ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

জাপানে কবিগুরুর অজানা অধ্যায়ের কড়চা

আশরাফুল ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১২
জাপানে কবিগুরুর অজানা অধ্যায়ের কড়চা

বাংলা শিল্প-সাহিত্যের সকল শাখায় যাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি তিনি আমাদের কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কবিগুরুর কল্যাণে যে কেবল বাংলাসাহিত্য, সংগীত, শিল্পকলা সমৃদ্ধ হয়েছে, সমুন্নত হয়েছে আমাদের মর্যাদা--- তাই নয়;  তিনি সমৃদ্ধ করে গেছেন বিশ্ব শিল্প-সাহিত্যের ভাণ্ডারকেও।

তাই সারা বছরই বিশ্বের কোথাও না কোথাও চলে রবীন্দ্র-সাহিত্য ও রবীন্দ্রজীবন নিয়ে নানা গবেষণা। ২০১১ সালে প্রকাশিত হয় প্রবীর বিকাশ সরকারের এমনই এক গবেষণাগ্রন্থ ‘রবীন্দ্রনাথ এবং জাপান : শতবর্ষের সম্পর্ক’। বইটিতে রবীন্দ্রনাথের জাপান ভ্রমণকে সামনে রেখে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক নিয়ে অনেক অজানা খুটিনাটি বিষয়ই উঠে এসেছে।

মজার ব্যাপার হলো বইটি বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষাতেই প্রকাশিত হয়েছে। প্রবীর বিকাশ সরকারের বাংলায় লিখিত বইটি অনুবাদ করেন সুব্রত কুমার দাশ। বইটির ইংরেজি নাম ‘Rabindrabath Tagore : India-Japan Cooperation Perspectives’।

বইটি পাঠ করলে স্পষ্ট হয়ে ওঠে ১৯১৩ সালে কবির গীতাঞ্জলী কাব্যগ্রন্থের জন্য নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তি কবিকে গোটা বিশ্বে পরিচিত করে তোলে। সে সময়ে জ্ঞানচর্চায় অগ্রসর দেশসমূহের বিদগ্ধ মহলের আগ্রহের ব্যক্তি হয়ে ওঠেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। পশ্চিমা জ্ঞানতাপসরা জানতে ব্যাকুল হয়ে ওঠেন কে এই রবীন্দ্রনাথ?

ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে রবীন্দ্র প্রিয়তা। ধারাবাহিকতায় কবিগুরু বিভিন্ন সময়ে আমন্ত্রিত হন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, গ্রহণ করেন ভক্তদের আতিথেয়তা। রবীন্দ্রনাথের আত্মস্মৃতিতে কিংবা রবীন্দ্র গবেষকদের তথ্যমতে, জাপানে সবচে’ বেশি বার আতিথ্য গ্রহণ করেন কবিগুরু। কবির ব্যক্তি জীবন কিংবা সাহিত্য জীবনে ব্যাপক প্রভাব রয়েছে শিল্প-সাহিত্যে সমৃদ্ধ এ দেশটির। জাপান অবস্থানের বহু স্মৃতি কাতর করেছে কবিকে। কবি নিজেই বলেছেন, ‘জাপানে এসে কাজ হয়েছে... এত অজস্র আদর অভ্যর্থনা আমার জীবনে আর কোথাও পাইনি। ’

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল প্রাপ্তির এক দশক পূর্বেই জাপানের প-িত আচার্য তেনশিন ওকাকুরা আগ্রহী হয়ে উঠেন কবির প্রতি। ১৯০২ সালে তেনশিন কলকাতায় এসে কবিগুরুর সাথে সাক্ষাতের অভিজ্ঞতা, জাপানে ফিরে এসে টোকিও ইম্মেরিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করেন। ফলশ্রুতিতে, সেখানকার পণ্ডিত মহলে বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি ও সাহিত্য নিয়ে, বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বিস্তর আলোচনা শুরু হয়। সেসময় থেকেই সূচনা ঘটে জাপান-বাংলা সাংস্কৃতিক বিনিময়ের।

জাপানে কবিগুরুর শুভ পদার্পনের পূর্বেই অনেক বাঙালীর আগমন ঘটে। বাংলা সংস্কৃতি অনেক ক্ষেত্রে সমৃদ্ধ হয় কবিগুরুর চারবার জাপান সফরকালে। ভারতবর্ষে অপরিচিত জাপানী সংস্কৃতি চালু করেন রবীন্দ্রনাথ। কলকাতায় কিংবা শান্তিনিকেতনে জাপানী দারুশিল্প, চিত্রকলা, জুদোও, ইকেবানা, চাদোও, তেইএন বা বাগানচর্চা ইত্যাদি প্রচলন ঘটান কবিগুরু।  

জাপানের সাথে কবির এ সম্পর্ক ও নিবিড় যোগাযোগ টিকে থাকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত। শতবর্ষ ধরে কবিকে নিয়ে জাপানে নানামুখী কাজ হলেও সেসবের ইতিহাস রয়ে গেছে অনেকটাই অলিখিত। অপ্রকাশিত-অনুদঘাটিত এসব বিষয়ই উঠে এসেছে সাংবাদিক ও গবেষক প্রবীর বিকাশ সরকার ‘রবীন্দ্রনাথ এবং জাপান: শতবর্ষের সম্পর্ক’ শীর্ষক গ্রন্থে।

বইটির ১৫টি নাতিদীর্ঘ  প্রবন্ধে লেখক ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন জাপানে ঘটে যাওয়া কবিগুরুর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অনেক ঘটনা ও সেসবের বিশ্লেষণ।  

এখানে জাপান-বাংলা সম্পর্কের প্রাণপুরুষ তেনশিন, জাপানে রবীন্দ্রনাথ এবং গীতাঞ্জলি, প্রসঙ্গ রবীন্দ্রনাথ এবং জাপান, সানকেইএন এবং রবীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং নাকায়ামা তাইচি, নোগুচি ইয়োনেজিরো এবং রবীন্দ্রনাথ: এশিয়ার দুই পথিকৃৎ, রবীন্দ্রনাথের বন্ধু শিল্পী কাৎসুতা শৌকিন, রবীন্দ্র সান্নিধ্যে মাদাম তোমি কোরা, রবীন্দ্র, জাপান এবং কোরিয়া সম্পর্ক, রবীন্দ্রনাথের বন্ধু জাপানী মনীষী ডঃ কুনিহিকো ও ওকুরা, শিক্ষাবিদ কুনিয়োশি এবং রবীন্দ্রনাথ, তোমোকে কাম্বে: রবীন্দ্রনাথ যার জীবনে ধ্রুবতারা, ওওকুরায়ামা স্মৃতিসদনে রবীন্দ্রনাথ, ইতিহাসে আছে  ইতিহাসে নেই: জাপানে রবীন্দ্রচিহ্নের সন্ধানে (১) ও ইতিহাসে আছে, ইতিহাসে নেই: জাপানে রবীন্দ্রচিহ্নের সন্ধানে(২)  প্রবন্ধে লেখক তুলে ধরেছেন এসব বিষয়।

রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে অনুসন্ধানী গবেষক ও পাঠকদের জন্য সহায়ক হবে এ বই।

প্রবীর বিকাশ সরকারের ‘রবীন্দ্রনাথ এবং জাপান : শতবর্ষের সম্পর্ক’ বইটি প্রকাশ করেছে জাপানের রাজধানী টোকিও’র বিবেকবার্তা পাবলিকেশন্স। মূল্য ১৫০ টাকা।

এর ইংরেজি ‘Rabindrabath Tagore : India-Japan Cooperation Perspectives’ বইটি প্রকাশ করেছে-- ইন্ডিয়া সেন্টার ফাউন্ডেশন, জাপান; মূল্য ১০০০ জাপানি ইয়েন।

বাংলাদেশ সময় ১৬২৩, জানুয়ারি ১৭, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।