ঢাকা, শনিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ মে ২০২৪, ০২ জিলকদ ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

লেখক বিক্রম শেঠ কলকাতায় যা করলেন...

সুমন মজুমদার, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১২
লেখক বিক্রম শেঠ কলকাতায় যা করলেন...

জন্মভূমি কলকাতা ঘুরে গেলেন বিখ্যাত পাঞ্জাবি লেখক, কবি, পর্যটক ও শিশু সাহিত্যিক বিক্রম শেঠ। জন্মসূত্রে পাঞ্জাবি হলেও কলকাতায় এসে এ শহর তার শিকড় বলেই উল্লেখ করেছেন তিনি।

সম্প্রতি কলকাতায় এক সাহিত্য সভায় বক্তব্য রাখেন এই বিখ্যাত লেখক। যাকে তিনি তার ভাষায় উপস্থাপন করেছেন ‘দ্যা বিক্রম শো’ নামে। এতে উঠে এসেছে সমকালীন সাহিত্যের নানান বিষয়সহ  লেখকদের ব্যাক্তিগত জীবনের খণ্ড চিত্রও।

দ্য বিক্রম শো  

বিক্রম মূলত কলকাতায় এক পাঞ্জাবি পরিবারে জন্ম নিলেও পৈত্রিক নিবাস জয়পুরে কখনই যাওয়া হয়নি তার। চাকরি সূত্রে তার পরিবারকে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে সারা ভারতবর্ষসহ দেশ বিদেশে নানান জায়গায়। যার প্রচ্ছন্ন প্রভাবও পড়েছে তার লেখায়। এ সুইটেবল বয়, দ্য গোল্ডেন গেটের মত বৃহৎ বইয়ের এ লেখক (তার ভাষায় নামেই বৃহৎ, কাজে নয়) দু-একদিনের মধ্যেই হঠাৎ করে বিশেষ স্থান দখল করে নিলেন কলকাতার সাহিত্য মহলে।

সেখানকার লেখকদের সাথে আলাপচারিতার ছয় দিনের মধ্যেই এক সাহিত্য সভায় জয়পুর না গিয়েও তার সম্পর্কে পূর্ণ ধারনা দিয়ে প্রথমে তাক লাগিয়ে দেন সবাইকে। সে সভায় বিক্রমের দেয়া বক্তব্যই ছিলো মূলত সকলের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। সেসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন আরেক বিখ্যাত বাঙালি লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। যাকে বিক্রম ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন কলকাতার সুধী মহলে তাকে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য। সে বক্তৃতায় বিক্রম নিজের সম্পর্কে নানান তথ্য তুলে ধরেন।

তিনি জানান, তার প্রকৃত নাম আসলে ‘অমিত’ যা তার মায়ের দেয়া। যেটি আবার কিনা রবি ঠাকুরের ‘শেষের কবিতা’ উপন্যাসের বিখ্যাত একটি চরিত্র। বিক্রম বলেন, যদি আমি উপন্যাসের সেই চরিত্র অমিত রায়কে সামনের সাড়ি থেকে সরাসরি অনুসরন করি তাহলে কি আসলে আমরা হেরে যাব? তার বাবার পরিবারের দিক থেকে অবশ্য অমিত নামে আপত্তি না থাকেলেও তারচেয়ে ভারি নাম বিক্রমই পছন্দ ছিলো তাদের। যদিও তিনি এখনো বার্থ-সার্টিফিকেট অনুযায়ী বিক্রম নয় বরং অমিত নামই লেখেন বলে জানান।

আলতো উপস্থাপন

বিক্রম তার সেই বক্তৃতায় ভারতীয় একটি রাজ্যকে ভৎসনা করে বলেন, একবার তিনি এমনি এক সাহিত্য সম্মেলনে এসেছিলেন ওই রাজ্যে। সেখানে তখন আরেকজন বিখ্যাত লেখক উপস্থিত ছিলেন। তার পরের দিন সেখানকার একটি জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেলের একজন সাংবাদিক বিক্রমকে প্রশ্ন করেছিলেন তিনি কেন তার বক্তৃতায় রুশদি বা অন্য কোন লেখকের নাম উল্লেখ করেননি। তার জবাব দেন বিক্রম কলকাতার এ বক্তৃতায়।

তিনি তার বিদ্রুপ মেশানো ভাষায় বলেন, পরের দিন সকালে অবশ্য আমি সেই লেখকের সাথে এমনি আরেকটি সাহিত্য সম্মেলনে যখন দেখা করতে গেলাম সেটা ছিলো অন্যরকম অভিজ্ঞতা। আমার টেলিপ্যাথিক সেন্স আমাকে তার সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে সাহায্য করেছিলো।

তিনিই আমাকে বলেছিলেন রুশদি ও তার নানা লজ্জাজনক চরিত্র সম্পর্কে । আমার মনে হয় সে লেখক ছিলেন আসলে সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আমি তার নাম উল্লেখ করছি না কারণ তার হীন চরিত্রটিকেই আন্ডার লাইন করতে চাই। তারপর বিক্রম খুব নরম ভাবে শিশুর মত ভঙ্গিতে আলতো করে ৩ বার বললেন- সালমান রুশদি, সালমান রুশদি, সালমান রুশদি এবং দ্যা স্যাটানিক ভার্সেস, দ্যা স্যাটানিক ভার্সেস, দ্যা স্যাটানিক ভার্সেস। তারপর সাংবাদিকদের উদ্যেশ্যে বললেন, শব্দ যদি বানাতেই হয় আসলে তা এমন নরম হওয়াই উচিত। আক্রমণাত্মক নয়।

আশ্চর্য শয্যাসঙ্গী

কলকাতার ওই সাহিত্য সভায় বিক্রমের দেয়া বক্তৃতাকে ঠিক কোন ক্যাটাগরিতে ফেলা যায় ভাবছিলেন সবাই। কারণ সেখানে কি না করলেন তিনি! পড়লেন, পারফর্ম করলেন, কৌতুক বললেন, এমনকি হেড়ে গলায় গানও করলেন। অবশ্য এর জন্য উপস্থিত সবার কাছে সরিও বলে  নেন পরে। তিনি কৌতুক করে বলেন, এই প্রজাতন্ত্র দিবসটি লেখকদের জন্য একটি নিরস দিন হিসেবে নানা সমস্যা নিয়ে এসেছে।

কিন্তু তার বক্তৃতার আগে ও পরে তিনি অবশ্য ফিরে এসেছিলেন আরেক উপস্থিত লেখক রুচির যোশির সাথে তার নতুন বই “দ্যা রিভারর্ড আর্থ” সংক্রান্ত আলোচনায়। একসময় জমেও ওঠে তাদের দ্বৈরথ। নিজের বই নিয়ে ওই আলোচনায় বিক্রম বলেন, আমি ওই বইয়ে কেবল মানুষের শুভ পরিবর্তনের দিকগুলোকেই উল্লেখ করেছি। সেটির পেছনে একধরনের অন্য রকম শক্তি কাজ করে। সেটাকে নিঃসন্দেহে উচ্ছসিত ভাবে এক আধ ঘণ্টা বা বড় একটা সময় ভালো কাজে ব্যাবহার করা যায়। যা তিনি তার দ্যা রিভারর্ড আর্থ বইয়ে প্রবলভাবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করেছেন। এসময় কথা প্রসঙ্গে উঠে আসে দুই লেখকের ব্যাক্তিগত জীবনও।

নিজের বই নিয়ে আলোচনার এক ফাঁকে অবশ্য বিক্রম বলেন, তিনি আসলে একজন অলস লেখক। এ প্রসঙ্গে যোশি তার বক্তৃতায় পাকিস্তানি লেখক নাদিম আসলামের নাম উল্লেখ করেন। যোশি বলেন, নাদিম তার একটি বই অনেক অল্প বয়সে শুরু করলেও সেটি শেষ করেন শেষ বয়সে। তার কোন সামাজিক অথবা প্রেম জীবনও ছিলো না। এ বিষয়ে বিক্রম যোশিকে জিজ্ঞেস করেন, আসলামের কোন গার্লফ্রেন্ড অথবা বয়ফ্রেন্ড ছিলো কিনা?

জবাবে যোশি বলেন, তিনি একবার এ ব্যাপারেই লন্ডনে গিয়েছিলেন। বিক্রম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, আহ তাহলে তোমরা একসাথে কাটিয়েছিলে! ফিরতি আরেক প্রশ্নে যোশি বিক্রমকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি কিভাবে তার পান্ডুলিপি রচনা করেন, হাতে লিখে নাকি অন্য কোন উপায়ে? বিক্রম জানান, তিনি তার প্রায় সব কবিতা হাতেই লিখেছেন। শুধুমাত্র তার গল্পগুলো থাকে ল্যাপটপে। এছাড়া তিনি তার প্রায় সব লেখাই নিজের বিছানায় হেলান দিয়ে লেখেন বলে জানান। যা অনেকটাই মার্কিন সমকামি লেখক ট্রুমেন ক্যাপোটের মত।

বাংলাদেশ সময় : ১৬১০, জানুয়ারি ৩০, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।