ঢাকা, বুধবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ মে ২০২৪, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

উপচেপড়া ভিড়, পরিসর বাড়ানোর দাবি

সালাম ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১১
উপচেপড়া ভিড়, পরিসর বাড়ানোর দাবি

ঢাকা : শিক্ষক, প্রাবন্ধিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের শঙ্কাই সত্য প্রমাণিত হলো একুশে বইমেলার চতুর্থ দিনে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় শুক্রবার উপচেপড়া ভিড়ে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের নাভিশ্বাস ওঠার উপক্রম হয়েছিল।

মেলার পরিসর বাড়ানোই তাই হয়ে ওঠেছিল সময়ের দাবি।

শুক্রবার বেলা ১১টা থেকেই উন্মুক্ত ছিল বইমেলা। দিনের প্রথমভাগে তেমন না থাকলেও পড়ন্ত দুপুর থেকেই বাড়তে থাকে ভিড় এক পর্যায়ে দু’টি প্রবেশ, প্রতিটি চত্বর, হাঁটার প্রতি পথ জনাকীর্ণ হয়ে যায়।

কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক এ ভিড় দেখে ‘বিস্ময়কর’ বলেও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘প্রথমদিকে এতো সমাগম সত্যিই বিস্ময়কর। ’

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত মেলায় আসেন দুপুরের আগেই। এছাড়া নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন, কবি আসাদ চৌধুরী, কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নূহ উল আলম লেলিন প্রমুখকে মেলায় আসতে দেখা যায়।

এদিকে, মেলায় আসা ক্রেতা-দর্শনার্থীদের অনেকেই মেলার পরিসর বাড়ানোর জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। বৃহস্পতিবার সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘এবার স্টল বেড়েছে, তাই পরিসর বাড়ানো উচিত ছিল। ভিড়-ভাট্টা শুরু হলে আসাটাই দায় হয়ে উঠবে। ভালোভাবে নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগও থাকবে না, হাঁটাচলা করা যাবে না। ’

তার সেই শঙ্কার জন্য বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি। মাসের প্রথম শুক্রবারেই তা দেখলেন সবাই। শেষ দিকে এ ভিড় আরও অনেক বেশি বেড়ে যাবে, আগের অভিজ্ঞতাগুলো তা-ই বলে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাকির, শায়লা ও অনন্যা বাংলানিউজকে বললেন, ‘এতোদূর থেকে তো প্রতিদিন আসা যায় না। তাই শুক্রবার বেছে এসেছি। কিন্তু এতো মানুষ, শান্তিতে যে কোনো স্টলের সামনে দাঁড়াবো সে সুযোগও নেই। ’

মেলার পরিসর বাড়ানো উচিত বলেও মন্তব্য করেন তারা।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হারুন উদ্দিনও বললেন একই কথা। তার ভাষায়, ‘গুলশানে অফিস। কাজ সেরে বেরোতে বেরোতে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে যায়। আজ বন্ধের দিন, তাই এলাম। কিন্তু অনেক স্টলের সামনেই যেতে পারছি না। কোন স্টল কোথায় আছে, সেটা খুঁজে পেতেও হিমশিম খাচ্ছি। ’

এ প্রসঙ্গে মেলা উদ্্যাপন কমিটির আহ্বায়ক ও একাডেমীর পরিচালক শাহিদা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি মেলা খোলামেলা রাখতে। বাংলা একাডেমীর প্রাঙ্গনের বাইরে আমাদের যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এরপরও সিটি কর্পোরেশন সামনের রাস্তাটি মেলার আওতায় নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। ’

‘গত পাঁচ বছরের তুলনায় এবার অনেক বেশি জায়গা রাখা হয়েছে’ দাবি করে তিনি আরও বলেন, ‘এখন সরকারি পর্যায় থেকে শুরু করে সবার সহযোগিতা না পেলে মেলার পরিসর আর বাড়ানো সম্ভব হবে না। ’

এছাড়া একাডেমী ভবনের কাজ চলায় বেশকিছু জায়গা ব্যবহার করা যায়নি উল্লেখ করে শাহিদা খাতুন বলেন, ‘সেখানে হয়তো আরও ৪০/৫০টি স্টল (ইউনিট) রাখা যেতো। সুযোগ পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাচেলর স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায়ও আরও দুইশ’ স্টল বসানো যেতো। ’

উল্লেখ্য, বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান মেলা শুরুর আগে এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, আগামী (২০১২) বইমেলার আগেই একাডেমীর দেওয়াল ভেঙে সামনের রাস্তাটি মেলার আওতায় নিয়ে আসা হবে। এছাড়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত পুরো সড়কটিই মেলার অন্তর্ভুক্ত করার কথা রয়েছে।

ভিড়ের কারণে স্টলগুলোর ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা কোনঠাসা হয়ে পড়েছিলেন মিডিয়াকর্মীরাও। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলা তো দূরে থাক সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত কোনো স্টলের সামনে যাওয়াটাই কষ্টকর হয়ে উঠেছিল।

বেশক’টি স্টলের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগের তিনদিনের তুলনায় বই বিক্রি বেড়েছে অনেক। তবে মেলায় জনসমাগমের সঙ্গে তুলনা করলে বিক্রির হার কমই ছিল। এছাড়া একাডেমী প্রাঙ্গণের বাইরের রাস্তার দু`পাশের স্টলগুলোতে ক্রেতাদের ভিড়তে দেখা গেছে খুব কম।

আর্চওয়ের বাইরে আরেকটি লাইন

প্রচুর ক্রেতা-দর্শনার্থীর আগমনী জোয়ার সামলাতে হিমশিম খেতে দেখা যায় দু’টি প্রবেশ পথে দায়িত্ব পালনরত পুলিশ কর্মকর্তাদেরও। বিকেল হতেই উভয় পাশে স্থাপন করা আর্চওয়ের বাইরে আরও একটি করে লাইন করতে বাধ্য হন তারা। এতে আগতদের বিড়ম্বনা কিছুটা হলেও লাঘব হয়।

তবে, একাডেমীর প্রধান ফটকের ভেতরে পথের মাঝখানে ওয়াসার একটি পানিবাহী গাড়ি রাখা ছিল। এতে করে মানুষের প্রবেশ বেশ কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়।

শনিবারও সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা উন্মুক্ত থাকবে।

এদিকে, শুক্রবার সকালে শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা বিকালে ‘রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞানভাবনা: বিশ্ব পরিচয়’ শীর্ষক সেমিনার এবং ১১টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠিত হয়। এদিন মোট ১৪২টি নতুন বই আসে মেলায়।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।