ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ২৩ রবিউস সানি ১৪৪৭

শিল্প-সাহিত্য

হুমায়ূন আহমেদের একটি গল্প ‘পাপ’ । মোহাম্মদ আজম

স্মরণ/শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:৩৩, নভেম্বর ১৩, ২০১৪
হুমায়ূন আহমেদের একটি গল্প ‘পাপ’ । মোহাম্মদ আজম ১৩ নভেম্বর, ১৯৪৮—১৯ জুলাই, ২০১২

আজ হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন। ১৯৪৮ সালে ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনায় জন্ম নেয়া জনপ্রিয় এই কথাসাহিত্যিকের ছোটগল্প নিয়ে এই বিশেষ রচনাটি নিবেদিত হলো বাংলানিউজ-এর পাঠকেদের উদ্দেশ্যে

১ম পর্ব
গল্পটা আকারে ছোট।

কলকাতার নয়া উদ্যোগ প্রকাশনী থেকে হুমায়ূনের একটা গল্প-সংকলন বেরিয়েছে স্বনির্বাচিত গল্প নামে। এ সংকলনে দেখছি, ‌‘পাপ’ পৃষ্ঠা পাঁচেক জায়গা নিয়েছে। একেবারেই সাদামাটা সরল ভাষা। খুব মনোযোগ না দিয়েই ‘হুমায়ূনের অন্য অনেক লেখার মতো’ পড়ে ফেলা যায়। তাতে হয়তো চোখেই পড়বে না, কতো বিচিত্র লীলা এই ছোট্ট বয়ানটি নিজের শরীরে লুকিয়ে রেখেছে। ঘটনাটা মুক্তিযুদ্ধের সময়ের। যুদ্ধের কালেই কেবল এ ধরনের গল্প পয়দা হতে পারে। অন্য সময়ের গল্প অন্যরকমের হয়। এই গল্পকে ঘিরে একপ্রস্ত হুমায়ূন-পাঠই আমাদের বর্তমান লেখার উদ্দেশ্য। বিস্তারে যাওয়ার আগে মূল গল্পটা সংক্ষেপে বলে নেয়া যাক।

গল্পকথক মাধবখালি ইউনিয়নের ধলা গ্রামে প্রাইমারি স্কুলে মাস্টারি করতেন। যুদ্ধের সময় তার বউ ছিলো সন্তানসম্ভবা। ধলা গ্রামটা খুব ‘ভিতরের দিকে’ হলেও জুন মাস থেকে সেখানে যুদ্ধ-পরিস্থিতি তৈরি হয়। পাশের কাঞ্চন নদীতে পাক বাহিনীর গানবোট চলাচল শুরু হয়। মাধবখালি ইউনিয়নে মিলিটারি ঘাঁটি করে। শুরু হয় অত্যাচার-নির্যাতন। জুলাই মাসের শেষের দিকে মুক্তিবাহিনী দেখা দেয়। প্রথমে টুকটাক আক্রমণ। সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকে ‘রীতিমতো যুদ্ধ’। এ রকম এক যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর তরুণেরা ‘কাঞ্চন নদীতে মিলিটারীর একটা লঞ্চ ডুবায়ে দিলো’। পাক বাহিনীর এক অল্পবয়সী অফিসার কোনোভাবে নদীর কূলে উঠে আসে। আশ্রয় নেয় গল্পকথকের ঘরে। তিনি অবশ্য এ খবর জানতেন না। দুইদিন পরে এক ঝড়জলের রাতে তার পোয়াতি বউ তাকে ডেকে কিরা-কসম কাটিয়ে কথা আদায় করে যে, তার কথামতো একটা কাজ করে দিতে হবে। মাস্টার সাব অগত্যা সম্মত হন। তখন বউ তাকে ভাঁড়ার ঘরে লুকিয়ে রাখা শত্রুবাহিনীর অফিসারটিকে দেখায়। বলে, ছেলেটি তাকে ‘বহেনজি’ডেকেছে। সে তাকে আশ্রয় দিয়েছে। বাঁচাবে বলেছে। এখন তাকে মাধবখালি মিলিটারি ক্যাম্পে পৌঁছে দিতে হবে। গল্পকথক নিরীহ মানুষ। সে পড়ে বিরাট মুসিবতে। বউকে কথা দিয়েছে। কিন্তু শত্রুপক্ষের এই জোয়ানকে মিলিটারি ক্যাম্পে পৌঁছে দিলে খবরটা জানাজানি হবে। তাকে মুক্তিবাহিনী ছাড়বে না। দেশের মানুষের কাছে তার পরিচয় হবে রাজাকারের। দেশদ্রোহী হয়ে তাকে মরতে হবে। গল্পকথক আগপাছ ভেবে মিলিটারি ক্যাম্পে গেলো না। খবর দিলো মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে। সে রাতেই ছেলেটিকে ‘গুলি করে মারা হলো’।

না, স্ত্রীর তীব্র ঘৃণা তাকে পোহাতে হয় নাই। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে সে মারা যায় অল্পদিন পরেই। কিন্তু নিজের কাছেই সে অপরাধবোধে ভুগতে থাকে। তার কোনো সন্দেহ নাই যে, সে পাপ করেছে। ভয়ংকর পাপ। কিন্তু সেই পাপের ধরন সম্পর্কে সে নিশ্চিত হতে পারে না। আর কী করতে পারতো, সে জিজ্ঞাসা নিয়েই সে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করে।

খুবই ব্যক্তিগত গল্প। কিন্তু যুদ্ধের বাস্তবতা ছাড়া এ ধরনের ঘটনার জন্ম হয় না। যুদ্ধ একটা বড় ঘটনা। তার নিজস্ব হিসাব-নিকাশ আছে। জয়-পরাজয় আছে। রাজনীতি-সমরনীতির জটিলতা আছে। ব্যক্তিগত জীবন অবশ্যই তার বাইরের নয়। এমনকি জড়াতে না চাইলেও ব্যক্তি এ ধরনের ঘটনা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারে না। তবুও যুদ্ধের সামগ্রিক বাস্তবতা আর পৃথক ব্যক্তির জীবনে তার প্রভাব এক জিনিস না। লেখক এই সুবিধাটাই নিয়েছেন। বিশাল-বিচিত্র-জটিল মুক্তিযুদ্ধ থেকে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বেছে নিয়েছেন। ঘটনাটি ব্যক্তির জন্য মর্মান্তিক। ব্যক্তিগত জীবনকে ওলটপালট করে দিয়ে একটি দার্শনিক প্রশ্ন হাজির করার জন্য যথেষ্ট। যুদ্ধের বাস্তবতা আর মহিমাকে যথোচিত পরিসর দিয়েই লেখক ব্যক্তিগত ফিরিস্তির সুযোগ করে নিয়েছেন। সেদিকটা একবার দেখে আসা যাক।

বাংলাদেশের এক প্রত্যন্ত গ্রামে মুক্তিযুদ্ধ কী রূপে উপস্থিত হতে পারে, তার একটা পরিচ্ছন্ন ছবি আছে এ গল্পে। তুলির দুচার আঁচড়ে নিখুঁত ছবি ফুটিয়ে তোলায় হুমায়ূন বরাবরই পারদর্শী। এখানেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নদীমাতৃক এই গ্রামে মিলিটারি এসেছে নদীপথে। জুন মাসের দিকে। কাঞ্চন নদীর এক পাশে ধলা গ্রাম ‘গল্পকথকের বাড়ি। অন্যপাশে চর হাজরা। জুন মাসের উনিশ তারিখে চর হাজরায় মিলিটারি আসে। গ্রামের মাতবর ইয়াকুব আলী মিলিটারীদের যথাসাধ্য সমাদর করেন। খাসি জবাই করে খাওয়ান। যাওয়ার সময় তারা মেজবানের দুই মেয়ে আর ছেলের বউকে তুলে নিয়ে যায়। তারা আর ফিরে আসেনি। এ ঘটনায় পুরা এলাকার মানুষ ভয়ে অস্থির হয়ে ওঠে। জুলাই মাসে দেখা দেয় মুক্তিবাহিনী। তারা ছোটখাট অপারেশন চালাতে থাকে। কিন্তু এক জায়গায় জেঁকে বসার শক্তি তখনো মুক্তিবাহিনীর হয় নাই। এই অবস্থা গ্রামবাসীর জন্য বাড়তি বিপদের কারণ হয়। অপারেশনের খবর পেয়ে মিলিটারি আসে। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে মুক্তিবাহিনীর শক্তি বাড়ে। কাঞ্চন নদীতে তারা মিলিটারির একটা লঞ্চ ডুবিয়ে দেয়। গল্পের গড়নের জন্য যুদ্ধ-পরিস্থিতির এই পরিচয় দরকার ছিলো। বিশেষত মিলিটারির লঞ্চডুবির ঘটনা। কারণ, এই লঞ্চডুবির পরই পাকিস্তানবাহিনীর লেফটেন্যান্ট দিলদার গল্পকথকের স্ত্রীর আশ্রয়ে পৌঁছায়। কথকের ভাষায় ‘মূল গল্প’শুরু হয়।

মূল গল্প শুরুর আগে একদিকে যুদ্ধের কিছু খণ্ডচিত্র আঁকতে হয়েছে। অন্যদিকে গল্পকথকের একটা মূর্তিও তৈরি করতে হয়েছে। তিনি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। থাকেন ধলা গ্রামে। গ্রামের পাশেই কাঞ্চন নদী। তাঁর বাড়িটাও একেবারে নদীর কূলে। বাড়ি থেকে মাধবখালি যেতে হয় নৌকাযোগে। ভালো করে খেয়াল না করলে সহসা বোঝাই যায় না, ধলা গ্রামের এই ভৌগোলিক অবস্থা গল্পের যাবতীয় ঘটনাপ্রবাহের অনুকূলে খুব সতর্কতার সাথে বেছে নেওয়া হয়েছে। তো, সে গ্রামে মাস্টার সাব সুখেই বাস করছিলেন। নতুন বিয়ে করেছেন। স্ত্রীর সাথে বনিবনা ভালো। নদীর টাটকা পাবদা-বোয়াল খান। ওই গ্রাম তখনো ‘ভিলেজ পলিটিক্সে’আক্রান্ত হয় নাই। লোকে শিক্ষক হিসাবে তাকে মান্যগণ্য করে। বিয়েশাদিতে দাওয়াত করে। শালিশ-বিচারে তার কথা গুরুত্ব পায়। সুখী-সুন্দর জীবন।

দুই বছর এখানে সুখে কাটানোর পর ‘সংগ্রাম শুরু হলো’। সম্ভাব্য বিপদের আশঙ্কায় শুরু হলো অশান্তির দীর্ঘ প্রহর। যেকোনো মুহূর্তে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা। তদুপরি স্কুলের বেতন বন্ধ। বউ সন্তানসম্ভবা। হাতে টাকা-পয়সা নাই। গ্রামের বাড়ি থেকে টাকা-পয়সা পাওয়ারও উপায় নাই। যোগাযোগ এক প্রকার বন্ধ। এখানে উল্লেখ করা দরকার, গল্পকথক যে নিজের গ্রামে থাকে না—এ গল্পে এটা খুব জরুরি একটা তথ্য। পষ্ট করে বলা নাই, কিন্তু বুঝতে অসুবিধা হয় না, তার বাড়ির খুব কাছেধারে আর বাড়িঘর নাই। তারা স্বামী-স্ত্রী আলাদা একটা বাড়িতে বাস করে। কাজের লোক বা আত্মীয়-স্বজন কেউ নাই। স্ত্রী সন্তানসম্ভবা হওয়া সত্ত্বেও বাড়তি কেউ যে আসেনি তার এক কারণ গ্রামের বাড়ির দূরত্ব; মূল কারণ যুদ্ধ-পরিস্থিতির প্রতিকূলতা। বাড়িটির একাকিত্ব আর তাদের দুজনের বিচ্ছিন্ন থাকা ‘মূল ঘটনা’ঘটার জন্য জরুরি ছিলো।

ঘটনাটা বৈধতা পেয়েছে, অর্থাৎ সম্ভাব্যতা আর বিশ্বাসযোগ্যতার দিক থেকে গ্রহণযোগ্য হয়েছে আরো কিছু কারণে। গল্পকথক তার বউকে নিয়ে সুখেই ছিলো। তাদের এই সুখে রাষ্ট্রের বা কেন্দ্রের ভূমিকা ছিলো না। তাদের বিপর্যস্ত অবস্থা তৈরি হয় ‘বাইরের বাস্তবতা’ থেকে। সেই বাস্তবতায় তার সুস্পষ্ট পক্ষপাত ছিলো। পক্ষপাতটা রাজনৈতিক সচেতনতা বা সক্রিয়তা থেকে তৈরি হয়নি। তৈরি হয়েছে পাক বাহিনীর নির্মমতা থেকে। ব্যক্তিগতভাবে সে আরো বিপদে পড়ে স্ত্রীর অসুস্থতার কারণে। ঘটনার দুদিন আগে থেকে তার স্ত্রী বেশ অসুস্থ হয়ে পড়ে। ডাক্তার দেখানোর উপায় নাই। মাধবখালির একমাত্র এমবিবিএস বাবু নলিনীকুমার রায়কে মিলিটারিরা প্রথম দিনই মেরে ফেলেছে। এই যখন পরিস্থিতি, তখন শত্রু-মিত্র সম্পর্কে সুস্পষ্ট বোধ তৈরি হয়ে যাওয়ার কথা। যাদের কারণে তার এই দুরবস্থা, তাদের একজনকে নাগালে পেলে কর্তব্য সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগার কথা না। কর্তব্য সমাপনের পর নৈতিক সমস্যা বা পাপবোধও দেখা দেওয়ার কথা না। দেখা দিয়েছে স্ত্রীর কারণে। স্ত্রীর অসুস্থতার কারণে। মুমূর্ষু স্ত্রী তার কাছ থেকে কথা আদায় করেছে। সে কথা রাখতে পারেনি। যে কাজটি অনায়াসেই যথার্থ গণ্য হতে পারতো, সে কাজ তাকে মর্মান্তিক দ্বন্দ্বে ফেলে দেয়।

ঘটনার জন্য বেছে নেয়া হয়েছে তুমুল বর্ষণের রাত। এমন রাতে সাধারণত কেউ ঘর থেকে বের হয় না। পাক বাহিনীও না, মুক্তিবাহিনীও না। সাধারণ মানুষ তো এমনিতেও খুব একটা বের হয় না। তার স্ত্রী তাকে সেই কথাই বলে। ধরা-পড়া অফিসারটিকে মিলিটারি ক্যাম্পে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অতি উত্তম সময়। প্রশ্ন হলো, ফুলি একে বাঁচাতে চায় কেন? সে কি মিলিটারিদের ভয়াবহতার কথা জানে না? নিশ্চয়ই জানে। তাহলে একে বাঁচানোর জন্য তার এতো উতলা হবার কারণ কী? কারণ—সে ‘ফুলিকে দেখে ‘বহেনজি’—বলে ডাক দিয়ে কেঁদে উঠেছে। ফুলি তাকে আশ্রয় দিয়েছে’। স্বামীকে প্রথম কথাটা বলার সময় তার প্রস্তাবটাও লক্ষ করার মতো— সরল কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ: ‘একটা মানুষ আমার কাছে আশ্রয় নিয়েছে। তার জীবন রক্ষা করতে হবে’। শত্রুপক্ষের এক ঘাতককে ‘মানুষ’অভিধা দিয়ে তাকে বাঁচানোর যে ‘মেয়েমানুষী’, তাকে ফুলির দিক থেকে ন্যায্য করার জন্য লেখক যথেষ্ট কায়কসরত করেছেন। একেবারেই আলগোছে। একেবারেই ছাড়াছাড়াভাবে। কিন্তু খুব কার্যকর ছবি হয়েছে সেগুলো। এর কিছু অংশ বর্ণিত হয়েছে ফুলির জবানিতে। আর কিছু অংশ গল্পকথকের অভিজ্ঞতা থেকে। গল্পকথক তাকে ভাঁড়ার ঘরে দেখতে গেছে রাগে গজরাতে গজরাতে। সে এই ঘটনার বিপজ্জনক দিক সম্পর্কে পুরা হুঁশিয়ার ছিলো। পাক হানাদারটিকে সম্বোধন করছিলো ‘হারামজাদা’ বলে। এ কারণেই ফুলির তুলনায় তার বয়ান অধিকতর কার্যকর হয়েছে। কী সে বয়ান, যা হানাদার বিচ্ছুটিকে ‘মানুষ’ গণ্য করতে সাহায্য করেছে?

লঞ্চডুবির পর সে সাঁতরে কূলে উঠেছে। অস্ত্রশস্ত্র কিছু ছিলো না। ফুলির আশ্রয়ে জায়গা পেয়েছে ভাঁড়ার ঘরে। নিতান্তই অল্পবয়সী ছেলে। পরনে লুঙ্গি-পাঞ্জাবি। ফুলি তাকে স্বামীর পোশাক পরতে দিয়েছে। এই পোশাকে তাকে দেখাচ্ছে ‘খুব সাধারণ বাঙালীর মতো’। শুধু রঙটা বেশি ফর্সা আর নাক-মুখ কাটা কাটা। হারিকেন হাতে তাকে ঢুকতে দেখে ‘ছেলেটা’‘ভয়ে শিউরে উঠলো’। তার বাড়ি বালাকোটে। রেশমী নামের এক মেয়ের সাথে তার ভাব। যুদ্ধের পর গিয়ে বিয়ে করবে। রেশমী তার গ্রামেরই মেয়ে। খুব সুন্দর। ফুলি ছবি দেখেছে। তার স্বামীও দেখলো। ঘাগরা পরা। মুখ হাসি হাসি।

সমরনীতি বা রাজনীতির যেকোনো বিচারে উপরোক্ত কারণগুলোর বরাতে শত্রুপক্ষীয় একজন অফিসারকে ছেড়ে দেওয়া অযৌক্তিক। কাণ্ডজ্ঞানও একে সমর্থন করবে না। এই নিরীহ ছেলেটি ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার পর স্বমূর্তিতে আবির্ভূত হবে বা হতে বাধ্য হবে—এমন ভাবাই অধিক সঙ্গত। সুতরাং ফুলির সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক ভাবার কোনো কারণ নাই। ফুলি হয়তো বলতে পারতো, ‘যুদ্ধের নিয়ম’ ‘মানবিক নিয়ম’কে রদ করতে পারে না বা করা উচিত নয়। কিন্তু সে এসবের ধারে-কাছেও যায়নি। যেতে চায়নি। অব্যবহিত পরে মৃত্যু হওয়ায় তার জবানবন্দি নেয়ার সুযোগও আর থাকেনি। সে স্বামীকে সম্পর্কের বরাতে বশ করতে চেয়েছে। কোরান ছুঁয়ে কসম কাটিয়ে নিশ্চিত হতে চেয়েছে। তার অসুস্থতার সুযোগ নিতে চেয়েছে। তার মনে হয়েছে, ছেলেটিকে বাঁচানো দরকার। সে বাঁচাতে চেয়েছে। বাছবিচারে যায়নি। সে যে তার দাবিতে অটল ছিলো, তা বোঝা যায় গল্পকারের জবানি থেকে: ‘বেঁচে থাকলে সারাজীবন স্বামীকে ঘৃণা করে বাঁচতো’। কিন্তু এ গল্পের সমস্যাটা ফুলির নয়। তার স্বামীর। আমাদের কথকের। তার সমস্যাটাও ঠিক অসহায় সৈনিকের বা আশ্রয়-চাওয়া মানুষের মৃত্যু নয়। সমস্যাটা নৈতিকতা বা পাপবোধের। তার দিকটা একবার দেখে নেয়া যাক।

লেখক: গবেষক ও সাহিত্য সমালোচক, শিক্ষক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ সময়: ১২২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।