বইমেলা থেকে : বর্তমান প্রজন্মের পল্লবগ্রাহী কবিকূলে ব্যতিক্রমভাবে ‘নিজ জমিনে দাঁড়াবার স্পর্ধী’ কবি আলফ্রেড খোকন। সমাজ-রাজনীতি-অর্থনীতির ঘাত-প্রতিঘাতে পিষ্ট মানুষের আশা-আবেগ, ভাব-ভালোবাসা অবলীলায় শিল্পরূপ পায় তার কবিতায়।
বইমেলায় লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে কথা হয় তার সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ। হালের শিল্পসাহিত্য, তরুণ প্রজন্মের শক্তি ও সীমাবদ্ধতা, লেখক-পাঠক-প্রকাশকের হালচাল, বইমেলার ব্যবস্থাপনা ও আয়োজনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ করেন কবি আলফ্রেড খোকন।
বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।
প্রথমেই কথা হয় তরুণ প্রজন্মের শিল্পসাহিত্য চর্চা নিয়ে, তিনি বলেন ‘তরুণ বাংলা সাহিত্য; এই সময়ে এসে সাঁকো নেই! গ্রাম থেকে গ্রামের সংযোগের, অতীতের সঙ্গে বর্তমানের পরম্পরা রক্ষায় যে সাঁকোটি দরকার তা নেই। কোন জমিনে দাঁড়ানো তার সঙ্গে সম্পর্ক ক্রমাগত সিঁথিল হচ্ছে। ইন্টানেটের প্রক্রিয়ায় প্রবেশ মধ্যে এসে তাদের পুরো জীবন ও কাজ ‘কোটেশন নির্ভর’ হচ্ছে। ইতিহাসের কোটেশন দরকার তখন কোটেশন অন্বেষণকারী পাঠক হয়ে যাচ্ছে।
বদরুদ্দীন উমরের ‘ভাষা আন্দোলনের মোটা মোটা ৩ খণ্ড’ আর পড়বে না। ওখান থেকে কোটেশন লাগবে তো সহজেই পেয়ে যাচ্ছে। একজন লেখক তখনই তার চতুর্পাশের, নিজের ও বাইরের জমিন সম্পর্কে ধারণা রাখে যদি সে ইতহাস-রাজনীতি-অর্থনীতির পাঠ তার নখদর্পণে থাকে।
ভালো লেখক মানে ভালো পাঠকও বটে। শিল্পসাহিত্য চর্চা একাডেমিক ও নন একাডেমিক উভয় প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে হয়। সমাজ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির পাঠ তাই জরুরি।
জীবনানন্দসহ বাংলা সাহিত্যের যে কয়জন গুণী লেখক তারা প্রত্যেকেই অসাধারণ পাঠক। আগে ভাবতাম প্রাকৃতিক একটা কিছু আছে। অন্তর্গত বিষয় তো কিছু থাকেই। কিন্তু ইতহাস-সময়-সমাজ-রাজনৈতিক ধারণা না থাকলে সে কিছুই দিতে পারবে না। ’
আলফ্রেড খোকন আরো বলেন ‘তরুণ প্রজন্ম তৈলমর্দনকারী হয়ে পড়েছে। নানা জাতীয় পুরস্কারের আশায় ছুটে বেড়ায় তারা। সমাজ নিয়ে ভাবনা নেই, তাই তৈলমর্দন করে। সবার হাতে সবকিছু ফলে না। তবুও এর মধ্যে জনা কয়েক তরুণ, কারো কারো কবিতা, কথাসাহিত্য আরো কিছু সময় গেলে তাদের সম্ভাবনার পরিণতি বোঝা যাবে। ’
বইমেলায় প্রকাশিত নতুন বই প্রসঙ্গে বলেন, ‘বইয়ের বিষয় বৈচিত্র্য বাড়ছে, কিন্তু মান বাড়ছে না। লেখকেরা পরিশ্রমী ও যত্নশীল না হয়ে ‘ক্লোন লেখক’ হয়ে পড়ছেন। ’
মেলায় আসা বিপুল পাঠক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পাঠকের বিবেচনা ক্রমশ বাড়ছে। এখন পাঠকেরা টাকা দিয়ে বই কিনছে। তাই বিবেচনা করেই কিনছে।
বইমেলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আলফ্রেড খোকন বলেন, ‘বাংলা একাডেমী কি কারণে অসংখ্য অপ্রকাশকদের স্টল বরাদ্দ দিয়েছে? এই বইমেলা একটা বস্তিমেলা হয়ে গেছে। এখানে এসে পাঠকেরা কোনো প্রফুল্ল দৃশ্য পায় না। তবে আমি মনে করি বইমেলা বাংলা একাডেমীতেই হওয়া উচিৎ। এর বাইরে গেলেই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে পরিণত হয়ে যাবে। অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দলীয় রাজনীতির বিবেচনা বর্জন করা গেলে বাংলা একাডেমীতেই মেলা সুষ্ঠুভাবে সম্ভব। ’
এবারের বইমেলায় কবি আলফ্রেড খোকনের কাব্যগ্রন্থ ‘চল্লিশ বসন্তে’ প্রকাশ করেছে ‘জয়তী’ প্রকাশনী।
বাংলাদেশ সময় : ১৮১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১২