ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

এই সময়ে ফিরে দেখা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ

হানিফ রাশেদীন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১২
এই সময়ে ফিরে দেখা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের বই ‘ফিরতে হবে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে’। বইটিকে সাজানো হয়েছে ‘মানুষ ও সমাজ’, ‘দেশ ও গণতন্ত্র’ এবং ‘বাণিজ্য ও অর্থনীতি’ এই ৩টি শিরোনামে ৩টি অধ্যায়ে।

  প্রতিটি অধ্যায়-শিরোনামকে কেন্দ্র করে বিন্যস্ত করা হয়েছে একেকটি অধ্যায়ের প্রবন্ধসমূহ। যার বিষয়বস্তু কেন্দ্রিয় শিরোনামের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র বিদ্যমান।  

‘মানুষ ও সমাজ’ অধ্যায়ে ১৬টি প্রবন্ধ রয়েছে। প্রথম প্রবন্ধ ‘দু’হাজার আট’। এখানে মানুষ ও সমাজের এক বাস্তবিক ও মনস্তাত্তিক চিত্র আমরা দেখতে পাই। একটি নতুন বছরের প্রবেশদ্বারে পরস্পরকে আমরা শুভ কামনা জানিয়ে থাকি। লেখক এখানে প্রশ্ন রাখেন যে, এই শুভ কামনা কি হৃদয়নিঃসৃত নাকি লৌকিকতা আশ্রিত। তিনি দেখান যে, কখনো হৃদয়নিঃসৃত। কখনো কেবল লৌকিকতা আশ্রিত, যেখানে হৃদয়ের কোনো যোগ থাকে না। কখনো আবার হৃদয় ও লৌকিকতা বা সামাজিকতা এই দুইয়ের সমন্বয় থাকে। এই প্রবন্ধেই তিনি আরেকটি বিষয়ের অবতারনা করেন, ‘আসসালামু আলাইকুম’। সালামের অর্থ আমরা জানি, কিন্তু সব সময় সেই শুভ কামনা থেকে কি আমরা সালাম দিই? এই সালাম দেয়ায়ও মানুষের মুল্যবোধের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মানুষের সামাজিকতা বা সামাজিক শিষ্ঠ্যচার, যার ফলে মানুষ অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা। মানুষের এই সামাজিক শিষ্ঠ্যচারের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দু’টি দিকই রয়েছে। মুখে অপরের জন্য শান্তি কামনা করা হচ্ছে, কিন্তু অনেক সময় বাস্তবে এর মিল নেই। সালামের অবশ্য ধর্মিয় একটি প্রেক্ষাপটও রয়েছে। এই অধ্যায়ে উল্লেখযোগ্য অন্যান্য প্রবন্ধগুলো, ‘দুঃখে যাদের জীবন গড়া’, ‘মানব জাতির চেতনা বিবর্তন’, ‘বিশ্বাস’, ‘দুর্নীতি দমন’, ‘মানস গঠন প্রক্রিয়া’।

দ্বিতীয় অধ্যায় ‘দেশ ও গণতন্ত্র’। এই অধ্যায়ে ২৬টি প্রবন্ধ রয়েছে। উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগুসমূহ হলো ‘গণতন্ত্রের আগে বিশেষণ বসে না’, ‘গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ’, ‘গণতন্ত্র কি প্রণয়ন করা যায়?’, ‘গণতন্ত্রের শত্রু ও মিত্র’, ‘গণতন্ত্র একটি কৃষ্টি : পদ্ধতিমাত্র নয়’, নির্বাচনই গণতন্ত্রে উত্তরণের পথ’, ‘ভোট একটি অস্ত্র’, ‘ফিরতে হবে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে’, ‘নিরপেক্ষতার আপেক্ষিকতা’, ‘জরুরি আইন নিয়ে কথা’, ‘নির্বাচন, সন্ত্রাস ও জরুরি আইন’ এবং ‘বিচার ব্যবস্থা সংস্কার’।

‘ফিরতে হবে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে’ প্রবন্ধটি পঁচাত্তরের পনেরই আগস্টের উপর এক তাৎপর্যপূর্ণ দলিল। আমরা কেবল পনেরই আগস্টের নির্মমতার দিকটা দেখতে অভ্যস্ত। কিন্তু খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ এই প্রবন্ধে পঁচাত্তরের পনেরই আগস্টকে কোন সাধারণ দুর্ঘটনা নয়, কুটিল ও নৃশংস সন্ত্রাসের দিন বলে আখ্যায়িত করেন। লেখকের ভাষ্যে, ‘পনেরই আগস্ট ছিল এক গভীর ষড়যন্ত্রের দিন-- একাত্তরের পরাজিত শত্রু বিদেশী রাষ্ট্র এবং তাদের এদেশীয় সহযোগীদের মিলিত কাপুরুষোচিত বর্বর আক্রমণ...’। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, মৃত্যু অথবা অন্য কোন কারণে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে সংবিধান অনুয়ারী উপরাষ্ট্রপতি শূন্যপদে অধিষ্ঠিত হবেন। উপরাষ্ট্রপতিও না থাকলে জাতীয় সংসদের স্পিকার শূন্যপদে কর্মপরিচালনা করবেন। সে-সময় উপরাষ্ট্রপতিও ছিলেন, স্পিকার ছিলেন। কিন্তু স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি হলেন খোন্দকার মুশতাক, যার সাংবিধানিক যোগ্যতা নেই। এবং যিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশন করার জন্য মার্কিন মহলে দেনদরবার করেছিলেন।

‘বাণিজ্য ও অর্থনীতি’ নামক তৃতীয় অধ্যায়ে ১০টি প্রবন্ধ রয়েছে। ‘ব্যবসায়ে নৈতিকতা’, ‘পল্লী বিপণন কাঠামো নির্মান’, ‘আইএমএফ বিতর্ক’, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও পূর্বকথা’, ‘পোশাক শিল্পের সাজসজ্জা’ এবং ‘রেমিটেন্সের দায়িত্বে ফোন কোম্পানি’ উল্লেখযোগ্য।

‘পল্লী বিপণন কাঠামো নির্মান’ প্রবন্ধটিতে লেখক দেখান যে, সকল পণ্যের ক্ষেত্রেই ‘উৎপাদক-বিপণন-ক্রয়’ প্রক্রিয়া জড়িত রয়েছে। কিন্তু বিপণন প্রক্রিয়া সকল পণ্যের ক্ষেত্রে সমান নয়। পরিস্থতি ভেদে বিপণন প্রক্রিয়াতে ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। আর এই বিপণন ভিন্নতার কারণে পণ্যের দামেরও তারতম্য দেখা দেয়। বড় বড় কোম্পনীর ডিস্ট্রিবিউটারদের মতো ক্ষুদ্র ও গ্রামীণ ব্যবসায়ীদের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নেই। যার ফলে তাদের বিপণন ব্যবস্থা দুর্বল। এই সুযোগে এক দল মধ্যসত্বভোগী বিপণন প্রক্রিয়ার কাজ করে, আর একটি বড় লভ্যঅংশ তারা হাতিয়ে নেয়। এই অবস্থা থেকে পরিত্রানের উপায়ে লেখক বলেন, ক্ষুদ্র ও গ্রামীণ ব্যবসায়ীদের আন্তঃস্তর সমন্বয়, বিপণন প্রক্রিয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা এবং উৎপাদনকারীর সংশ্লিষ্টতা।

সর্বপোরি মানুষ ও সমাজ, দেশ ও গণতন্ত্র, এবং বাণিজ্য ও অর্থনীতি বিষয়ে এই বইটির মাধ্যমে স্পষ্ট একটি ধারনা হয়। আমরা দেখতে পাই মানুষ ও সমাজের মধ্যকার যোগসূত্র। গণতন্ত্র কী? আমাদের দেশে গণতন্ত্র কীভাবে বিরাজ করছে? আমদের দেশ আসলে কতটা গণতান্ত্রিক? এবং বাণিজ্য ও অর্থনীতির মধ্যকার অন্তর্নিহিত নানা দিক।

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের ‘ফিরতে হবে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে’ বইটি প্রকাশ করেছে  সূচীপত্র প্রকাশনী; প্রচ্ছদ করেছেন সাঈদ বারী; মুল্য : ৩৯৫ টাকা।

বাংলাদেশ সময় ১৭০১, জানুয়ারি ২৩, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।