ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বাংলানিউজ স্পেশাল

ভ্রমণের অনুমতি পেলেই দেশে ফিরবেন সেই নাবিকরা

জেসমিন পাপড়ি, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪০ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৪
ভ্রমণের অনুমতি পেলেই দেশে ফিরবেন সেই নাবিকরা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: সাড়ে তিন বছর পর মুক্তি মিললেও এখনও দেশে ফিরতে পারেননি সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে আটক থাকা সাত বাংলাদেশি নাবিক।

তবে তাদের দেশে ফেরত আনতে তৎপর রয়েছে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস।



এই সাত বাংলাদেশি নাবিক হলেন সাতক্ষীরার গোলাম মোস্তফা, হাবিবুর রহমান, আবুল কাশেম সরকার ও নুরুল হক, চাঁদপুরের লিমন সরকার এবং চট্টগ্রামের আমিনুল ইসলাম ও জাকির হোসাইন। তাদের সঙ্গে একই দলে একজন ভারতীয়, দু’জন শ্রীলংকান এবং একজন ইরানি নাবিকও ছিলেন। জলদস্যুদের কবল থেকে তারাও মুক্তি পেয়েছেন।

জাতিসংঘের ‘পলিটিক্যাল অফিস ফর সোমালিয়া’র সহায়তা গত শুক্রবার মুক্তি পান তারা। এরপর শনিবার বিমানযোগে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে নিয়ে আসা হয় তাদের।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহিঃপ্রচার ও অনুবিভাগের মহাপরিচালক সালাহউদ্দিন নোমান চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, মুক্তি পাওয়া সাত বাংলাদেশি নাবিকই সুস্থ আছেন। তবে দীর্ঘদিন বন্দি থাকায় তারা এখন ভ্রমণের উপযুক্ত কী না সে বিষয়ে মেডিকেল চেক আপ চলছে। চিকিৎসকের ছাড়পত্র পেলেই দ্রুত তাদেরকে দেশে ফেরত আনা হবে।

ইতোমধ্যেই তাদের দেশে আসার প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে বলে জানান তিনি।

২০১০ সালের ২৬ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আলবেদো থেকে এই সাত বাংলাদেশি নাবিককে অপহরণ করা হয়। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের (ইউএনওডিসি) সহায়তায় সাড়ে তিন বছর পর মুক্তি মেলে তাদের। নাইরোবির আগা খান হাসপাতালে এখন তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে।

মুক্তির পর জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের (ইউএনওডিসি) একটি উড়োজাহাজযোগে এই সাত নাবিককে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে নেওয়া হয়। সেখানে ইউএনওডিসি কর্তৃপক্ষ ও নাইরোবিতে বাংলাদেশি দূতাবাস কর্মকর্তারা তাদের গ্রহণ করেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, নাইরোবিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন মুক্তি পাওয়া নাবিকদের দেখাশোনা করছে। তাদেরকে স্থানীয় একটি হোটেলে রাখা হয়েছে। সেখানে তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য, ওষুধ এবং পোশাকসহ সব কিছু সরবারহ করা হচ্ছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সাত নাবিক অপহরণের ঘটনার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের উদ্ধারে কাজ শুরু করে। এর আগে প্রাথমিকভাবে মেরিটাইম পাইরেসি ও মানবিক রেসপন্স কর্মসূচির (এমপিএইপআরপি) মাধ্যমে এই সাত বাংলাদেশি ক্রু’র জীবিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

জানা যায়, জাহাজের মালিক মালয়েশীয় নাগরিক হওয়ায় প্রথমে তার কাছ থেকে মুক্তিপণের অর্থ আদায়ের জন্য কূটনৈতিক লবিং চালানো হয়। কিন্তু জাহাজের দামের চেয়ে মুক্তিপণের অর্থ বেশি মনে করে মালিক পালিয়ে যান। নাবিকদের পরিবারের পক্ষ থেকে সোমালিয়ার মুসলমানদের কাছে মানবিক আবেদনও করা হয়। কিন্তু মুক্তিপণ ছাড়া জলদস্যুদের হাত থেকে কারো মুক্তি মেলে না। বিকল্প উপায় না থাকায় তিন বছরের মাথায় মুক্তিপণের ব্যবস্থা করার উদ্যোগও নেয় সরকার।

জলদস্যুদের দাবি করা ৬ লাখ মার্কিন ডলার বা প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ রাষ্ট্রের তিনটি তহবিল থেকে যোগান দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গত বছরের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর অনুমোদনও দিয়েছিলেন। তবে মুক্তিপণের টাকা সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়াটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত না হওয়ায় ভিন্ন চ্যানেলে এর ব্যবস্থার কথা বলেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ ক্ষেত্রে অনানুষ্ঠানিকভাবে সহায়তা করে জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক অফিস ইউএনওডিসি ও লন্ডনভিত্তিক মেরিটাইম পাইরেসি অ্যান্ড হিউমেনিটারিয়ান রেসপন্স প্রোগ্রাম (এমপিএইচআরপি)। সেই ধারাবাহিকতায় মুক্তি পান এই নাবিকরা।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৯ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বাংলানিউজ স্পেশাল এর সর্বশেষ