ কেক আইসক্রিমটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, খুলনা, ময়মনসিংহ, বরিশাল এবং ঝিনাইদহের মতো মেট্রো শহরগুলোতে। অন্যান্য কেক বা আইসক্রিম থেকে এটি আলাদা কারণ এটি একটি ইউনিক কম্বিনেশন—একসাথে কেক এবং আইসক্রিমের স্বাদ পাওয়া যায়।

আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।