ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

উমবের্তো একোর সাক্ষাৎকার

ভাষান্তর : ফেরদৌস মাহমুদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০১১
উমবের্তো একোর সাক্ষাৎকার

 ইতালীয় মধ্যযুগবিশারদ, সেমিওটিশিয়ান, দার্শনিক, সাহিত্য সমালোচক ঔপন্যাসিক উমবের্তো একো। জন্ম ১৯৩২ সালের জানুয়ারি ইতালির পায়েডমন্টে।

প্রথম বই ‘ইল প্রবলেমা এস্টেটেসিও ইন সান টোম্মাসো’ প্রকাশিত হয় ১৯৫৬ সালে।  

১৯৮০ সালে প্রকাশিত হয় তার বিশ্বব্যাপী সাড়াজাগানো উপন্যাস ‘দ্য নেম অব দ্য রোজ’। এটি চতুর্দশ শতাব্দীর এক আখড়াকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ঐতিহ্যাসিক রহস্যোপন্যাস। বইটি বিপুল জনপ্রিয়তা বাণিজ্যিক সাফল্য লাভ করে, অনূদিত হয় বহু ভাষায়। দ্য নেম অব দ্য রোজ পরে চলচ্চিত্রায়িত হয়।

১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হয় একোর উপন্যাস ফকুস পেন্ডুলাম। বইটিও খুব ভালো বিক্রি হয়।

তার উল্লেখযোগ্য অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে — দ্য আইল্যান্ড অব দ্য ডে বিফোর, বউদোলিনো, দ্য মিস্টিরিয়াস ফ্লেম অব কুইন লোয়ানা।

অক্টোবর ২০১১-এ প্রকাশিত হয়েছে তার শেষ উপন্যাস-- ‘দ্য প্রাগ সিমেট্রি’।  ‘দ্য প্রাগ সিমেট্রি’ প্রকাশের পর সাহিত্য-ওয়েব গুডরিডসের পক্ষ থেকে উমবের্তো একোর এক সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। সাক্ষাৎকারটির বাংলা অনুবাদ তুলে ধরা হলো।

 

the-prague-cemeteryগুডরিডস : আপনার ‘দ্য প্রাগ সিমেট্রি’র মূল বিষয় হচ্ছে ঘৃণা বা তীব্র বিতৃষ্ণা। উপন্যাসের বিষয় হিসেবে ঘৃণাকে বেছে নেওয়ার কারণ কি?

উমবের্তো একো : আমি বলতে চাই যে, অসংখ্য উপন্যাসই রয়েছ যা ভালোবাসাকে উপজীব্য করেই লেখা। এখন সময় বিদ্বেষ বা ঘৃণাকে তুলে ধরার, যে অনুভূতি ভালোবাসার অনুভূতি থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে (এটা না হলে যুদ্ধ, অপরাধ বর্ণবাদী আচরণের সৃষ্টি হত না)।

 

ভালোবাসা হলো এক নির্বাচিত সম্পর্ক (আমি তোমাকে ভালোবাসি এবং তুমি আমাকে ভালোবাসো। এই অনুভূতির কাছে পৃথিবীর অন্য সব অনুভূতিই যেন বাতিল), ঘৃণার অনুভূতি সম্মিলিত, সামাজিক। এক্ষেত্রে এক জনগোষ্ঠীর মানুষ অপর জনগোষ্ঠীকে ঘৃণা করতে পারে। এই ঘৃণাকে ধারণ করার জন্য স্বৈরশাসকেরা একদল অনুসারী রাখে (কোনাভাবেই তারা তা ভালোবাসার জন্য করে না)। আমার শৈশব কেটেছে এক ফ্যাসিস্ট স্বৈরশাসকের শাসনে, আমাদের তখন কেবলই শিক্ষা দেওয়া হতো অন্য দেশের মানুষদের ঘৃণা করার, যাদের মধ্যে রয়েছে ফ্রেঞ্চ, ইংরেজ ও আমেরিকানরা। আমাদের বলা হতো কেবল মুসোলিনিকেই ভালোবাসো। মজার ব্যাপার হলো এ জাতীয় শিক্ষা আমার মধ্যে কোন প্রভাব ফেলত না। আর এ কারণেই আমি লিখেছি ‘দ্য প্রাগ সিমেট্রি’।

 

গুডরিডস : ইন্টারনেটে তথ্য দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আপনি কি বলবেন তথ্যগুলোর মধ্যে কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা--  এটা নির্ধারণ উনবিংশ  শতকের তুলনায় সহজ হয়েছে নাকি কঠিন? আজকের দিনে কি ‘The Protocols of the Elders of Zionজাতীয় টেক্সট কোনো প্রভাববিস্তার করতে পারে?

উমবের্তো একো : দুর্ভাগ্যজনক এটা আগের চেয়ে অনেক বেশি কাজ করছে। এটা এখন যথেষ্টই ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে এবং দেখুন ইন্টারনেটে কতগুলি বর্ণবাদী সাইট রয়েছে। এমনকি ইন্টারনেটে এমন কোনো সিস্টেম নেই যা জানিয়ে দেবে কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা। আসলে তরুণপ্রজন্ম আমার উপন্যাস পড়লেই জানবে জালিয়াতি কী। আরববিশ্বে এই জাতীয় ব্যপার অনেক বেশি ছড়িয়েছে। তবে এমনটা আপনি অনেক পশ্চিমা বইয়ের দোকানেও দেখবেন। এর মানে হলো সবসময়ই এদের কোনো না কোনো পাঠকসমাজ রয়েছে।

 

গুডরিডস : আপনার বইয়ের কেন্দ্রীয় চরিত্র ক্যাপটেন সিমোন সিমোনিনি একজন মানববিদ্বেষী, ভিন্নমতের মানুষ। আপনার গল্পের মধ্যে এ চরিত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে কী ঝুঁকি নিতে হয়েছিল?

উমবের্তো একো :  সিমোনিনির বিপদ্জনক ও অপছন্দনীয় আদর্শই তাকে উপন্যাসে সামাজিকভাবে বেমানান ও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। এ চরিত্রের নির্মাণ কি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল? শুরুতে এ ব্যাপারে আমি খুব ভীত ছিলাম। তখন ঐতিহাসিক বিভিন্ন তথ্যাদি আমার মধ্যে আস্থা তৈরি করে এবং এ আস্থাই বিভিন্ন দেশের অসংখ্য পাঠকের মধ্যে আমার চিন্তাকে তুলে ধরতে সাহায্য করে। এছাড়া, আমি দেখেছি বহু ঐতিহাসিক ফিকশানে অসংখ্য নেতিবাচক চরিত্র রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়--- Richard the Third, Macbeth, lago ।

গুডরিডস : দিস ইজ নট দ্য এন্ড অব দ্য বুক’ বইতে আপনি এবং জেন-ক্লদ ক্যারিরি ( Jean-Claude Carrière) লিখেছেন, ডিজিটাল বইগুলো--- মাল্টিমিডিয়া, পাঠকদের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া ও অন্যান্য উদ্ভাবনার মাধ্যমে বইয়ের নতুন সংজ্ঞা  সম্প্রসারণ করতে যাচ্ছে। এ অবস্থায় প্রচলিত বইগুলোর কী ধরনের উন্নয়ন ঘটতে পারে?

উমবের্তো একো : আমরা বলছি যে বই (কাগুজে বই) এখনো তথ্যকে বহন করার উৎকৃষ্ট বাহক। আমি একজন কম্পিউটার ও আইপ্যাড ব্যবহারকারী। আমি মনে করি এগুলির ব্যবহার অনেকক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু তা কখনোই বইয়ের বিকল্প হতে পারে না। একইভাবে ফটোগ্রাফি কখনোই পেইন্টিংসকে সেকেলে করতে পারে না।

গুডরিডস : গুডরিডসের সদস্য সারবুলেন্ট সেনগান জিজ্ঞেস করেছে,  ‘আমি জানতে চাই মিস্টার একো  কি মনে করেন যে তিনি ইতিহাস থেকে সাহিত্য নির্মাণ করছেন অথবা সাহিত্যের মধ্য দিয়ে তুলে ধরছেন ইতিহাসকে? ইতিহাস কি একটি জীবন্ত বিজ্ঞান?

 উমবের্তো একো : আমার কোনো কোনো উপন্যাসে (যেমন--বাউডোলিনো) আমি ইতিহাসকে সাহিত্যের উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করেছি। কিন্তু ‘দ্য প্রাগ সিমেট্রি’তে আমি সাহিত্যকে ব্যবহার করেছি একটি ঐতিহাসিক সত্যকে, ঐতিহাসিক প্রতারণাকে তুলে ধরার জন্য।

গুডরিডস : আপনার লেখালেখির একটি দিনের কথা বলুন। লেখালেখির ক্ষেত্রে আপনার কি অদ্ভুত কোনো অভ্যাস আছে?

 

উমবের্তো একো : এমনও হতে পারে যে, আমি ট্রেনে বসে লিখতে পারি অথবা কিছু একটা করার সময়ও কল্পনা করতে পারি আমি কি লিখব। আমার স্বাভাবিক অভ্যাস হলো আমি শহরে থাকার সময় আগে থেকে লেখার থিম ও উপকরণগুলো সংগ্রহ করি। এরপর শীত বা গ্রীষ্মে দেশের কোনো এক কোনে গিয়ে লিখতে শুরু করি।

গুডরিডস :  কোন কোন লেখক, বই বা আদর্শগুলো আপনাকে প্রভাবিত করেছে?

উমবের্তো একো : যদি বলি আমি কেবলমাত্র একজন লেখকের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছি, তাহলে আমি একটা আহাম্মক। একজন লেখক এক জীবনে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন লেখকের দ্বারা প্রভাবিত হয়। এটা একধরণের বুদ্ধিবৃত্তিক বৃদ্ধি। এছাড়া আমাকে যদি আপনি আলাদাভাবে দার্শনিক অথবা ঔপন্যাসিক অথবা কবিদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন তাহলে আমার উত্তর হবে আলাদা আলাদা। তবে আমি এখন এমনিতে দুটি নাম বলতে পারি জয়েস এবং বোর্হেস।

 লেখক হিসেবে আপনার পরবর্তী পরিকল্পনা কী?

উমবের্তো একো : দুই মাস পরই আমার বয়স আশি হবে। আমাকে নতুন নতুন বিষয় নিয়ে ভাবতে দিন এবং এই প্রশ্নটাই আমাকে আবার আমার নব্বইতম জন্মদিনে করতে পারেন।

বাংলাদেশ সময় ১৫৩০, নভেম্বর ০৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।