ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

বাংলা একাডেমীর বর্ষবরণ

শিল্প-সাহিত্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১১
বাংলা একাডেমীর বর্ষবরণ

বাংলা নববর্ষ ১৪১৮ উপলক্ষে পহেলা বৈশাখ সকাল ৮টায় একাডেমীর নজরুল মঞ্চে আয়োজিত বর্ষবরণ সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বাংলা একাডেমীর নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠান। সকাল ৮:৩০টায় ‘প্রেক্ষিত পহেলা বৈশাখ ১৪১৮ : বাঙালির অতীত ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা প্রদান করেন ড. আকবর আলী খান।

স্বাগত ভাষণ দেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমীর সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী।

স্বাগত ভাষণে শামসুজ্জামান খান বলেন, বাংলাদেশের পূর্বের তুলনায় নববর্ষ উদ্যাপন ধীরে ধীরে ব্যাপক ও বিস্তৃত হয়ে উঠছে। বিপুল মানুষের মিলন মেলায় চৈত্র সংক্রান্তি ছিল বাঙালির সবচেয়ে বড় আনন্দ উৎসব। যদিও গ্রামবাংলায় কখনো নববর্ষ উপলক্ষে যাত্রাগান, রাসলীলা প্রভৃতি দেখতে পাওয়া যেত। অভিজাত শ্রেণীর পৃষ্ঠপোষকতায় নববর্ষ উদ্যাপন করা হলেও এটি এখন সকল বাঙালির সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। বাঙালির সমাজজীবনে এর গুরুত্ব অসামান্য। রাষ্ট্রীয় আদর্শের সাথে নববর্ষ উদ্যাপন অনুষ্ঠান অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের চিন্তা-চেতনা ও ভাবনার বিকাশে নববর্ষের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। বাংলা নববর্ষ উৎসব আরও বিকশিত, অর্থপূর্ণ ও তাৎপর্যময় হোক এই আশা করি।

স্মারক বক্তা ড. আকবর আলী খান বলেন, বাঙালির ভৌগোলিক অস্তিত্বের প্রতি হুমকি আসছে সব দিক থেকে। বাংলার দক্ষিণ ও মধ্য অঞ্চলের দিগন্তে আজ জলবায়ু পরিবর্তনের অশনি সংকেত। উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিমে নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ বারবার অবরুদ্ধ হচ্ছে; অববাহিকার উজানে চলছে স্পর্শকাতর বনাঞ্চল ধ্বংশের দক্ষযজ্ঞ। এ হেন অতি নাজুক পঞ্চান্ন হাজার বর্গ মাইলে ষোল কোটির বেশি মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটাতে হবে। সাথে সাথে এ কথাও মনে রাখা দরকার যে বিশ্বায়িত অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতা করে আমাদের বাঁচতে হবে। এখানে টিকে থাকার প্রথম শর্ত হল নিজের শক্তিতে বলিয়ান হতে হবে। আজকে তাই বাঙালির সবচেয়ে বড়ো প্রয়োজন শক্তিশালী সংগঠন। পাল শাসনের অভিজ্ঞতা থেকে দেখতে পাই যে গণতন্ত্রের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত উদারনৈতিক ও পরমতসহিষ্ণু রাষ্ট্র ব্যবস্থা অনেক দিন টিকে থাকতে পারে।

তিনি আরও বলেন, অতীতের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে বাঙালিরা সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে দেশজ ও বহিরাগত সংস্কৃতির মধ্যে অপূর্ব সমন্বয় করেছে। অথচ রাজনীতি ক্ষেত্রে তার অন্তর্দ্বন্দ্বসমূহ নিরসন করতে পারেনি। এই স্ববিরোধিতার সবচেয়ে বড় দ্বন্দ্ব চলছে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে, ব্যক্তিস্বার্থের সাথে গোষ্ঠীস্বার্থের এবং ঐক্যের সাথে বিভক্তির। এই দ্বন্দ্বের সুচারু নিরসনের উপরই নির্ভর করবে আগামী দিনের বাঙালির ইতিহাসের গতিধারা।

সভাপতির ভাষণে কবীর চৌধুরী বলেন, নববর্ষের এই দিনে বাঙালি সালতামামি অর্থাৎ গত এক বছরের পাওয়া না-পাওয়ার হিসেব মেলায়। গত বছরে দেশের অর্জন স্বল্প নয়। যদিও গত বছর বিজ্ঞানের প্রতি অনীহা, ধর্মান্ধতা তথা দেশব্যাপী স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। এমনকি সরকারের প্রগতিশীল নারীনীতির বিরুদ্ধেও জঙ্গি তথা মৌলবাদী মিছিল দেশব্যাপী প্রত্যক্ষ করা গেছে যা কোনো শুভ ইঙ্গিত নয়। আমাদের সম্মুখে এগুতে হলে সরকার ও জনগণকে ধর্মনিরপেক্ষতা অবলম্বন করেই এগুতে হবে। তবেই বাঙালির জাতীয় জীবনে সার্বজনীন উৎসবরূপে নববর্ষ সার্থক হবে।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী মহাদেব ঘোষ, সুষমা দাস, মকবুল হোসেন, সুজিত মোস্তফা, ইয়াকুব আলী খান, ছায়া রানী সরকার, শারমিন সাথী ইসলাম এবং ভূপতিভূষণ বর্মার পরিচালনায় ভাওয়াইয়া সংগীত সংগঠন। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ পাল, মোঃ শফিকুল ইসলাম, এফ. এম. আলমগীর কবির, সেলিম আহম্মেদ, আশুতোষ শীল এবং সাঈদ হোসেন সেন্টু।

বইয়ের আড়ং ও মেলা উদ্বোধন
নববর্ষ উদ্যাপনের অংশ হিসেবে ১০ দিনব্যাপী আয়োজিত ‘বইয়ের আড়ং’-এর উদ্বোধন করেন ড. আকবর আলী খান। বিকেল ৪টায় যৌথভাবে বাংলা একাডেমী এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) আয়োজিত বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করেন মাননীয় শিল্পমন্ত্রী জনাব দিলীপ বড়–য়া। বৈশাখী মেলা ও বইয়ের আড়ং প্রতিদিন সকাল ১০:০০টা থেকে রাত ৮:০০টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

পুরস্কার প্রদান
বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় সর্বাধিক সংখ্যক মানসম্মত গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ‘মাওলা ব্রাদার্স’ এবং ‘প্রথমা প্রকাশনী’কে ‘শহীদ মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হয়। পুরস্কার হিসেবে বাংলা একাডেমীর মনোগ্রাম সম্বলিত স্মারক ও সনদ প্রদান করেন শামসুজ্জামান খান এবং জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী।

বাংলাদেশ সময় ১৭৫০, এপ্রিল ১৫, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।