ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

কবি স্বপন চক্রবর্ত্তীর অনুপম কাব্যগ্রন্থ ‘পরশ’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৬
কবি স্বপন চক্রবর্ত্তীর অনুপম কাব্যগ্রন্থ ‘পরশ’

কবির কাব্য ভাবনায় বার বার ফিরে আসে যাপিত জীবন-নির্নিমেষ ভালোবাসার মোহনীয় প্রহর-পাওয়া না পাওয়ার টানাপড়েন কিংবা দূর পথ বহুদূরের অন্তহীন প্রতীক্ষার সেই মরীচিকার আলোছায়ায় লুকোচুরি তার পর কবি নিজকে দেখেন জীবনের আরেক প্রান্তসীমায়। 

কবির কাব্য ভাবনায় বার বার ফিরে আসে যাপিত জীবন-নির্নিমেষ ভালোবাসার মোহনীয় প্রহর-পাওয়া না পাওয়ার টানাপড়েন কিংবা দূর পথ বহুদূরের অন্তহীন প্রতীক্ষার সেই মরীচিকার আলোছায়ায় লুকোচুরি তার পর কবি নিজকে দেখেন জীবনের আরেক প্রান্তসীমায়।

তাঁর উচ্চারণ তার কবিতায় নিবেদন যখন ডালপালা মেলে তখনই রূপ নেয় সেই সর্বজনীনতার কণ্ঠস্বরে।

কবি ও কবিতা এভাবেই পাঠকের প্রিয় হয়ে ওঠে-ঠাঁই করে নেয় পাঠকের হৃদয়ে অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে জীবনের জীবাত্মার।

কবি স্বপন চক্রবর্তী সময়ের একজন ব্যতিক্রমী কুশলী কথা কাব্যের রূপকার। দীর্ঘ সময় প্রবাস জীবনে থেকেও কবি হৃদয় নিংড়ে অনুভব করেছেন জীবনের জীবনযাপনের নানা দিক চিহ্ন। বার বার ফিরে এসেছেন নিজের অন্তর্বোধের কাছে। মৃগনাভির বিশাল বিত্ত বৈভব খোঁজা একজনের মতো আকণ্ঠ পিপাসা নিয়ে জীবনকে চকমকি পাথরে ঘষে আলো ছড়াতে ব্যাকুল হয়ে পড়েছেন তাঁর সাম্প্রতিক অনুপম কাব্যগ্রন্থ পরশ-এ। কবি স্বপন চক্রবর্ত্তীর জীবন ঘনিষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ পরশ-এ ছিয়ানব্বই পৃষ্ঠায় নানা বিষয় আশয়, স্বাদ বৈচিত্র্যের তিপ্পান্নটি কবিতা রয়েছে।

কাব্যগ্রন্থের কবিতার শিরোনামের দিকে তাকালে-নক্ষত্রচোখ, অজ্ঞাত কথা, মগ্নমমতা, তৃষ্ণা যে রাত হয়নি ভোর, চাঁদঘুম ও পলাতকা মেঘ, চলো সুনন্দিতা, ন ন্যতে, তোমার কাছে যাবো। জলের ইতিহাস এমনতরো বেশ কিছু ভালো লাগার শিরোনাম চোখে পড়ে। তবে শুধু কি শিরোনাম কথা! কবির কাব্য ভাবনায় কবিতার বিষয় বৈচিত্র্য উপস্থাপনার ক্ষেত্রেও চমকিত হতে হয়-কবির মনোব্যঞ্জনার প্রকাশ দেখে।

জীবনের সবচে’ বড়ো ক্রন্দন বেদনা-মানুষ শেষ পর্যন্ত ফিরে যায় চলমান সময়ে অপার শূন্যতা রেখে-এটাই নিয়তি। তাইতো কবির উচ্চারণ দিনান্তে ‘প্রতিবার তুমি চলে যাবার বেলায় কিছু শূন্যতা রেখে যাও/ হয়তো তোমারই অজান্তে/ এভাবে শূন্যতার পাহাড় জমে ওঠে...’ (জেলের ইতিহাস)। মানুষ চরম অসহায় নিয়তির নিষ্ঠুরতার কাছে।

তার কী ই বা বলার থাকতে পারে এই বৈপরীত্য সময় সংকটে জীবনের রাশ ছেড়ে দেওয়া ছাড়া। কবি চোখে চোখে রেখেছেন নিয়তির এ কালচিত্র তাঁর ‘স্বনন’ কবিতায় যে পথ তোমাকে ডাকেনি সাথে যেতে/ সে পথে নেমে যাও নদীর মত/ বৃষ্টির শব্দের মত/ হেমন্তের ঝরা পাতার মত/ অবধারিত নিয়তির মত...। ’

সম্পর্ক কখনো ডালপালা মেলে ধরে? কখনো জীবন জীবনকে আকঁড়ে ধরে অবলম্বন খোঁজে তার নান্দনিক ইতিকথা খুঁজতে খুঁজতে কবি পৌঁছে যান এক মীমাংসিত সত্যে যা প্রকাশ করেছেন কাব্যগ্রন্থের ‘সম্পর্ক’ কবিতায় ‘... ছুঁয়ে দিই যদি শ্রাবণের/ ঢেউয়ে ভাসা তুমুল নদী/ ভেবে ভেবে ভেসে যাই অপলকে/ শতচিহ্ন দূর্বাঘাসের মত/ অনন্তকাল পড়ে থাকি সেই পবিত্র ভাবনার চরে/ এভাবেই কালে কালে/ সম্পর্কে ইতিহাস ওঠে গড়ে....। ’ (সম্পর্ক)। কবিকে ডেকে যায় প্রিয়তম জন। জীবনের আরেক দিগন্তে যেখানে অফুরান সুখ নিশ্চিন্তে পথচলা এক মধুর কাব্যের মোহনায় হাতছানি।

সেখানে কবির কাব্যের অনুরণন ‘কাব্যগ্রন্থের ‘চলো সুনন্দিতা’ কবিতায় পাঠককে ব্যাকুল করে তোলে...’ সুনন্দিতা, আমাদের ঘর হবে। সমগ্র সেই নক্ষত্রপল্লী/ আমাদের শয্যা সমুদ্রের তীরে বালুকাবেলা। সারা জনপদ আমাদের ফূলেল বাগান/ আমাদের একান্ত উঠোন, চলার পথ/ আর তুমিই আমার/একান্ত সম্পদ। ’

ভালোবাসার প্রতি কবির এই নিবেদন সত্যি মন ছুঁয়ে যায়। মনে পড়ে প্রেম। জীবনের স্বপ্ন অদল বদলের ভাবনা বৈভব-মানুষ ফিরে যায় সেই চেনা মধুর দিগন্তে তার অপেক্ষায় শত জনমের একটি মুখ অমলিন শিলালিপি-প্রেমিক কবি স্বপন চক্রবর্ত্তী তার কবিতায় নিবিড়ভাবে ধরে রাখেন জীবনের সেই দ্যোতনাময় অপরূপ মুহূর্তকে ‘....চাঁদ ঝরা রাতে পথে পথে/ তুমুল জোনাকির উল্লাস/ অকস্মাৎ আকাশের/ বুক চিরে বিদ্যুতের রেখায়/ কার মুখ ভেসে ওঠে....। ’ (নক্ষত্র চোখ)। আবার কখনো কখনো বিষাদ জীবনকে কুরে কুরে খায়। চারপাশ নিকষ আঁধার।  

শূন্যতায় ভরে উঠে নিথর চিবুক। সে কোথায় হারিয়ে ফেলা চিরচেনা কতোকালের কাছাকাছি পেলব দুহাত জীবন এখানে অর্থহীন--জন্মান্তরের অন্ধ বিলাপ কবি ফিরে যান জীবনের আর এক অন্ধকার পাদপ্রদীপে সে বেদনাবোধের প্রচ্ছন্নতা স্বপন চক্রবর্তীর কাব্যগ্রন্থের ‘সমীকরণ’ কবিতায়-।  

‘যে ছিল হাত ধরে এতটা পথ/ সে এখন কেউ নয়/ বা, যে কোন কেউ, শূন্য শপথ/ এভাবেই যাবে দিন, এভাবেই যাবে রাত/ এভাবেই মরা অন্ধকার/ ভরে দেবে শূন্য সব হাত...। ’ (সমীকরণ)। দুর্দান্ত প্রেমিক পুরুষ দমিতার জন্য সে উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা।

নিজকে হারিয়ে ফেলে মেঘ-আকাশ কিংবা সময়ের ঘড়ি কাঁটার কাছে অশেষ তৃষ্ণা তার প্রাপ্তির কাছে হেরে বসে মধুর খেলায়-অনন্ত প্রেমে-এ নিয়ে কবির কাব্য অপূর্ব। ‘.....তোমার জন্যে মেঘপাহাড়ে ছুটে যে যাই, আরোগ্যতা আনি/ আমার হাতের পরশ দিয়ে তোমার বুকের ঝড়কে জানি/ এক জনমে হবে নাতো জনম জনম আসতে হবে/ তোমার জন্যে সকল জনম বুকে এমন তৃষ্ণা রবে....। ’ (তৃষ্ণা)।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী কবি স্বপন চক্রবর্ত্তীর ‘পরশ’ কাব্যগ্রন্থে এ ধরনের প্রাণ ছুঁয়ে যাওয়া কবিতা কবি কথনের সাড়া ফেলা চমক দেখা যায়। চমৎকার অন্ত্যেমিলের কবিতা রয়েছে-‘অতি সংলাপ’ ‘দীপশিখা’ ‘তৃষ্ণা’ ‘নিবাসন’ ‘বাউল’, অনলকথা, ‘চন্দ্রাবলী সুর’ মন বিকিরণ, চুম্বন, ‘সংলাপ, ‘খেদ’, ‘কথোপকথন’-যা সব কবিতা গ্রন্থকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে, মিল-মাত্রা-ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে কবির কাব্য রচনার কৃৎকৌশলের শক্তিমত্তার জানান দিয়েছে।  

কবি স্বপন চক্রবর্ত্তী সমাজবিজ্ঞান, বাংলা সাহিত্য ও আইনে সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী। জনম জনপদ কক্সবাজারের রামুর শ্রীকূল।  

একসময় অধ্যাপনা করেছেন কক্সবাজার আইন কলেজে, আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে, এক ছেলে দু’মেয়ের গর্বিত জনক। দীর্ঘসময় আমেরিকা প্রবাসী হয়েও নানা ব্যস্ততার মাঝেও স্বচ্ছন্দ লেখালেখিতে সম্পৃক্ত আছেন- আছেন কবিতায় সমর্পিত। ‘পরশ’ কাব্য গ্রন্থের তার কবিতালাপ তার সাক্ষ্য দেয়।  

বিখ্যাত কবি লেখক তসলিমা নাসরিন এ কাব্যগ্রন্থের প্রাক কথনে বলেছেন ‘স্বপন চক্রবর্ত্তীর কবিতার ওয়েবপেজে কাব্যানুরাগীদের ভিড় লেগেই থাকে। অন্তর্জাল থেকে বেরিয়ে তাঁর কবিতা প্রথম আলো হওয়ার স্বাদ পেয়েছে...। ‘পবশ’ কাব্য গ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে কবি স্বপন চক্রবর্ত্তী কাব্য প্রেমীদের মুখোমুখি হলেন-স্বাগতম কবি স্বপন চক্রবর্ত্তীকে কাব্যভবনে।

তাঁর কবিতা আমাদের ভালোলাগার বিষয় হয়ে থাকলো। শতাব্দী ভব এর সব্যসাচীর চমৎকার এ প্রকাশনার নান্দনিক প্রচ্ছদ করেছেন কাব্য কারিম। কবি স্বপন চক্রবর্ত্তীর আকর্ষণীয় কাব্যগ্রন্থ পরশ’ এর মূল্য দুইশত একুশ টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৬
টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।