ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

গল্প বলায় জাদু ছড়ানো কাজল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৬
গল্প বলায় জাদু ছড়ানো কাজল

বাংলা উপন্যাসের ধারায় হুমায়ূন আহমেদ এক অনবদ্য নাম। বাবা-মায়ের প্রিয় ‘কাজল’ আধুনিক বাংলা সাহিত্যে গল্প বর্ণনায় যে সেনাপতি হয়ে দাঁপিয়ে বেড়াবেন, তা কে জানতো!

বাংলা উপন্যাসের ধারায় হুমায়ূন আহমেদ এক অনবদ্য নাম। বাবা-মায়ের প্রিয় ‘কাজল’ আধুনিক বাংলা সাহিত্যে গল্প বর্ণনায় যে সেনাপতি হয়ে দাঁপিয়ে বেড়াবেন, তা কে জানতো! যে উচ্চতা তিনি ছুঁয়েছেন, তা অনন্যই।

নতুন আঙ্গিকে সহজাত হাস্যরসের ম্যে দিয়ে গল্প বলার ঢংই তাকে করেছে অমর। আধুনিক পাঠককে বই ধরতে শেখানো এই সাহিত্যিক তার পূর্বসূরিদের দ্বারা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে প্রভাবিত ছিলেন না বলেই হয়তো সেই বিকিরণ সম্ভব হয়েছিল।

হুমায়ূন আহমেদ এমনই সাহিত্য সৃষ্টির জাদুকর, যার জুড়ি বাংলা সাহিত্যে মেলা ভার। অন্যসব ঔপন্যাসিকদের চেয়ে এমন আলাদাভাবে নিজস্ব বলয় বিনির্মাণ সত্যিই অসাধারণ।

হুমায়ূন নিজেই বলতেন, মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত লিখে যেতে চাই। পাঠকের মনের খোরাকের জন্য লিখে যেতে চাই। লেখালেখিই আমার বিশ্রাম। লেখালেখি বন্ধ হলে বেঁচে থাকা অর্থহীন হয়ে পড়বে!

মৃত্যুর কয়েকদিন আগ পর্যন্ত তিনি কলম চালিয়ে গেছেন। নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালের বিছানায় শুয়েও দাঁড় করিয়েছেন ‘দেয়াল’ উপন্যাস।

অসামান্য তার গল্প বলার ভঙ্গি। সাবলীল চরিত্র নির্মাণের দক্ষতায় এতোটাই আবিষ্ট করতেন তিনি- যেনো বই থেকে মুখ সরানোই দায়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় হয়তো এসব কিছু বিবেচনা করেই তাকে ‘শরৎচন্দ্রের চেয়েও জনপ্রিয় লেখক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

এছাড়া হুমায়ূনকে বলা হয় ‘মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিশ্বস্ত গল্পকার’। অথচ উচ্চবিত্ত বা নিম্নবিত্তের সমগ্র জীবনের অনুষঙ্গ বর্ণনাতেও তার দক্ষতার কমতি হয়নি বিন্দুমাত্র।

১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে জন্ম নেন হুমায়ূন আহমেদ। তার ডাক নাম কাজল। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি। ১৯৬৫ সালে বগুড়া জেলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক, ১৯৬৭ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক, ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতক ও ১৯৭২ সালে স্নাতকোত্তর পাস করেন। ১৯৮২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। নব্বই দশকের মাঝামাঝি তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে লেখালেখিতে পুরোপুরি মনোযোগ দেন।  

হুমায়ূন আহমেদের লেখা উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে- নন্দিত নরকে, লীলাবতী, কবি, শঙ্খনীল কারাগার, গৌরীপুর জংশন, নৃপতি, বহুব্রীহি, এইসব দিনরাত্রি, দারুচিনি দ্বীপ, শুভ্র, নক্ষত্রের রাত, কোথাও কেউ নেই, আগুনের পরশমণি, শ্রাবণ মেঘের দিন, জোছনা, জননীর গল্প প্রভৃতি। পরিচালিত চলচ্চিত্রের মধ্যে আগুনের পরশমনি, শ্যামল ছায়া, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা ও নয় নম্বর বিপদ সংকেত।  

আজও বইমেলা এলে পাঠকের ভিড় পড়ে হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের স্টলগুলোতে। সবার প্রিয় হুমায়ূন সবসময়ই প্রাঙ্গিক। আর তাই তো তিনি রয়ে যাবেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।

৬৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলানিউজের পক্ষ থেকে তার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৬
আইএ/এসএনএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।