___________________________________
এর্নেস্তো সাবাতো (২৪ জুন ১৯১১-৩০ এপ্রিল ২০১১) আর্জেন্টাইন লেখক এবং চিত্রকর। লেখালেখির জন্য পেয়েছেন লিজিওন অফ অনার, মিগুয়েল দে সেরভেন্তেস পুরস্কার।
‘এল তুনেল’ (১৯৪৮), ‘সবরে হেরোস ইয়া টুম্বাস’ (১৯৬১), ‘অ্যাবানদন এল এক্সতারমিনাদোর’ (১৯৭৪) তাঁর জগদ্বিখ্যাত তিন উপন্যাস।
___________________________________
৩৫তম কিস্তির লিংক
যা বলেছিলাম, জেগে উঠে দেখি আমি ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি, ঘামে ভিজে একেবারে নেয়ে উঠেছি।
কোন পেইন্টার আমার পছন্দের চায়ের টেবিলে এই প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করেছিল চর্মসার মহিলাটা। অসন্তোষের সঙ্গে দুটো নাম বললাম: ভ্যান গগ, এল গ্রেকো। বাঁকা চোখে তাকাল আমার দিকে তারপর, যেন স্বগতোক্তি করল:
‘টিয়াহ (সত্যি)!’
তারপর সে যোগ করল: ‘আমার নিজের কাছে, অস্বাভাবিক আকৃতির শিল্পকর্ম একদম পছন্দ না। তোমাকে এটা বলতে আমার কোনো অসুবিধা নেই,’ বলে চললসে, হান্তেরের দিকে ফিরল, ‘আমি মাইকেল অ্যাঞ্জেলো, এল গ্রেকোর মতো গ্রেট আর্টিস্টদের কাজে খুবই বিরক্ত। এদের বিশালত্ব এতোটাই আগ্রাসী, এতোটাই নাটকীয়। তোমার কি মনে হয় না এটা অশালীন? আমি মনে করে একজন শিল্পীর একটা নৈতিক দায়িত্ব আছে সে কখনই অন্যদের মনোযোগ আকর্ষণ করবে না। তার ওপর, একজন নিজেকে মৌলিক দাবি করার মানেই হলো, অন্যরা যে মাঝারি তা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া ‘যা আমার কাছে খুবই সন্দেহজনক রুচি। আমি নিশ্চিত, আমি যদি ছবি আঁকি কিংবা লেখালিখি করি, আমার শিল্পকর্ম কখনই কারো মনযোগ আকর্ষণ কবে না। ’
‘আমার কোনো সন্দেহ নেই,’ বিদ্বেষের সঙ্গে বলল হান্তের। ‘এরকম হলে তুমি আর লেখালিখি করতে চাইবে না, এই বইটার কথা ধরো, দি ব্রাদার কারমাজভ। ’
‘চেলো হয়ো (কি সাংঘাতিক!)!’ হঠাৎ বলে উঠল মিমি। আকাশের দিকে চোখ তুলে তাকালো, তারপর পুরোটা চিন্তা করে নিয়ে বললো:
‘আমার কাছে, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় ওরা নব্য ধনীর মতো। রাশিয়ান উপন্যাস তোমার সহ্য হয়?’
অপ্রত্যাশিতভাবে, শেষ প্রশ্নটা সে আমাকেই করলো, কিন্তু জবাবের জন্য অপেক্ষা করলো না মহিলা; তাড়াহুড়ো করে, আবার হান্তেরের সঙ্গে কথা শুরু করে দিলো:
‘হ্যাঁ, আমি কখনই একটা রাশিয়ান উপন্যাস শেষ করতে পারিনি। ওগুলো এতোটাই বিরক্তিকর। হাজার হাজার চরিত্র, তারপর শেষে গিয়ে দেখবে আসলে চার কি পাঁচটা। পাগল হয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে যখনই তুমি একজনকে আলেকজান্দ্রে নামে চিনতে শুরু করেছো, তখনই তাকে ডাকা হচ্ছে শাসা বলে, তারপর সাচকা, আরও পরে এসে শাসিনকা, তারপর হঠাৎ সদর্পে তা হয়ে গেলো আলেকজান্দ্রে আলেকজান্দ্রোভিচ বুনিন, পরে আলেকজান্দ্রে আলেকজান্দ্রোভিচ। যে মুহূর্তে তুমি মাত্র হাঁটতে শুরু করলে, তখুনি তোমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হলো। এর কোনো শেষ নেই; প্রত্যেকটা চরিত্র নিজেই গোটা একটা পরিবার। এরকম খুব ক্লান্তিকর এমনকি তুমিও এক মত হবে, তোমার বেলায় হলেও!’
ভীষণরকম মন খারাপ লাগছে। লোকজন সব সময় বলে আমার ধৈর্য কম। কিন্তু আমি আজ বিস্মিত হয়ে দেখছি যে, কেমন চুপচাপ ভদ্রভাবে আমি হান্তের আর মিমির এসব অসাড় মন্তব্য শুনে যাচ্ছি, এবং আরও বিস্ময়ের যে, ওদের কথাবার্তার সব একেবারে পুঙ্খানুপুঙ্খ মনে করতে পারছি। বিস্ময়কর, এসব কথা শুনতে শুনতেই চিন্তায় ব্যস্ত থেকে নিজেকে উৎফুল্ল রাখার চেষ্টা করছি, ‘এই দুটো একেবারেই ছেবলা, পুরোপুরি গর্দভ। এদের উপস্থিতিতে মারিয়া একাকিত্ব ছাড়া আর কিছু পাবে না। এ ধরনের লোকজনের মাঝে আমি কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী দেখতে পাচ্ছি না। ’
তারপরও, আমি একটুও আরাম পাচ্ছি না। আমি অন্তরের গভীর থেকে কিছু একটা বলছি, তুমি মন খারাপ করো। খারাপ হলো, এই বিষাদের শিকড় কোথায় সনাক্ত করতে না পারায় আমি ভেতরে ভেতরে যথেষ্ট বিরক্ত ও বিচলিতবোধ করছি, তা আমি যতোটাই শান্ত আর নিরুদ্বিগ্ন থাকার চেষ্টা করি না কেন অথবা এই ঘটনা আমি পরে একলা হয়ে নিরালায় পর্যালোচনা করে দেখবো নিজেকে যতোই এই প্রতিশ্রুতি দেই না কেন। আমি বোঝার চেষ্টা করলাম মারিয়ার অনুপস্থিতিই আমার এই বিষাদের উৎস কিনা, কিন্তু আমি বুঝতে পারছি ওর এখানে না থাকাটা আমাকে বিষাদগ্রস্ত করার চেয়ে বরং বিরক্তি উৎপাদন করছে। ব্যাপার ওটা না।
(চলবে)
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৪
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
টানেল | এর্নেস্তো সাবাতো (৩৬) || অনুবাদ: আলীম আজিজ
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।