ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

সেলিম রেজার একগুচ্ছ কবিতা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১২
সেলিম রেজার একগুচ্ছ কবিতা

হরিণী চোখে দীর্ঘ প্রতীক্ষা

হরিণীর চোখের নিচে নিদারুণ ভাঁজ
গলাকাটা দিনে টুকে পেরেক; তানপুরার তরঙ্গে
ভেতরে ভেসে থাকা দীর্ঘ প্রতীক্ষায়
বালিকা কেঁদে ওঠে রাত্রিবেলা
স্বপ্ন সে-তো রেসের ঘোড়া
বহুদূর থেকে শোনা যায় ইস্টিশানে
ট্রেনের হুইসেল;
ব্যাকুল দ্যোতনা প্রবল তেষ্টায়
পাড়ি দেয় ট্রয়ের প্রাচীর,
আঁধার আজো উষ্ণতা অনুভব করে
উত্তপ্ত কণ্ঠে; জ্বলন্ত আগুনে ছোঁয়ায় ঠোঁট
প্রবল ইচ্ছে নিরিবিলি জ্যোৎস্নায় হাটু গেড়ে বসে
প্রেমিকার উদার চুম্বন
জাগে সম্ভোগের পিপাসা
যাতনা সঙ্গম উপচে পড়ে;
মন জখম নিরসনে লাবণ্যের ঢেউ প্রবাহিত হয়
ভালোবাসা সৃষ্টির মহাসমুদ্রে।


নিঃসঙ্গতার ঘুরপাকে মুঠোফোন কারিশমা

অজগর সময় কেটেছে প্রণয়-সংলাপে
এলোকেশে শাড়ি পরে গভীর টিপ কপালে-
নীলিমার নীল চোখ, নুপুরের রিনিঝিনি
নির্জন দুপুরে আসলে তুমি অপ্সরা !
সতেজ বাতাস তুলে মাতাল শরীর
অপলক চাহনি কন্ঠ অবয়বে অন্তহীন মাদকতা-
কে বুঝে নান্দনিকতার বিশাল ছড়াছড়ি;
এক ভাবুক ছাড়া !
নিঃসঙ্গতার ঘুরপাক কাটে ধ্যানমগ্নতায়
মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতে থাকি মুঠোফোনের কারিশমা ।


ব্রাউজিং সময়ে উপচে পড়ে অজস্র স্বপ্নের নোনাজল
দীর্ঘশ্বাস উতলে ওঠে তুমুল বিশ্বাসে,
আর নিঃশব্দে ডুবে যেতে ইচ্ছে করে
অপ্সরার তনু-মন-যৌবনে ।


খোয়াবী জোৎস্না - ৬

খোয়াবী জোৎস্নায় স্বপ্নবলাকা ওড়ে
বেদনার শিলালিপি শুয়ে থাকে লাশের মতো;
নৈঃশব্দের স্থাপনায় হামাগুড়ি দেয় অতীত
বুনো অন্ধকারে লুকানো পাপের প্রাচীর
অচেনা দ্বন্দ্ব গিলে সময়ের স্রোত
বিপদসংকুল সীমানা বোবামাঝির যন্ত্রণায়
স্রোতস্বিনী হরপ্পার জলসন্ধানে টিয়ারঙ যুবতী
ভাঙনের তীব্রতায় বিকট শব্দ-
দিগ্বিদিক মৌন মিছিল ব্যর্থ ইশতেহার
দিগন্তে নীল হয়ে যাওয়া স্বপ্নবলাকা-
অশনি শ্যামলিমায় বাসনার ছদ্মবেশি চোখ
পিপাসার জলে তুলে তুমুল বিস্ফোরণ ।


ইদানিং-২৫

নগ্নতা দূর নক্ষত্র পাড়ার
প্রাচীর ভাঙে রাতের নিষেধাজ্ঞায়
মানুষে মানুষে ঘর্ষণে
মানুষের ভেতর মানুষ;
নগ্নরূপে আদিমতা যুগের পাণ্ডুলিপি
ইদানিং জাদুঘরে চেতনার দীপ জ্বালে
উলঙ্গ মানব পাথর,
কালের আয়নায় লাশের খোয়াব
প্রাচীন সভ্যতায় মানুষ বধ করে মানুষ
আর লাশ পোড়া আগুন মাখে শ্মশানসাধু ।


স্বপ্নমাখা জোনাক রাতের উল্লাস

কতশত বার হত্যা করতে চেয়েছি বেপরোয়া বয়সটাকে
নিজেকে শুধরে নেবার চরম সিদ্ধান্তে নিভুনিভু পিদিম
ভাবনার চুনকামে অন্ধকার অতল থেতলানো মগজ
মুখোশের ভেতর মুখোশ; রঙ বদলানো লুকোচুরি খেলায়
জ্যামিতিক সময় হামাগুড়ি দিয়ে আড়াল হয় মাধবকুণ্ডে;
দশহাত ঘোমটা টানে অপ্সরী মেঘ
স্বপ্নমাখা জোনাক রাতের উল্লাসে আগন্তুক
বিশ্বাসে বিশ্বাস হারিয়ে হেঁটে চলে তামাবিল
মিথ্যের গোলক ধাঁধাঁয় অক্টোপাসের মত
চুষে নেয় রক্ত কণিকায় হিমোগ্লোবিন
চোখের পাতায় বিন্দু বিন্দু জল
ভীষণ যন্ত্রণায় ঠিকানাবিহীন দেউরিঘর;
কোমরে স্বপ্নদোষের তাবিজ, শূন্য হাতে মৃত নদীর পাড়-
একটি পালক নিয়ে সুতোকাটা রাতের পরী
ওড়ে শুধু ওড়ে রূপবতী হয়ে
প্রাণোৎসর্গ করে যায় যৌথশ্রমে গড়া
স্বপ্নিল বসত ভিটায়।


রিটার্ন টিকেট হাতে ফিনিক্স পাখি

জোনাকীদের বাজারে অনেকেই বিকিয়ে দেয় নিজেকে
রাতের অন্ধকারে নিষ্কম্প প্রদীপ হাতে তারা;
নিদ্রামগ্ন ফুটপাতে শুয়ে কতবার গর্ভবতী হয়েছে জরায়ু
মাতাল ঢেউয়ের তালে সময়ের বুকে পুরুষালী হাত
দেহের অলিগলি ছাপিয়ে গ্রীবা ঘেঁষে সাঁতার
একাকী জলের গভীরে সুনামী ঢেউ;
তৃষ্ণাচোখে ভালোবাসার চাদর মুড়ি দিয়ে উঁকি দেয়
পরকীয়া মেঘ দূর থেকে দূরে,
আড়াল কখনো আড়ালে, মেঘের পালকে খামের পাপড়ি
মৃত্যুর রথযাত্রায় জেগে থাকে ফিনিক্স পাখি,
ঘুম পাড়ানো গল্পে ঘুমিয়ে থাকা খোকা জাগেনি
রিটার্ন টিকেট হাতে দূর পরবাসী এখনো ফেরেনি।

বাংলাদেশ সময় ১৬৫০, জানুয়ারি ১৬, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।