ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

এক অনন্ত ঘুমের দিকে | তানিয়া চক্রবর্তী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৮
এক অনন্ত ঘুমের দিকে | তানিয়া চক্রবর্তী তানিয়া চক্রবর্তী

জীবনের যে মৃত্যুকে আমরা বরণ করি সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু স্বাভাবিকতাকে চাবুক দিয়ে টেনে নিজের ভেতরে বসিয়ে দিলে সে জীবন নিয়ন্ত্রণ করতে শিখে যায়। সেটা সবসময় খুব ইতিবাচক তা নয় কিন্তু এটা নেতিবাচক হলেও একটা ক্ষমতা। বোধকরি তাই অসমসাহসী লেখকদের বীরের মতো অনেকে মৃত্যুকে টেনেছে।

জাপান দ্য বিউটিফুল মাইসেলফ’র নোবেলবিজয়ী লেখক (জাপানি) ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা, যিনি আত্মহত্যা ও আত্মহননের ভাবনা নিয়ে তীব্রভাবে চিন্তিত ছিলেন। বলতেন, কেউ কী আছে যে একবারও আত্মহননের কথা ভাবেনি! তিনি নিজেই কার্বন মনোক্সাইড বিষে আত্মহত্যা করেন।

আইরিশ চিত্রশিল্পী রয়েলেএকাডেমির ছাত্র থমাস ফস্টার। যার অপূর্ব সৃষ্টি মিস ট্রি। তিনিও নিজে হাতেই নিজেকে ১৮২৬ সালে হত্যা করেন।

যদিও যে মৃত্যুর কথা এখন বলব তা নিয়ে বিতর্ক আছে যে, এটা তিনি আদৌ করেছেন নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে! তিনি হলেন ভিনসেন্ট ভ্যান গগ, যার ছবি সম্পর্কে নতুন করে বলা বাতুলতা মাত্র! বন্দুকের গুলিতেই তার মৃত্যু হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে আধুনিক চিত্রশিল্পী আলফ্রেড হেনরী মুর যার ছবি বর্তমানে এক বিস্ময়, তিনিও বেছেছিলেন আত্মহত্যার পথ।

হার্ট ক্রেন আমেরিকার কবিদের মধ্যে অন্যতম। তার দ্য ব্রিজের কথা অজানা নয় পাঠকদের। তবে নিজের জীবন নিয়ে জর্জরিত ও অস্থির ছিলেন ক্রেন। তার শেষ সময়ের সম্পর্ক থেকে উৎপত্তি হয় দ্য ব্রোকেন টাওয়ার এর। বিভিন্ন অভিযোগ, যৌন সম্পর্কে দ্বিরূপতা নিয়ে বিদ্ধ হওয়ার ফলে জর্জরিত ক্রেন ঝাঁপ দিয়েছিলেন মেক্সিকোর সমুদ্রে, তার দেহ আর পাওয়া যায়নি। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, তার শেষ বাক্য ছিলো, “গুডবাই, এভরিবডি”।

সুইডিশ লেখক হ্যারি মার্টিনসন। যিনি ১৯৪৯ সালে সুইডিশ পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হন। তিনি যুগ্মভাবে অন্য লেখকের সঙ্গে নোবেল পেয়েছেন। কিন্তু এর প্রাপ্তিটা ভরপুর বিতর্কিত ছিলো। অনুভূতিপ্রবণ হ্যারি বিতর্ক সহ্য করতে পারতেন না ফলে নিজেই ছুরিকাঘাতে নিজের দেহ ছিন্ন করে প্রাণ নেন।

মিরিট কোহেন যার জন্ম রাশিয়ায় হলেও তিনি ছিলেন ইজরায়েলের শিল্পী। জীবনের অপূর্ব শিল্প মুহূর্ত বাদ দিলে কিছু মুহূর্তে এলএসডি’র প্রভাবে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে এক বড় বাড়ির ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এক অনন্ত ঘুমের দিকে

জীবন এক নিছক খেলা নয়, এটা একটা শর্তসাপেক্ষ ধৈর্র‌্যের খেলা। মরণ রে তুঁহু মম শ্যাম সমান. এটা জীবনে লাঘু করা বোধ করি খুব সহজ নয় সে ইচ্ছে বা অনিচ্ছা যার প্রাধান্যই বেশী থাক না কেন!

আমাদের ঘরটাকে যেমন আমরা জ্বালিয়ে প্রতিভাপূর্ণ করি। দেহের ভেতরে প্রাণও তাই। তাই যেখানে প্রাণ নেই সেখান থেকেই আমাদের ভয়, কষ্ট শুরু হয়। একটা জ্যান্ত দেহেও যদি আমরা স্পন্দনের ছোঁয়া না পাই বলি, মুখটা মরা মরা দাগছে। কবিতা, সিনেমা, জীবন, প্রেম সবেতেই আমরা প্রলুব্ধ গতি চাই আর প্রাণ ভেসে ওঠে। প্রাণ পেলেই আমরা আলোকে ধরে রাখতি পারি। এই বুদ্ধিজীবী লেখকরাও মৃত্যু বেছেছেন কিন্তু যতোক্ষণ ছিলেন ততোদিন সৃষ্টি এগিয়ে এসেছে। আসুন প্রাণের দিকে মুখ করে বসার চেষ্টা করি যতোটা পারি, একটা যন্ত্রণা বা যুদ্ধেরও প্রাণ থাকে; যার প্রাণ থাকে সে তো এমনিতেই জিতে গেলো তার আর হার কী! তবু এটাই সিদ্ধান্ত বলব না কারণ. কোন অভাববোধ থেকে এই ইচ্ছা জাগে, যার জাগেনি সে বুঝবে না। সে অবশ্য ভাগ্যবান কারণ, সে জীবন আবার খেলার সুযোগ পেলো। তবু আমরা আর একটু চেষ্টা করি জীবনের দিক থেকে মৃত্যুকে দেখার...

ক্রমশ...

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৮
এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।