ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

অনন্য কথাশিল্পী রিজিয়া রহমান

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৭
অনন্য কথাশিল্পী রিজিয়া রহমান রিজিয়া রহমান। ছবি: সংগৃহীত

খুব কাছ থেকে পর্বতকে বড় ও বিশাল দেখায় না। মনে হয় দেয়াল মাত্র। তেমনি আশেপাশের বড় মাপের মানুষদের বিশালতাও আমরা টের পাই না। শিল্প-সাহিত্যের ক্ষেত্রে আমরা অজ্ঞতা বা ক্ষুদ্রতার জন্য নিজস্ব মেধাকে এড়িয়ে যাই। 

ঔপন্যাসিক রিজিয়া রহমান তেমনি বড় মাপের একজন, বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) ছিল তার জন্মদিন।  

প্রসঙ্গত বলা যায়, আমরা আমাদের কাছের মেধাবীদের বিশালত্ব মূল্যায়ন করতে পারি না।

দূরের কেউ হলে, সেটা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার বন্যা শুরু হয় সাহিত্যের পাতায়। অথচ বিশ্ব বরেণ্য লেখকদের মতোই তার লেখার মান, তা আমরা মূল্যায়নের আলোয় আনতে পারিনি।  

১৯৩৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার  ভবানীপুরে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রিজিয়া রহমান। তার পৈত্রিক বাড়ি ছিলো কলকাতার কাশিপুর থানার নওবাদ গ্রামে। তার পারিবারিক নাম জোনাকী।  

বাবা আবুল খায়ের মোহম্মদ সিদ্দিক ছিলেন একজন চিকিৎসক ও মা মরিয়াম বেগম ছিলেন গৃহিণী। সংস্কৃতিমনা পরিবারে বেড়ে ওঠেছেন রিজিয়া। তার দাদা মুন্সী আব্দুল খালেকের পড়াশোনা করতেন।  

তার ঘরে সেলফ ভর্তি ছিল ইংরেজি আর ফার্সি বই। তার বাবা ছিলেন সঙ্গীত অনুরাগী। তিনি এসরাজ ও বাঁশি বাজাতেন এবং উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শুনতেন।
 
রিজিয়া রহমানের বাবার চাকরির কারণে তাদের ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় থাকতে হয়েছে। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর তারা বাংলাদেশে চলে আসেন।  

দেশে তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় ফরিদপুরে। সেই সময় শখের বশে কবিতা লিখতেন। তখনই তার লেখালেখির সূচনা হয়।  পরে তিনি কষ্ট করে শিক্ষাজীবন এগিয়ে নেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

বেলুচিস্তানের পটভূমিতে তার রচিত উপন্যাস ‘শিলায় শিলায় আগুন’ কিংবা নিষিদ্ধ পল্লীর দেহপসারিণীদের মানবেতর দৈনন্দিন ঘটনাবলী নিয়ে লেখা ‘রক্তের অক্ষর’ খুবই শক্তিশালী রচনা।  

রিজিয়া রহমান প্রত্বতাত্ত্বিকদের মতো ইতিহাস আর ঐতিহ্য খুঁড়ে খুঁড়ে তুলে এনেছেন তার প্রায় প্রতিটি উপন্যাসে। যেমন, ‘বং থেকে বাংলা’ উপন্যাসটির ব্যাপ্তি বাঙালির জাতি গঠন ও ভাষার বিবর্তণের ইতিহাস।  

প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে বং গোত্র থেকে শুরু হয়ে একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিজয় পর্যন্ত এই উপন্যাসের বিস্তৃতি।  

আবার নীল বিদ্রোহের পরবর্তী সময়ে খুলনা অঞ্চলের এক বিপ্লবী রহিমউল্লাহর ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার বীরত্বগাঁথা নিয়ে লিখেছেন ‘অলিখিত উপাখ্যান’।  

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির সাঁওতাল শ্রমিকদের জীবনচিত্র পর্যবেক্ষণ করে তিনি রচনা করেছেন ‘একাল চিরকাল’।  

‘প্রাচীন নগরীতে যাত্রা’ উপন্যাসে লিখেছেন ঢাকার অতীত ও বর্তমান জীবনযাপন।

চট্টগ্রামে হার্মাদ পর্তুগিজ জলদস্যুদের অত্যাচার এবং পর্তুগিজ ব্যবসায়ীদের দখলদারিত্বের চিত্র তুলে ধরেছেন ‘উত্তর পুরুষ’ উপন্যাসে; যেখানে চিত্রিত হয়েছে আরাকান-রাজ-সন্দ-সুধর্মার অত্যাচার, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের বীরত্ব, পর্তুগিজদের ব্যবসায়ীদের গোয়া, হুগলি, চট্টগ্রাম দখলের ইতিহাস।

গভীর মননশীলতায় রিজিয়া রহমান নির্মাণ করেছেন তার লেখালেখির জগৎ। এতো বড় মাপের লেখককে আমরা কী যথার্থ মূল্যায়ন করতে পেরেছি? 

২৮ ডিসেম্বর তার জন্মদিনে উল্লেখযোগ্য লেখাই কোনো কাগজে ছাপা হয়নি। যদিও এখন তিনি নিভৃতচারী, তথাপি পাঠক চিত্তে জাগ্রত রয়েছেন এবং থাকবেন।

অনন্য কথাশিল্পী রিজিয়া রহমানের জন্মদিনে শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা।

বাংলাদেশ সময়:১৪৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৭
এমপি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।