ঢাকা, শনিবার, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০১ রবিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

লোকসান নিয়ে মেলা প্রাঙ্গণ ছাড়তে হবে প্রকাশকদের

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২১
লোকসান নিয়ে মেলা প্রাঙ্গণ ছাড়তে হবে প্রকাশকদের বইমেলা থেকে স্টল গুটিয়ে নিচ্ছেন এক প্রকাশক | ছবি: ডিএইচ বাদল

বইমেলা থেকে: করোনা নিয়ন্ত্রণে ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে কঠোর লকডাউন। ফলে নির্ধারিত সময়ের দুই দিন আগেই শেষ হচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা।

এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রকাশকরা। তারা জানান, লকডাউনের দুই দিন আগে মেলা বন্ধ করা হচ্ছে বলে প্রকাশকরা তাদের বইপত্রসহ যাবতীয় মালপত্র সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাবেন। তাই ১২ এপ্রিল মেলা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকার সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

দুই দিন আগে মেলা বন্ধ হওয়ায় নতুন করে কোনো ক্ষতি হবে না। গত ১১ মাসের ক্ষতির সঙ্গে বইমেলা আরেকটা লোকসান বলে আক্ষেপ নিয়ে জানিয়েছেন প্রকাশকরা। আর এ ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয় বলেই মন্তব্য তাদের।

বইমেলা নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা থাকলেও সেই আশাটা এবার পূরণ হয়নি। সুতরাং ১১ মাস ধরে যে খারাপ সময় যাচ্ছে, তার সঙ্গে বইমেলায় সৃষ্ট ক্ষতিতে প্রকাশকরা অস্তিত্ব সংকটে পড়বেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভপতি এবং সময় প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, গত এক বছর ধরেই প্রকাশকরা খারাপ অবস্থার ভেতর আছেন। এই বইমেলাটা শুধু এক মাসের একটা অতিরিক্ত সংযোজন। এর আগে যে ভালো ছিলাম তা কিন্তু নয়। এর আগের ১১ মাসও খারাপ ছিলাম। বইমেলা নিয়ে আমাদের আশা ছিল যে, আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবো, কিন্তু সেই আশাটা আমাদের পূরণ হয়নি। সুতরাং ১২ মাস ধরে প্রকাশকদের যে পরিমাণ খারাপ যাচ্ছে, তার ফলে অস্তিত্ব সংকটে পড়াটাই স্বাভাবিক।

তিনি বলেন, মেলাটা যেভাবে যাচ্ছিলো এবং যে সময়ে মেলাটা কমিয়েছে, হিসেব করলে এছাড়া কোনো উপায় নেই। কারণ ১৪ তারিখ থেকে লকডাউন, আমাদের তো তার আগে থেকেই এগুলো গুছিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে। সুতরাং এই সিদ্ধান্তে আমি কোনো দ্বিমতের সুযোগ দেখছি না।

শনিবার (১০ এপ্রিল) মেলা ঘুরে দেখা যায়, এদিন উল্লেখ করার মতো ছিল না পাঠক উপস্থিতি। যারা এসেছেন, অনেকেই বই কিনেছেন। আবার অনেকেই পা ভিজিয়েছেন স্বাধীনতা স্তম্ভের জলাধারে। অনেকেই ঘুরে ঘুরে সেলফি তুলেছেন, দুই-একজন বসে আড্ডা দিয়েছেন। এছাড়া মেলার মাঠে বিভিন্ন ছবি আঁকিয়েদের কাছে অনেককে নিজেদের স্কেচ তৈরি করে নিতেও দেখা গেছে। তবে করোনা পরিস্থিতি কাটলে আগামীতে মেলা রঙিন হবে বলেই প্রত্যাশা সার। কিন্তু ক্ষতি নিয়েই এবার মেলা প্রাঙ্গণ ছাড়তে হবে অধিকাংশ প্রকাশককে।

তাম্রলিপির প্রকাশক এ কে এম তারিকুল ইসলাম রনি বাংলানিউজকে বলেন, লেখক এবং পাঠকেদর যে প্রত্যাশা থাকে, এ বছর সেটি পূরণ হওয়ার নয়। তবে এই কোভিড পরিস্থিতিতেও মেলার আয়োজন করার জন্য সরকার এবং বাংলা একাডেমিকে ধন্যবাদ। পাঠকরা চাইলেই এখন অনলাইনের মাধ্যমে বই সংগ্রহ করতে পারেন। আমরা আশা করি ভবিষ্যতে ভালো কিছু হবে। আর ক্ষতি বলতে আশানুরূপ বিক্রি অনেকেরই হয়নি। যে প্রকাশক যে পরিমাণ বই প্রকাশ করেছে, যত ইনভেস্ট করেছে, তার ততটা ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণটা এতই যে, সেটা আসলে বলে বোঝানো যাবে না। করোনার মধ্যে তো এটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব না এবং বইমেলায় যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, সেটা আমাদের প্রকাশকদের জন্য কোনোভাবেই পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব না।

বইমেলা ও করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত প্রকাশকদের ক্ষতিপূরণের দাবি করেছে পাবলিশার্স ফোরাম কাটাবন। ফোরামের ক্ষতিগ্রস্ত সদস্যদের তালিকা কর্তৃপক্ষের কাছে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ফোরামের সম্পাদক দেলোয়ার হাসান।

প্রকাশনা সংস্থা চারুলিপির কর্ণধার হুমায়ুন কবির বলেন, এবারের মেলা আমাদের পথে বসিয়ে দিয়েছে। স্মরণকালের সবচেয়ে ব্যর্থ মেলা হিসেবেও এবারের মেলাকে অভিহিত করা যায়।

নতুন বই
বাংলা একাডেমির তথ্য মতে, শনিবার মেলার ২৪তম দিনে নতুন বই এসেছে ১০৮টি। এদিনের বিষয়ভিত্তিক বইয়ের মধ্যে গল্পের বই রয়েছে ২০টি, উপন্যাস ৯টি, প্রবন্ধ ১টি, কবিতা ৩৫টি, গবেষণা ২টি, ছড়া ৬টি, শিশুসাহিত্য ৭টি, জীবনী ৪টি, রচনাবলি ১টি, বিজ্ঞান ১টি, ইতিহাসের ৩টি, ধর্মীয় ৭টি, অনুবাদ ৩টি, সায়েন্সফিকশন ১টি ও অন্যান্য ৮টি।

উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে—মিজান পাবলিশার্স এনেছে লে. কর্নেল (অব.) এম. এ হামিদের ধর্মবিষয়ক বই ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম’, সেলিনা হোসেনের শিশুতোষ বই ‘আকাশপরী’, আলী ইমামের ‘গল্পগুলো পশুপাখির’, প্রিয় বাংলা এনেছে হানিফ সংকেতের ‘সংগত প্রসঙ্গত অসংগত’, পাঞ্জেরী এনেছে কিশোর ক্লাসিক অনুবাদ ‘দি মিল অন দি ফ্লস জর্জ ইলিয়ট’। ২৪ দিনে মোট বই প্রকাশ হয়েছে দুই হাজার ৫২৯টি।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২১
এইচএমএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।