ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

সবুজ শহর তৈরির কারিগর ‘গ্রিন সেভার্স’

নূসরাত খান, এনভায়রনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৩
সবুজ শহর তৈরির কারিগর ‘গ্রিন সেভার্স’

ঢাকা: গাবতলীতে গাবগাছ, নিমতলীতে নিমগাছ, কলাবাগানে কলাগাছ আর সেগুনবাগিচায় সেগুনগাছ রোপণের মাধ্যমে অভিনব পদ্ধতিতে ঢাকাবাসীকে গাছ চেনানোর কাজ দিয়ে দু’বছর আগে প্রথম সাড়া ফেলে গ্রিন সেভার্স।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে পরিবেশ রক্ষায় জাতীয় পুরস্কার গ্রহণ করেছে গ্রিন সেভার্স।

যা তাদের তাদের আরো উদ্যোমী করে তুলেছে। এর আগে, এবছরই পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিবেশ মেলার প্রথম পুরস্কারটি এসেছে তারুণ্যে ভরপুর এই সংগঠনের ঝুলিতে।

গ্রিন সেভার্স সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা আহসান রনি সংগঠনটির সাফল্য নিয়ে বলেন, সাফল্য কাজের ফল হিসেবে আসবেই। এটা নিয়ে খুব বেশি ভাবছি না। আমাদের লক্ষ্য গাছের প্রতি মানুষের ভালোবাসা জাগিয়ে তোলা।

সবুজে ঘেরা ঢাকা শহর গড়ে তোলার লক্ষ্যে স্কুলের শিশুদের ভেতর গাছ রক্ষার বোধ জাগানোর কাজটি শুরু করেছে গ্রিন সেভার্স। নিজের ক্লাসের বন্ধুদের মাঝে নতুন নতুন গেমের সিডি আদান-প্রদান না করে যদি নিজের গাছে নতুন ফুল কিংবা ফল আসলে তা দেওয়া-নেওয়া করে, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আপনা থেকেই গাছের প্রতি, প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে উঠবে।

‘অক্সিজেন ব্যাংক’ নামের একটি ভাবনাকে প্রতিটি স্কুল শিক্ষার্থীর সামনে এনেছে গ্রিন সেভার্স। অক্সিজেনের ঘাটতিই এই শহরে মৃত্যুর কারণ হয়ে যায় বেশিরভাগ সময়। সেই ঘাটতি যেন পরবর্তীতে আর না হয়, তাই গ্রিন সেভার্স শিক্ষাথীদের নিজ স্কুলেই বাগান করার পরামর্শ দেয় তাদেরই সঞ্চিত অর্থে।

শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন এক টাকা করে অক্সিজেন ব্যাংকে ফেলবে, সেই অর্থ দিয়েই বাগান সমৃদ্ধ করা হবে। ব্যাংকের দায়িত্বে নিযুক্ত থাকেন প্রতিটি স্কুলের একজন শিক্ষক।

তিনি বলেন, দু’বছর আগে যখন গ্রিন সেভার্স সংগঠনের যাত্রা, তখন শুধু শহরাঞ্চলে মানুষের মাঝে গাছ লাগানোর চর্চাটা ফিরিয়ে আনাই ছিল একমাত্র লক্ষ্য। আর সে উদ্দেশ্যে বারান্দা কিংবা বাড়ির ছাদে বিভিন্ন পরিত্যক্ত সামগ্রী কাজে লাগিয়ে বাগান তৈরির পদ্ধতি সামনে নিয়ে আসে তারা। এক্ষেত্রে যার বাড়িতে বাগান করা হবে, সেই বাড়ির ভাঙা চেয়ার, অব্যবহৃত জুতা, ভাঙা মগ, প্লাস্টিকের বোতল কিংবা দইয়ের হাড়ি ব্যবহার করে ঝুলন্ত বাগান গড়ে তুলতে সহায়তা করে গ্রিন সেভার্স।

সংগঠনের সেচ্ছাসেবক মেহেদী বলেন,সময়ের সাথে সাথে সংগঠনের সদস্যরা নিজেদের কাজকে করে তুলেছে আরো সমৃদ্ধ। সম্পূর্ণ তরুণদের নিয়ে গড়ে তোলা এই সংগঠনে এখন যারা কাজ করছেন, তারা সবাই প্রকৃতি ও গাছের প্রতি ভালোবাসা থেকেই যুক্ত হয়েছেন।  

ভবিষ্যতে ঢাকা মহানগরে ভ্রাম্যমাণ প্লান্ট নার্সারি তৈরি করার পরিকল্পনা তাদের। এর মধ্যে গাছের জন্য মোবাইল ক্লিনিক রাখা হবে। বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন বাড়ির বাগানে সমস্যা সমাধানের কাজ করবে।

কৃষি পাঠের মাধ্যমে বিভিন্ন বয়সী মানুষ যুক্ত হচ্ছে গ্রিন সেভার্স’র সঙ্গে। আধুনিক কৃষির বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে চর্চা ও আলোচনা করা হয় সেখানে। প্রতি মাসে একটি কৃষি পাঠের ক্লাসের মাধ্যমে গ্রাম ও শহরের কৃষক ও গাছপ্রেমীদের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের একটি প্রচেষ্টা এই সংগঠনের।

এই কৃষি পাঠে শুধু যে সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেন, তা নয়। বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন পেশার মানুষ এতে অংশ নে, এবং গ্রামে কৃষকদের সমস্যা সমাধানে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে থাকেন। গ্রিন সেভার্স বরাবরই কৃষকের সন্তানদের সদস্য হিসেবে নিতে ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে।

এ প্রসঙ্গে আহসান রনি বলেন, অনেক সময় শহুরে কৃষিবিদদের সঙ্গে কৃষকের মতবিনিময় ঠিকমতো হয় না। পরামর্শ পায় হয়তো ঠিকই, কিন্তু প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়। কীটনাশক ব্যবহারে গ্রামের কৃষক আসলে নিজেই পরোক্ষভাবে ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে যখন তার সন্তান শহরে বাজার থেকে সেই কীটনাশক দেওয়া সবজিটা কিনে খাচ্ছে।

এক্ষেত্রে কৃষকের ছেলে যদি শহর থেকে আধুনিক কৃষি পদ্ধতি শিখে গ্রামে গিয়ে বাবার সঙ্গে তা ভাগাভাগি করে নেয়, আলোচনা করে, কৃষক তা উপলব্ধি করবেই। এই ভাবনা থেকেই কৃষি পাঠের আয়োজন করছে তারা। এর সঙ্গে আরো যোগ করলেন সংগঠনের অন্য এক সদস্য রায়হান আরিফ।

তিনি জানালেন, আপাতত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এই কৃষি পাঠের আয়োজন করছেন তারা। খুব কম সময়েই আগ্রহীদের ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন। এধরনের চর্চা কৃষিকে ফরমালিন আর কীটনাশকের কবল থেকে মুক্ত করবে।

এমনটাই আশা সবুজ শহরের স্বপ্ন দেখানো এই সংগঠনটির সবার।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।