ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

‘বড়ালের জল আবার হোক টলমল’ দাবি বাবা-মেয়ের

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৬ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০২১
‘বড়ালের জল আবার হোক টলমল’ দাবি বাবা-মেয়ের

নাটোর: ‘বড়ালের জল আবার হোক টলমল’ এ স্লোগান নিয়ে এক সময়ের খরস্রোতা নাটোরের বড়াল নদের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার দাবিসহ পরিবেশ রক্ষায় এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছিলেন বাবা ও মেয়ে। তারা হলেন বাগাতিপাড়া উপজেলার মালঞ্চি গ্রামের বাসিন্দা মো. আরিফুর রহমান কনক ও তার মেয়ে নুশরাত জাহান।

 

শুক্রবার (০৪ জুন) সকাল ৯টায় বাবা-মেয়েসহ স্থানীয় প্রায় শতাধিক তরুণ-তরুণী বাগাতিপাড়া পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ থেকে পদযাত্রা বের করেন। পদযাত্রাটি বড়াল নদীর পাড় বেয়ে প্রায় ১১ কিলোমিটার হেঁটে জামনগর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে তারা এক সমাবেশে মিলিত হন। নদ রক্ষায় এমন ধরনের আয়োজনকে স্থানীয়রা ব্যতিক্রমী উদ্যোগ বলে আখ্যায়িত করে অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন।

এর আগে মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হেঁটে হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আলোচিত হয়েছিল আরিফুল ইসলাম কনক। এবার বড়াল নদী রক্ষা, ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনাসহ পরিবেশ রক্ষার দাবিতে ১১ কিলোমিটার পদযাত্রার আয়োজন করলেন তিনি। এজন্য তিনি সম্প্রতি এ আয়োজনের ঘোষণ দিয়েছিলেন। তাতে সাড়া দিয়ে শতাধিক তরুণ-তরুণী ও স্থানীয় সুশীল মানুষ পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করতে নাম রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন।

পদযাত্রার উদ্যোক্তা আরিফুর রহমান কনক বাংলানিউজকে জানান, ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও গত ২ জুন ছিল বিশ্ব দৌড় দিবস। এইদুই দিবসকে ঘিরে বড়াল নদী রক্ষার দাবিতে নিজের মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে এ কর্মসূচির আয়োজন করেন তিনি। পদযাত্রার পাশাপাশি আয়োজকরা বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে নদী সম্পর্কে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সমাবেশ করেন। তাদের একটাই দাবি ‘বড়ালের জল আবার হোক টলমল’।

তিনি বলেন, বড়াল তার জন্ম থেকে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় দৌড়ে চলেছে। কিন্তু মানুষ তার ভারসাম্য ও নাব্যতা দিন দিন নষ্ট করে ফেলছে। এক সময়ের খরস্রোতা বড়াল নদ ক্রমান্বয়ে শুকনো ফসলের মাঠে পরিণত হয়ে গেছে। নদী দখল করে ফেলেছে অনেকেই। কোথাও কোথাও নদের সীমানা হারিয়ে গেছে। এছাড়া নদের নাব্যতা সংকটে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পথে এবং প্রতিবেশগত ক্ষতির ফলে নদ অববাহিকার ওপর নির্ভরশীল মানুষ হুমকির মুখে পড়েছে।  

তাই বিবেকের তাড়নায় এ নদের ঐতিহ্য, নাব্যতা ও পরিবেশ-প্রতিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবিতে নিজের মেয়ে নুশরাত জাহানা কনককে সঙ্গে নিয়ে গত ২৮ মে নদের পাড়ে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে ফেসবুকে পদযাত্রায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলাম। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে শুক্রবার ১১ কিলোমিটার হেঁটে এ পদযাত্রা করেছেন শতাধিক মানুষ, যোগ করেন তিনি।

এ ব্যাপারে বড়াল নদ রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও বাগাতিপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হাদি বাংলানিউজকে বলেন, নদের প্রবাহ বন্ধ করার এখতিয়ার কারো নেই। অপরিকল্পিতভাবে ব্রিজ ও স্লুইসগেট নির্মাণের ফলে নদের স্বাভাবিক গতি হারিয়ে গেছে। এছাড়া নদের বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে দখল করার কারণে কোথাও কোথাও সীমানা পর্যন্ত হারিয়ে গেছে। বড়াল নদের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে সীমানা নির্ধারণ করে অবৈধ দখল মুক্ত করতে হবে, অপরিকল্পিত ব্রিজ, স্লুইসগেটসহ সব বাধা অপসারল করে নদ খনন করতে হবে।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা শ্যামল কুমার রায় বাংলানিউজকে বলেন, ব্যতিক্রমী আয়োজনে তরুণদের অংশগ্রহণ এবং বড়াল নদী রক্ষার আন্দোলন আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। তাই আমিও এ পদযাত্রায় অংশ নিয়ে এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছি।

বাংলাদেশ সময়: ০৩২১ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০২১
এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।