ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

বইমেলা

বইমেলা: জনারণ্যে মাতৃভাষার আবেগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৩
বইমেলা: জনারণ্যে মাতৃভাষার আবেগ

ঢাকা: চারিদিকে শুধু মানুষ আর মানুষ। এতবড় পরিসর নিয়ে মেলা তবুও হাঁটা যায় না; বৃদ্ধ, শিশু, কিশোর, তরুণ-তরুণী সব বয়সের মানুশের উপস্থিতি; তারা বই দেখছেন, কিনছেন।

মহান একুশের দিনে মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ভাষার প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনে অনেকই আসেন বর্ণমালা খচিত পোশাকে। শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়া অকুতোভয় বীরদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা শেষে জনতার ঢল আছড়ে পড়ে বইমেলায়। সেই ভিড় আরও বাড়ে বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে।

মহান একুশের চেতনায় সৃষ্ট অমর একুশে বইমেলা। মঙ্গলবার তাই বইমেলা জুড়ে ছিল ভাষার আবেশ। সকালে ৮টায় বইমেলার দ্বার খোলার পর থেকে পুরো সময়টাতেই ঢাকা ও ঢাকার বাইরের মানুষ বইমেলায় ছুটে আসেন এদিন।

অপলার বয়স ছয়, আর ছোট ভাই নক্ষত্রের বয়স চার। ওরা দুই ভাইবোন হাত ধরাধরি করে শহীদ মিনার থেকে হেঁটে বইমেলায় আসছিল। পাশে ছিলেন তাদের বাবা-মা। তারা পোশাক পরেছিলেন বেশ মিলিয়ে। সাদা-কালো রঙের পোশাকের বিভিন্ন জায়গা বর্ণমালা দিয়ে সাজানো। শহীদ মিনারে গিয়েছিলে- জিজ্ঞেস করতেই ছোট্ট অপলা বলল, ‘ফুল দিয়ে এসেছি। আব্বু বলেছে আজ একুশে ফেব্রুয়ারি। আমাদের বাংলা ভাষার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের শ্রদ্ধা জানিয়েছি। ’ নক্ষত্র তখন বোনের দিকে চেয়ে চেয়ে কথা শুনছিল। কিছুক্ষণ পর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘মেলা কোথায়? আমাকে বই কিনে দাও। ’

উত্তরা থেকে এসেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ছাবদার হোসেন ও তার স্ত্রী। বললেন, ‘বয়স হয়েছে, হাঁটাচলা করতেও কষ্ট হয়। গাড়ি রেখে এসেছি সেই টিএসসিতে। সেখান থেকে হেঁটে হেঁটে শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলাম। যত কষ্টই হোক বছরের এ দিনটাতে ঘরে বসে থাকতে পারি না। তাই বইমেলাতে আসা। কয়েকটা বই কিনব। তারপর বাসায় ফিরব। ’

মঙ্গলবার এভাবে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের, সব পেশার মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় বইমেলা। সকাল থেকে শুরু করে রাতে মেলা শেষ হওয়া পর্যন্ত তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।

অমর একুশের দিনটি শোকের। তবে এ শোক এখন শক্তিও। সারাবিশ্বে দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়েছে। এদিন ভাষা দিবসের চেতনাকে হৃদয়ে ধারণ করে পথে নেমেছে জনতার ঢল। শহীদ মিনারের বেদিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়ে সবাই পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটে আসেন বইমেলায়।

এদিন মেলার দ্বার খুলে যায় সকাল ৮টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। পুরো সময়জুড়েই মেলায় ছিল জনস্রোত। আর সবচেয়ে লক্ষ্য করার মতো বিষয় হল- বেশিরভাগ মানুষের পোশাকে ছিল শোক ও বর্ণমালার আবহ।

প্রকাশকদের অনেককেই বলতে শোনা গেছে, একুশে ফেব্রুয়ারির দিন মেলায় মানুষ যেভাবে এসেছে বিক্রি সেভাবে হয়নি। তবে বিভিন্ন প্যাভিলিয়ন ও স্টল ঘুরে দেখা গেছে, মানুষ মেলায় যেমন এসেছে তেমনিভাবে ভালো বিকিকিনিও চলেছে। এদিন বিভিন্ন সময়ে মেলায় এসেছিলেন জনপ্রিয় পাঠকপ্রিয় লেখক-লেখিকারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৩
এইচএমএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।