ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

দুঃসময়ে কেউ পাশে নেই খুলনার সাংস্কৃতিককর্মীদের!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২২ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২০
দুঃসময়ে কেউ পাশে নেই খুলনার সাংস্কৃতিককর্মীদের! খুলনার সাংস্কৃতিক অঙ্গন

খুলনা: করোনাকালের প্রায় তিন মাস ধরে স্থবির হয়ে আছে খুলনার সাংস্কৃতিক অঙ্গন। মঞ্চগুলোতে আলো জ্বলছে না। কোনো আয়োজন নেই অডিটোরিয়াম, হোটেল কিংবা ক্লাব কমিউনিটি হলের বলরুমে জমকালো কোনো পারফরমেন্সের। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন শত শত সাংস্কৃতিক সংগঠক, প্রশিক্ষক ও কর্মী।

গৃহবন্দি সময়ে প্রতিদিন ফেসবুক লাইভ আড্ডার আয়োজন করে সাংস্কৃতিককর্মীরা কবিতা আবৃত্তি, অভিনয়, গান, পাপেটসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করে মানুষকে বিনোদন দিচ্ছন। অথচ তাদের অনেকেরই ঘরেই জ্বলছে না ঠিক মতো চুলা।

অসচ্ছল এসব শিল্পীদের সঙ্কটময় মুহূর্তে কেউ সহায়তা করছেন না বলে জানিয়েছেন সাংস্কৃতিক কর্মীরা।

খুলনার সাংস্কৃতিক সংগঠনের তালিকা:

খুলনা জেলা  শিল্পকলা একাডেমি, আব্বাসউদ্দীন  একাডেমি,  আধুনিক একাডেমি, নান্দিক একাডেমি, ইত্যাদি একাডেমি, আবিদ স্মৃতি পরিষদ, কথাকাল একাডেমি, শিশু স্বর্গ খেলাঘর, শিশু একাডেমি, একতারা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, আওয়ামী শিল্পী গোষ্ঠী, সুজলা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, সবুজ পাতার দেশ, বৈশাখী, রবীন্দ্র নজরুল সম্মিলন পরিষদ, সুর ঝংকার, নাট্য নিকেতন, খুলনা সাংস্কৃতিক উন্নয়ন পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, সাহিত্য সংসদ সংগীত একাডেমি, বিয়ন মনি থিয়েটার, এবং আবৃত্তি, নৃত্য বিহার, গানের তরী, ক্ল্যাসিক সংগীত একাডেমি, অনিকেত, সুরছন্দ, ত্রিকাল সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, সারগাম সংগীত একাডেমি, খুলনা আর্টিস্ট ক্লাব, উদীচী দৌলতপুর, উদীচী জেলা, বাংলার বাউল, কলাকেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা, ওস্তাদ রাশেদ তালুকদার একাডেমি, সংকেত,শাপলা কুড়ি খেলাঘর আসর, মা, দ্রাবিড়, জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী সংস্থা, নজরুল সঙ্গীত পরিষদ, সঙ্গীত নিকেতন, রিমঝিম একাডেমি, কত্থক নৃত্যাঙ্গন, বিদ্রোহী নজরুল একাডেমি, আদি কত্থক, নৃত্যাঙ্গন, দিপালয় ইয়ুথ কয়ার।

এসব সাংস্কৃতিক সংগঠনে রয়েছে সঙ্গীত শিল্পী, মডেল, অভিনয় শিল্পী, যাত্রা শিল্পী, নৃত্য শিল্পী, মঞ্চ শিল্পী। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সব স্তরের কর্মীরা এখন পুরোপুরি কর্মহীন অবস্থায় গৃহবন্দি রয়েছে।

কামরুল কাজল, নাট্য পরিচালক, নগর নাট্যদল

করোনা একটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারি। যে মহামারি একমাত্র সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী বাদে সব পেশাজীবীদের উপরেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আমরা যারা নাট্যকর্মী আমাদের অবস্থা আরো বেশি খারাপের দিকে। একেতো বেতারে বাজেট না থাকায় দীর্ঘদিন কোনো নাটকের কার্যক্রম নেই অন্যদিকে করোনার কারণে সংগঠনের সাংগঠনিক কার্যক্রমও বন্ধ। এমতাবস্থায় পরিলক্ষিত হওয়ায় সরকার বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের ব্যাপারে বিভিন্ন প্রণোদনা বা সুযোগ-সুবিধা দিলেও আমরা যারা নাটকের শিল্পী তাদের ব্যাপারে সরকার বরাবরই উদাসীন থেকেছে। করোনার শুরুতে ডিসি মহোদয়ের প্রচেষ্টায় শিল্পকলার মাধ্যমে শিল্পীদের একটা তালিকা করে একবারের জন্য ১০ কেজি চাল, কিছু আলু, ডাল ও লবণ দেওয়া হয়। যেটা প্রতি ১৫ দিন পর পর চালু থাকলে শিল্পীদের না খেয়ে দিনাতিপাত করতে হতো না। এই কঠিন বিপর্যয়ের সময় যদি সরকার আমাদের পাশে এসে না দাঁড়ায় তাহলে অনেকেই শিল্পকর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে এবং হুমকির মুখে পড়বে শিল্পকর্ম ও চিত্তবিনোদন।

সুমনা সিরাজ সুমী, উপস্থাপক, বাংলাদেশ বেতার, খুলনা

একজন মঞ্চের উপস্থাপক হিসেবে আমি বলব নিদারুণ সময় পার করছি আমরা। আমাদের কর্মই হচ্ছে মানুষের সমাহারে। সেখানে যখন কোন জমায়েত নেই, নেই কোন কনফারেন্স বা জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান তাই আমাদের মত শিল্পীদের জন্য অর্থনৈতিক দৈন্যতা হয়েছে নিত্য সঙ্গী। কিন্তু আমাদের এই মফস্বল শহরের শিল্পীদের নেই কোন আয়ের উৎস আবার মধ্যবিত্ত আমরা নিজেদের দাঁড় করাতে পারিনা অসহায়ের কাতারে বাঁধ সাধে শিল্পসত্তা। কোন সহযোগিতা আমদের জন্যতো আসেইনা আর আমরা তা বলতেও পারিনা।

শেখ লুৎফুন্নাহার পলাশী, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদ, সাধারণ সম্পাদক

৭৫ পরবর্তী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আদর্শে গড়া আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা শেখ সাঈদ আলী বঙ্গবন্ধুর নামের উপরে প্রথম সংগঠন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদ গঠন করেন। দলের দুর্দিনে জীবনের বাজি রেখে এই সংগঠনের ব্যানারে প্রতিবাদী কবিতা গান, নাটকের মাধ্যমে জনতার কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু তার আদর্শ ও বাংলাদেশকে। সেই সব শিল্পী অনেকেই আছেন অনেকেই নাই,তাদের ছেলেমেয়েরা এখনো এই সংগঠনের ব্যানারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটভুক্ত হয়েও দেশে জাতীয় প্রোগামগুলোতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু করোনার এই দুর্যোগকালে এই সংগঠনের শিল্পীরা কোনো সহযোগীরা পায়নি।

গুরুপদ গুপ্ত, খুলনার আঞ্চলিক গানের সম্রাট

একটা কঠিন সময় পার করছি আমরা সবাই। আগে প্রতিদিনই কোনো না কোনো প্রোগ্রামে গানের দাওয়াত থাকতো। এখন অনুষ্ঠান নেই। ঘরবন্দি অবস্থায় দিনগুলো কাটিয়ে দিতে হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষা করছি। অনেক শিল্পীকলা কৌশলীরা চরম দুঃসময় পার করছেন এই করোনাকালে।

মো. এনামুল হক বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক, আব্বাসউদ্দীন একাডেমি

কোভিড-১৯ এর কারণে সাংস্কৃতিককর্মী, সংগঠক, শিক্ষকসহ অধিকাংশই আর্থিকভাবে অসচ্ছল হয়ে পড়েছেন। কারও কারও জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এ পরিস্থিতিতে হাতে কাজ থাকুক আর না থাকুক, পেটে খাবার থাকুক বা না থাকুক, মাস শেষে তাদের একটি মোটা অংকের টাকা বাড়ির মালিকদের হাতে তুলে দিতে হচ্ছে। এ সংকটে সরকারের কাছ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা চান তারা।

বিকাশ রায়, প্রভাষক, খুলনা সরকারি মহিলা কলেজ

সুখের মুহুর্তে আমরা হাত তালি দিয়ে কিছু লোকের প্রশংসা করি, যারা তাদের গানের সুর, কথা কিংবা সুনিপুণ বাদ্য দিয়ে আমাদের অনুভূতিতে আনন্দ অথবা বেদনার স্মৃতিকে জাগিয়ে চোখে আনন্দাশ্রু এনে দেয়। দুঃখ অথবা সুখ বিলাসের সেই মানুষ গুলো অর্থাৎ সেই তারকা তকমা বিহীন শিল্পীরা আজ পড়েছে বিপাকে। করোনা সংক্রমণের এই সময়ে নেই কোনো অনুষ্ঠান ফলে সংসার তাদের কাছে আজ বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাত তালিতে তুষ্টু মানুষ গুলোর উপার্জনহীন দিনাতিপাত চেয়ে দেখাও কষ্টের। জীবন মঞ্চে আজ তাদের ভূমিকা নেই, দর্শকও নীরব। আমাদের আনন্দের সাথী সেই মানুষগুলোর পাশে থাকার জন্য সমাজের সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

সুজিত কুমার সাহা, কালচারাল অফিসার, খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি

করোনার প্রথম দিকে খুলনা থেকে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ে খুলনার ৪০টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের ৩৮৬ জনের জন্য সহায়তার একটি তালিকা পাঠানো হয়। পরে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় প্রতি জেলা থেকে ৫০ জনের তালিকা পাঠানোর নির্দেশনা আসে। সে অনুযায়ী খুলনা থেকে দুর্যোগকালীন আর্থিক অনটনে থাকা ৫০ জনের নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৮ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২০
এমআরএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।