ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

শামসুর রাহমানের কবিতা : ভাষা ও ভূমির প্রতিভাস

ফজলুল হক সৈকত | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১০
শামসুর রাহমানের কবিতা : ভাষা ও ভূমির প্রতিভাস

শামসুর রাহমান (জন্ম ২৩ অক্টোবর ১৯২৯, মৃত্যু ১৭ আগস্ট ২০০৬) দেশভাগ-পরবর্তীকালে ঢাকাকেন্দ্রিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। ভারত-বিভাজনের ফলে কলকাতাকেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল থেকে ছিটকেপড়া ঢাকাকেন্দ্রিক আনকোরা সাহিত্যচর্চার এক ক্রান্তিলগ্নে তাঁর কবিজীবনের প্রারম্ভ।

অবশ্য সময়-পরিক্রমায় বাংলা কবিতায়-পরিসরে তিনি তৈরি করে নিয়েছেন একটি নিজস্ব ভাষাভঙ্গি। একদা ‘বিবরবাসী অন্তর্জীবনে সমর্পিত’ কবি, ক্রমান্বয়ে হয়ে উঠলেন ‘বহির্জীবনের প্রতি মনোযোগী এবং রাজনীতি-মনস্ক’। তিনি রাজনীতি থেকে, গণসংগ্রাম থেকে সংগ্রহ করতে থাকলেন কবিতার বিচিত্র উপাদান। কাব্যচর্চার প্রথম প্রহরে নিভৃতিপ্রিয়-আত্মমগ্ন-মৃদুকণ্ঠ-স্বপ্নচারী শামসুর রাহমান রাজনীতি থেকে কবিতাকে দূরে রাখতে চেয়েছিলেন; বলেছেন, ‘যখন প্রথম কবিতা লিখতে শুরু করি, তখন চতুর্দিকে কড়া পাহারা বসিয়ে দিয়েছিলাম যাতে আমার কাব্যেেত্র রাজনীতির অনুপ্রবেশ না ঘটে। ’ কিন্তু তৎকালীন সামরিক শাসনের যাঁতাকলে যখন সামাজিক-ব্যক্তিক মূল্যবোধগুলো গুঁড়িয়ে যেতে লাগলো, তখন তাঁর কবিতায় প্রবেশ করল প্রতিবাদের সুর। আর তারও আগে বাংলা ভাষার ওপর আসা প্রবল আঘাতের দিনগুলোতে ব্যক্তির আর্তি তিনি এঁকেছেন সামাজিক দায় ও দায়িত্বের পাটাতনে দাঁড়িয়ে। অর্থাৎ, চেতনে-অবচেতনে, প্রথমে-শেষে—সব পরিবেশে, সব প্রহরে রাহমান ছিলেন স্বদেশ-নিজভাষার প্রতি আন্তরিক, শ্রদ্ধাশীল। রাজনীতি ও সমাজ তাঁর কবিতায় তাই অবিচ্ছেদ্য-অনিবার্য প্রসঙ্গ।
 
হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘একুশে ফেব্র“য়ারী’ সংকলনে একুশের কবিতায় শামসুর রাহমান বিবৃত করেছেন সভ্যতা-ঐতিহ্যের কালযাত্রায় মানবিকতার বিপর্যয় আর মানবাত্মার হাহাকারের গল্প। অভিমানী যুবকের কথামালায় প্রকাশ পেয়েছে একটি জাতির একটি গোষ্ঠীর অস্তিত্ব-সংকটের নিবিড় ছবি। প্রকৃতি-রহস্যময়তা-রোমান্টিকতা আর ভাবালুতার ভেতর থেকে তিনি নির্মাণ করতে চেয়েছেন প্রতিবাদের প্রবল কণ্ঠ। কী নরম অথচ কী জোরালো সে ধ্বনি!--
আর যেন না দেখি কার্তিকের চাঁদ কিংবা
পৃথিবীর কোনো হীরার সকাল,
কোনোদিন আর যেন আমার চোখের কিনারে
আকাশের প্রতিভা, সন্ধ্যানদীর অভিজ্ঞান আর
রাত্রি রহস্যের গাঢ় ভাষা কেঁপে না ওঠে,
কেঁপে না ওঠে পৃথিবীর দীপ্তিমান দিগন্তের তারা।
আগুনতাঁতা সাঁড়াশি দিয়ে তোমরা উপড়ে ফেলো আমার দুটি চোখÑ
সেই দুটি চোখ, যাদের প্রাজ্ঞ দীপ্তির মৃত্যুহীন, বিদ্রোহী জ্বালায়
দেখেছি নির্মম আকাশের নিচে মানবিক মৃত্যুর তুহিন-স্তব্ধতা,
দেখেছি বাস্তুহারা কুমারীর চোখের বাষ্পকণার মতো কুয়াশা-ঢাকা দিন,
দেখেছি মোহাম্মদ, যীশু আর বুদ্ধের বিদীর্ণ হৃদয়, তাঁদের রক্ত
ঝরে ঝরে পড়ছে সাদা সাদা অসংখ্য দাঁতের কুটিল হিংস্রতায়।
অতঃপর স্বপ্নঘেরা পরিক্রম-ভূমি পার হতে চান তিনি, প্রিয়তমার ‘নরম-সোনালি চুল’, তার বিষণœ-বিপন্ন রাত্রিপ্রহর যাপনের গ্লানিঘোর কিংবা পূর্ণিমার জ্যোৎস্নাপ্লাবন অথবা  মাতৃভূমির রক্তহীন অবশ শরীরের ভার পেছনে ফেলে। দেশ, আপনজন আর পৃথিবীর যাবতীয় মিথ থেকে কবি সঞ্চয় করতে থাকেন আত্মার শক্তি। বিদ্রোহ আর টিকে-থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন আত্মদানের অভিপ্রায়-প্রকাশের উজ্জ্বলতায়। কবির তীè উচ্চারণ : ‘তোমরা কুটি কুটি করে ছিঁড়ে ফেলো আমার হৃদপিণ্ডÑ/যে হৃদপিণ্ডে ঘন ঘন স্পন্দিত হচ্ছে আমার দেশের গাঢ় ভালোবাসা,/যে হৃদয়Ñ/মা’র পবিত্র আশীর্বাদের মতো/বোনের স্নিগ্ধ, প্রশান্ত দৃষ্টির মতো,/প্রিয়ার হৃদয়ের শব্দহীন গানের মতো/শান্তির জ্যোৎস্না চেয়েছিল পৃথিবীর আকাশের নিচে,/চৈত্রের তীব্রতায়, শ্রাবণের পূর্ণিমায়॥’

আত্ম-অভিমান শামসুর রাহমানের কবিতায় পাওয়া যায় না। তিনি এ জটিল-লোভনীয় পৃথিবী থেকে প্রস্থান করতে চেয়েছিলেন যীশুর মতো, মানুষকে ভালোবেসে। ‘নো এক্সিট’ কবিতায় লিখেছেন : ‘আমাকে যেতেই হবে যদি, তবে আমি/যীশুর মতন নগ্নপদে চলে যেতে চাই। কাঁধে/ক্রুশকাঠ থাকতেই হবে কিংবা কাঁটার মুকুট/মাথায় পরতে হবে, এটা কোনো কাজের কথা না। /এসব মহান/অলংকার আমার দরকার নেই। বাস্তবিক আমি/এক হাত নীল ট্রাউজারের পকেটে রেখে অন্য হাত নেড়ে নেড়ে/সিঁড়ি বেয়ে ‘আচ্ছা চলি, তা’হলে বিদায়’ ব’লে একটি উচ্ছিষ্ট/রাত্রি ফেলে রেখে/নির্জন পেছনে/অত্যন্ত নিভৃত নিচে, শিরদাঁড়াময়/নত্রটোলার পত্রপত্রালির ঈষৎ দুলুনি নিয়ে/খুব নিচে চলে যেতে চাই। ’ যীশু মানুষকে ভালোবাসতেন। দরিদ্রজন তাঁর বন্ধু ছিলো। তিনি রুটি টুকরো টুকরো করে, ‘এই আমার দেহ, একে গ্রহণ করো’ বলে বণ্টন করেছেন স্বজনের মধ্যে। যীশু রুটিকে মনে করতেন তাঁর চেতনার উচ্চারণের প্রতীক; বলতেন, যখন রুটির স্বাদ নেবে, সেই স্বাদের ভেতরেই পাবে আমাকে, পাবে আমার চেতনাকে। শামসুর রাহমানের কবিতায়ও যেন আমরা পাই তেমন স্বাদ। আর তিনি তাঁর প্রথম কবিতার বই (প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে, ১৯৬০)-এর নাম রাখতে চেয়েছিলেন ‘রূপালি স্নান’। সে অভিপ্রায় প্রকাশের অল্পকাল পরে অবশ্য বলেছিলেন বইটির নাম হবে ‘রুটি ও গোলাপ’। ‘রুটি’ শব্দটি সে সময় শামসুর রাহমানের চেতনায় গভীর রেখাপাত করেছিল। তাঁর সে উপলব্ধির গাঢ়তার প্রকাশ দেখি ‘রূপালি স্নান’ কবিতায় :
শুধু দু’টুকরো শুকনো রুটির নিরিবিলি ভোজ
অথবা প্রখর ধু ধু পিপাসার আঁজলা ভরানো পানীয়ের খোঁজ
শান্ত সোনালি আল্পনাময় অপরাহ্নের কাছে এসে রোজ
চাইনি তো আমি। দৈনন্দিন পৃথিবীর কাছে চাইনি শুধুই
শুকনো রুটির টক স্বাদ আর তৃষ্ণার জল। এখনো যে শুই
ভীরু-খরগোশ-ব্যবহৃত ঘাসে, বিকেলবেলার কাঠবিড়ালিকে
দেখি ছায়া নিয়ে শরীরে ছড়ায়-- সন্ধ্যা-নদীর আঁকাবাঁকা জলে
মেঠো চাঁদ লিখে
রেখে যায় কোনো গভীর পাঁচালি-- দেখি চোখ ভ’রে;

প্রথম কাব্যগ্রন্থে শামসুর রাহমান প্রেম আর প্রকৃতিতে মগ্ন ছিলেন। তখন তাঁর কবিতায় জীবনানন্দের প্রভাব ছিল বেশ; তিরিশের কাব্য-আবহাওয়া তখন ঠিক অতিক্রম করে ওঠেননি। ‘পুরনো প্রেমের কবিতার রোদে পিঠ দিয়ে’ বসে তিনি ভালোবাসার উত্তাপ মেখে নিচ্ছিলেন শরীরে আর ‘রসে-টুপটুপ নর্তকী’র নূপুরের প্রগাঢ় মদিরায় ভরে তুলছিলেন হৃদয়ের শূন্যতার থলি। ঝিঁঝির কোরাস, হরিণের নিবিড় খাদ্যগ্রহণ, আকাশে তারার উৎসব আর হাজার বছরের ফেলে আসা রাতের সঙ্গীতময়তায় রাহমান যেন খুঁজে পেয়েছেন প্রার্থনার এক ভাষা-- রুটির নিরিবিলি ভোজের; মানুষের খাদ্যনিরাপত্তার নিশ্চয়তার অপার আকুলতা।

কবিতাতৈরির আবেগ আর তা জনসমে প্রকাশের লজ্জা মনে লালন করে তিনি তখন অগ্রসর হচ্ছিলেন অস্পষ্ট মানুষের মেলায়; যেখানে, শেষবেলায়, গোধূলির রঙে প্রকৃতিই কেবল দিকহারা পথিকের আশ্রয়। মানুষের প্রাত্যহিক গমনাগমন; মোহগ্রস্তের মতো চলে যাওয়া কিংবা অহেতুক নিজেকে সুখী ভাববার মধ্যে আনন্দ-অন্বেষা কবিকে প্রবেশ করায় বিবশ বিভ্রান্তির জটিল জগতে। নগরজীবনের রূপকার এই আধুনিক কবি নিজ অস্তিত্ব ও পরিপার্শ্ব সম্পর্কে অসন্তুষ্ট এবং কিছুটা বিপন্ন ও বিব্রত। তবে ভাবালুতা, অতিকথন আর বাংলা কবিতা-ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় প্রলুব্ধ রাহমান, স্বপ্নবিলাসী-অসাবধানী-বোকা মানুষের ভিড়ে, নিজের অস্তিত্ব অনুভব করেন-- যেন তিনি সতর্ক এক পৃথিবী-পাহারাদার। তাঁর ভাবাবেগ--
তবু সান্ত্বনা : আকাশ পাঠায় স্বর্গ-শিশির
জোনাকি-মেয়েরা বিন্দু-বিন্দু আলোর নূপুরে ভ’রে দেয় মাঠ
গাঢ় রাত্তিরে বিষণ্ণ সুরে : তোমার রাজ্যে একা-একা হাঁটি,
আমি সম্রাট।
আশাভরা এই কবিতায় রাহমান নির্মাণ করেন লৌকিক সত্যাসত্য, নিসর্গের নির্মলতা, মৃত্যু নামক ভয়ংকর-বাস্তব আর শিশিরের জল কিংবা রূপালি প্রান্তের প্রসন্নতা-অবসন্নতা। চলে যাওয়া সত্যি; যেমন আসা। যতণ অবস্থান এই আলো-বাতাসঘেরা পরিচিত-পারিপার্শ্বে, ততণ তো আমরা আবশ্যিকভাবে যুক্ত খাদ্য-অন্বেষা ও গ্রহণ, অধিকারের যথার্থতা কিংবা প্রাপ্যতার সঠিক বণ্টন আর মানবতা প্রতিষ্ঠার অমোঘ-অঙ্গীকারে। যদিও কবি জানেন, আমাদের অগ্রগতি-- সভ্যতার অর্জন আদতে তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু নয়, তবু আশা ছাড়তে তিনি নারাজ। তাঁর ব্যর্থতা-অসহায়তা-আশাবাদিতার বর্ণিল-অনুভূতি :
আসন্ন ভোরে
দু’টুকরো রুটি
না-পাওয়ার ভয়ে শীতের রাতেও এক-গা ঘুমেই বিবর্ণ হই,
কোনো একদিন গাঢ় উল্লাসে ছিঁড়ে খাবে টুঁটি
হয়তো হিংস্র নেকড়ের পাল, তবু তুলে দিয়ে দরজায় খিল
সত্তাসূর্যে যেসাসের মা মেখে নিয়ে শুধু গড়ি উজ্জ্বল কথার মিছিল
হয়তো কখনো আমার ঠাণ্ডা মৃতদেহ ফের খুঁজে পাবে কেউ
শহরের কোনো নর্দমাতেই;-- সেখানে নোংরা পিছল জলের
অগুনতি ঢেউ
খাবো কিছুকাল।

প্রসঙ্গত, ইংল্যান্ডের টনি হ্যারিসনের (জন্ম ১৯৩৭), যিনি শ্রমজীবী  মানুষের কবি হিসেবে স্বদেশে এবং বহির্দেশে খ্যাত, রুটিসম্পর্কিত একটি কবিতার (একমুঠো ছাই) নির্মাণভাষ্য মনে করা যায়। হ্যারিসন কষ্টকে সৃজনশীলতার উৎসভূমি হিসেবে, যথার্থ অর্থে প্রয়োগ করতে সমর্থ হয়েছেন। যারা নিত্যদিন শ্রম বিক্রি করে, শরীরের ঘাম ঝরিয়ে, প্রতিভা আর শক্তির শক্ত দেয়ালকে ক্রমাগত করে তুলছে মজবুত আর আকর্ষণীয়, সেই অবহেলিত-অবমূল্যায়িত নিম্নবর্গের মানুষের অনুভূতির বাস্তবতার সাথে শামিল, কবিতাসৌকর্যের সতর্ক পাহারাদার ও লালনকর্তা, কবি টনি হ্যারিসন। জাগতিক ব্যস্ততা, অহেতুক তাড়াহুড়া অতিক্রম করে এক নিরাবেগ উপলব্ধির ভুবনে মানস-পরিভ্রমণের ম্যাসেজ নির্মিতি পেয়েছে কাবতাটিতে। তিনি লিখছেন :
এক মুঠো ছাই
যখন তার মাংসের তাল চুল্লির ভেতর চলে গেল
যেমন করে সে আজীবন ঝলসেছে রুটি।
মনে হল তার ছানিপড়া চোখ স্বর্গে মিশল
তার মৃত স্ত্রীর দৃষ্টির দ্যুতিসহ।
মুখ থেকে আলোর ছটা স্ত্রীর নাম নিতে চায়
‘ফোরেন্স’ নয়, ‘ফো’ নয়, শুধুই ‘ফোরী’--
কী করে তার ঠাণ্ডা জিহ্বা শিখা হয়ে জ্বলে?

স্বদেশ, মাতৃভাষা আর নিজস্ব অনুভূতির নির্জন ঘরে নীরব অবস্থিতি শামসুর রাহমানের-- যেন সাবধানী নিরাপত্তাকর্মী কোনো। মাতৃভূমি যখনই কোনো সমাজনৈতিক-রাজনৈতিক সমস্যায় পড়েছে, তখনই তিনি সজাগ অবস্থান নিয়েছেন কবিতায়-কণ্ঠস্বরে। মানুষের স্বাধীনতার স্পৃহাকে তিনি সমীহ করতে জানতেন। সাম্প্রদায়িকতা-স্বৈরাচারবিরোধী নাগরিক-আন্দোলন গড়ার প্রত্যয় আছে তাঁর কবিতায়। আন্দোলনকারী মানুষের আশা-আকাক্সা, আনন্দ-বেদনাকে তিনি ঘাতকদের জন্য অভিশাপবাণীতে পরিণত করেছেন। বিপন্ন মানবতার পাশে তিনি যেন শক্ত-সামর্থ্যবান-সাহসী সহকর্মী। মায়ের সম্ভ্রম আর মায়ের-বাবার ভাষার, দেশের বহুদিনের লালিত ঐতিহ্য আর অর্জিত ইতিহাসের আলোকসভায় তিনি তৈরি করতে চান সৃজনশীলতার পাটাতন। শুধু কথ্য নয়, লেখ্য এমনকি স্থিতি প্রাপ্ত, মর্যাদা প্রাপ্ত নির্মিত ভাষার-- বাংলা ভাষার ওপর আঘাত তিনি গ্রাহ্য করতে পারেননি। ‘আজন্ম’ সাথী মাতৃভাষা কবিকে দিনে দিনে, মুহূর্তে মুহূর্তে যে ‘স্বপ্নের সেতু’ গড়ে দিয়েছেন, তাতে ভর করেই তিনি পাড়ি দিচ্ছেন ক্রমাগত পৃথিবীর বিচিত্র যাত্রাপথ; সেই সেতু দিয়েই দেখা-না-দেখা যাবতীয় আনন্দ ও বিস্ময় ‘সুনন্দ জাহাজ’ ভরে তাঁর বন্দরে এসে ভিড় করে দিনরাত। রঙিন মাছের আশায় কিংবা ‘নক্সা কাটা কাগজ এবং বোতলের ছিপি ফেলে’ ‘রতœদ্বীপে’ পাড়ি দেবার বাসনায় কবি ‘ঘুমের বাগানে’ আহ্বান জানান কোনো পরিচিত কাঠবিড়ালিকে। ফেলে-আসা পাঠশালার স্মৃতিতে অনুভব করেন সবুজ সবুজ স্বপ্নচৈতন্য। ভাষাকে, বর্ণমালাকে শামসুর রাহমান স্থান দেন ‘আঁখিতারা’রূপে-- যে জেগে থাকে অনুণ, ‘যুদ্ধের আগুনে,/মারীর তাণ্ডবে,/প্রবল বর্ষায়/কি অনাবৃষ্টিতে,/বারবনিতার/নূপুর নিক্কণে,/বনিতার শান্ত/ঘৃণায় ধিক্কারে,/নৈরাজ্যের এলো-/ধাবাড়ি চিৎকারে,/সৃষ্টির ফাল্গুনে’। রাহমানের কিছু শক্তিশালী কবিতা ভাষা-সংগ্রাম সংগঠনের উত্তেজনা ও তেজকে ধারণ করে আছে। ভাষার জন্য, ভাষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য, বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে তাকে পরিভ্রমণের সুযোগ করে দেবার জন্য এক অসহায়-অশান্ত কবির হাহাকার :
নত্রপুঞ্জের মতো জ্বলজ্বলে পতাকা উড়িয়ে আছো আমার সত্তায়।
মমতা নামের পুত প্রদেশের শ্যামলিমা তোমাকে নিবিড়
ঘিরে রয় সর্বদাই। কালো রাত পোহানোর পরের প্রহরে
শিউলি শৈশবে ‘পাখী সব করে রব’ ব’লে মদনমোহন
তর্কালঙ্কার কী ধীরোদাত্ত স্বরে প্রত্যহ দিতেন ডাক। তুমি আর আমি,
অবিচ্ছিন্ন, পরস্পর মমতায় লীন,
ঘুরেছি কাননে তাঁর নেচে নেচে, যেখানে কুসুমকলি সবই
ফোটে, জোটে অলি ঋতুর সঙ্কেতে।

ভাষা নিয়ে রাজনীতি, মাতৃভাষা-ভাষাব্যবহারকারীদের ওপর নির্বিচারে চালানো নির্মমতা আর একটি ভাষার সমস্ত গৌরব-ঐতিহ্যে আঘাত হানার হিংস্রতা শামসুর রাহমান দেখেছেন কাছ থেকে। প্রতিটি রক্তবিন্দু দিয়ে উপলব্ধি করেছেন সে বেদনার যাতনা। মানুষের স্বাভাবিক বৃত্তি, মৌলিক অধিকার আর সহজভাবে চলতে থাকা জীবনে আছড়ে-পড়া অনাকাক্সিত অভিঘাত ঘা দিয়েছে কবির কোমল হৃদয়ে; তিনি প্রায়-দিশেহারা হয়েছেন মাতৃভাষার চরম দুর্দশার সময়ে। তাঁর ভাবনার প্রকাশ :
তোমাকে উপড়ে নিলে, বলো তবে, কী থাকে আমার?
উনিশ শো’ বায়ান্নোর দারুণ রক্তিম পুষ্পাঞ্জলি
বুকে নিয়ে আছো সগৌরবে মহীয়সী।
সে-ফুলের একটি পাপড়িও ছিন্ন হ’লে আমার সত্তার দিকে
কত নোংরা হাতের হিংস্রতা দেয়ে আসে।
এখন তোমাকে ঘিরে খিস্তি-খেউড়ের পৌষমাস!
তোমার মুখের দিকে আজ আর যায় না তাকানো,
বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা।
(বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা। )
ঊনসত্তরের অনভিপ্রেত অবিনাশী ডাকে যখন অগণন মানুষ সমবেত, তখন শামসুর রাহমান ভাবছেন জীবনের তরঙ্গভঙ্গের কাতর-আর্তনাদের বাণীভাষ্য; সিনেমা হলের কর্মচারী, সার্কাসের তরুণী, হাড্ডিসার বিত্তহীন কৃষক, মেঘনার প্রাত্যহিক মাঝি, চটকলের শ্রমিক, উদার মৃৎশিল্পী, করুণ কেরানি, তরুণ শিার্থী, নবিশী কবি-- সবাই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ায় তাঁর চৈতন্যলীন আধমড়া-স্বপ্ননত্রের স্পন্দনে। ফাল্গুনের রোদে তিনি দেখেন ঘরকে বাহির করা জীবনমুখী প্রবণতার নৃত্যচপল আনন্দ। লাঙল-ফসল-পাল-আগুনওম-শিস-শাড়ি-প্রতিবাদ-জলপান প্রভৃতির নিবিড় যাত্রাপথে মাঝে মাঝে যেন ইশারা জাগায়, সহপাঠিনীর চুল, প্রিয়ার রহস্যময় খোঁপা কিংবা হাসপাতালে আরোগ্য-আনত বিষণœ মুখ। মানবিক বাগানে বারবার হায়েনার থাবা কবিকে ‘আনন্দের রৌদ্র আর দুঃখের ছায়ায়’ শিহরিত করে প্রতিণ। তিনি দু’হাতে সাজান পুনরায় জেগে-ওঠা প্রতিবাদীচেতনার দলিলপত্র :
বুঝি তাই উনিশশো ঊনসত্তরেও
আবার সালাম নামে রাজপথে, শূন্যে তোলে ফ্যাগ,
বরকত বুক পাতে ঘাতকের থাবার সম্মুখে।
সালামের চোখ আজ আলোকিত ঢাকা,
সালামের মুখ আজ তরুণ শ্যামল পূর্ব বাংলা।
(ফেব্র“য়ারি ১৯৬৯)

ষাটের দশকে রাজনৈতিক টানাপড়েন, মানুষের প্রাত্যহিক সংগ্রাম-সংঘাত নতুন ভাষায় কথা বলে ওঠে শামসুর রাহমানের কবিতায়। তিনি দুচোখ মেলে দেখতে থাকেন, আত্মায় অনুভব করতে থাকেন, দ্রুত ঘটতে থাকা ঘটনাবলি। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান বাঙালি জীবনে এক বিশেষ চেতনাবিস্তারকারী ঘটনা। শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচারকে প্রতিরোধ করার জন্য আপামর জনতা সেদিন সোচ্চার হয়ে উঠেছিল। প্রাণ দিয়েছিল উদ্যমী তরুণ আসাদ। তার নামে ঢাকার মোহাম্মদপুরে, রাজপথে, গেইট নির্মাণ আর পথচারীর মুখে আসাদের নাম-উচ্চারণ সাধারণের বোধের অন্তরালে বহন করছে বাঙালি জাতিসত্তার ঐতিহ্যিক অনুভূতির মাহাত্ম্য। তেমনই স্বদেশনিবিড় উপলব্ধির কথামালা সাজিয়ে তোলেন স্বদেশের মাটির-প্রত্যাশার-প্রাপ্তির সার্বণিক সঙ্গী কবি শামসুর রাহমান :
ডালিম গাছের মৃদু ছায়া আর রোদ্দুর-শোভিত
মায়ের উঠোন ছেড়ে এখন সে-শার্ট
শহরের প্রধান সড়কে
কারখানার চিমনি-চুড়োয়
গমগমে এভেন্যুর আনাচে কানাচে
উড়ছে, উড়ছে অবিরাম
আমাদের হৃদয়ের রৌদ্র-ঝলসিত প্রতিধ্বনিময় মাঠে,
চৈতন্যের প্রতিটি মোর্চায়।
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা।
(আসাদের শার্ট)

রাহমান তাঁর কবিতায় গণমানুষের প্রাত্যহিক-রাজনৈতিক বিােভ এবং মিছিলের অগ্রবর্তী মানুষের আবেগ-অস্থিতির প্রাবল্য এঁকেছেন। তাঁর প্রজন্মের ভাষা তিনি নির্মাণ করতে পেরেছেন আবেগ আর বাস্তবতার বিরল-মিশ্র অভিনিবেশে। প্রাগ্রসরতা, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র প্রভৃতি তাঁর ভাবনাবিশ্বের বিশেষ বিশেষ প্রকোষ্ঠ।

কবি সৈয়দ শামসুল হক শামসুর রাহমানকে ‘স্বাধীনতার কবি’ অভিধায় ভূষিত করতে চান। কেননা, তাঁর কবিতায় জাতির আত্ম-জিজ্ঞাসার ভাষা নির্মিতি লাভ করেছে। রাহমানের কবিধর্ম হলো মানবতাবিরোধী কর্মযজ্ঞের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। যোগ্যতা অনুযায়ী মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তিনি ছিলেন সোচ্চার। আলোকিত মানবসভ্যতা বিনির্মাণ আর আধুনিকতার প্লাটফরমে শিল্পচর্চার বিষয়টি লালন করেছেন তিনি আমৃত্যু। পরাধীনতার- শোষণের গ্লানিমোচনের যে মানবিক আকাক্সা তিনি বর্ণনা করেছেন, তা একজন কথাকারিগরের আপন-অভিব্যক্তিরই বহির্প্রকাশ মাত্র। স্বাধীনতার জন্য আকুল অপো, প্রজন্মপ্রহর আর অর্থনৈতিক স্থিতি-অস্থিতির কালযাপনের কান্তি শামসুর রাহমান অনুভব করেন ‘শূন্য থালা হাতে’ ‘পথের ধারে’ বসে-থাকা ‘হাড্ডিসার এক অনাথ কিশোরী’র উপলব্ধির গাঢ়তায়। কবি বাঙালি জাতির মনন-চেতনকে আঁকছেন :
তোমার জন্যে,
সগীর আলী, শাহবাজপুরের সেই জোয়ন কৃষক,
কেষ্ট দাস, জেলেপাড়ার সবচেয়ে সাহসী লোকটা,
মতলব মিয়া, মেঘনা নদীর দ মাঝি,
গাজী গাজী ব’লে যে নৌকা চালায় উদ্দাম ঝড়ে
রুস্তম শেখ, ঢাকার রিকশাওয়ালা, যার ফুসফুস
এখন পোকার দখলে
আর রাইফেল কাঁধে বনে-জঙ্গলে ঘুরে-বেড়ানো
সেই তেজী তরুণ যার পদভারে
একটি নতুন পৃথিবী জন্ম হ’তে চলেছে--
সবাই অধীর প্রতীা করছে তোমার জন্যে, হে স্বাধীনতা।
(তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা)

সেই প্রত্যাশিত স্বাধীনতার উপমান তাঁরই কবিতায় কত-না বিপুল-ব্যাপৃত। ‘রবি ঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান’ আর নজরুলের ‘সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা’ সৃজন-ব্যাকুলতায় জনতাকে যেন হাতড়ে ফিরতে হয় স্বাধীনতার স্বাদ। মাতৃভাষার মর্যাদা রার সংগ্রাম, প্রাপ্তি-প্রত্যাশায় নিবিড় প্রতিবাদের ঝড়, বীজ বুনে ফসলের প্রত্যাশায় নীরবে প্রহর গুনতে-থাকা কৃষকের অনাগত প্রসন্ন মুখ কিংবা গ্রাম্য কিশোরীর অবাধ গতিবিধি-- সবই যেন কেবল স্বাধীনতারই অন্য অন্য নাম। কৃষিনির্ভর উৎপাদনমুখী বাংলাদেশে কবি দেখতে চান অফুরন্ত শস্যরাজি আর শস্যকর্তকের সাংবাৎসরিক উৎসবঘেরা জীবন। স্বাধীনতার মানে, কবি বুঝতে চান, বোঝাতে চান, শ্রমিক-মজুরের স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন, মুক্তিযোদ্ধার স্বপ্ন-সফলতা আর শিা ও প্রগতির নিখাদ সোজা পথ। তিনি লেখেন :
স্বাধীনতা তুমি
বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিার্থীর
শাণিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ।
স্বাধীনতা তুমি
চা-খানায় আর মাঠে-ময়দানে ঝোড়ো সংলাপ।
(স্বাধীনতা তুমি)
প্রকৃতির নির্মলতা-স্বাভাবিকতা, পরিবার ও সমাজের নীতিপ্রীতি-ধর্মযাপন, মায়ের আনন্দ, বোনের খুশী, সাফল্যের পথে বন্ধুর এগিয়ে চলা-- সবকিছুর ভেতরে লুকিয়ে থাকে ঝিনুকের মোড়কে থাকা মুক্তার মতো সম্ভাবনা। শামসুর রাহমান মায়ের শুকাতে- দেওয়া শাড়ি আর বোনের মেহেদিরাঙা হাতের আহ্বানে দেখতে পান শান্তিনিবিড় মাতৃভূমি। বাবার প্রার্থনারত হাতের তালুতে ঝুলতে থাকা থোকা থোকা স্বপ্ন বুনতে চান তিনি স্বাধীন দেশের উর্বর মাটিতে। আর ঘরে ঘরে নির্মাণ করতে চান অফুরন্ত শান্তির সুবাতাস। তাঁর চিন্তাভাষ্য :
স্বাধীনতা তুমি
গৃহিণীর ঘন খোলা কালো চুল,
হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম।
স্বাধীনতা তুমি
খোকার গায়ে রঙিন কোর্তা,
খুকীর অমন তুলতুলে গালে
রৌদ্রের খেলা। (ওই)

স্বাধীনতা মানে যা ইচ্ছা তাই করা নয়; তারও আছে সীমারেখা, রয়েছে মাপকাঠি। প্রাপ্তির স্বস্তি ও আনন্দ প্রকাশে আমরা যেন দিশেহারা হয়ে না পড়ি; সীমানা অতিক্রম না করি সে বিষয়ে কবি শামসুর রাহমান আমাদের সতর্ক করে দিয়েছেন। নীড়ের ঠিকানা, তার স্থির অবস্থিতি, অনুভূতির গীতলতা আর অর্জনের অভিজ্ঞতা আমাদেরকে স্বাধীনতার স্বপ্নপূরণে যে সহায়তা ও নিশ্চয়তা প্রদান করে, তার মাহাত্ম্য অনুধাবন করতে কবি যুগিয়েছেন চিন্তাশক্তির খোরাক। কবিতার স্বপ্নময়তা আর রীতিবদ্ধতার ফ্রেমে সাজিয়ে তোলেন কবি স্বাধীনতার স্বাদ :
স্বাধীনতা তুমি
বাগানের ঘর, কোকিলের গান,
বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা,
যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা। (ওই)

ভাষার স্বাধীনতা আর কবিতার মুক্তিই যে মানবজীবনের সকল ব্যাপ্তি-প্রাপ্তির মূল উৎসভূমি-- এই চেতনার চিন্তাভাষ্য সাজিয়েছেন তিনি ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতায়। কবিতাটি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রচিত। কবিতাটিতে তিনি স্বাধীনতাকে নানা চিত্রকল্পে নামাঙ্কিত করতে চেয়েছেন; বীরত্বযুক্ততা, রাজনৈতিক সম্পৃক্তি, গ্রাম্য-অনুষঙ্গ, পাখির গান-ঘর-বাগানের আশ্রয়-আকর্ষণ আর স্বস্তিতে সৃজনলেপনের কবিতাখাতার প্রসঙ্গাদি স্থান পেয়েছে তাঁর কল্পনারাজিতে।

জাতির বিপর্যয়, দুঃশাসন, অবরুদ্ধ জীবনের যন্ত্রণা শামসুর রাহমানের বোধ আর দায়গ্রহণের মানসিক শীতল-উর্বর ভূমিতে গড়েছে কবিতাসৃজনের শান্ত পরিসর। তিনি মানুষের কল্যাণ আর সুস্থির অবস্থান ভাবনার কবি; শান্তি আর স্বস্তি নির্মাণের নিবিড় ভাষ্যকার। কবিতাযাত্রায় তাঁর কোনো কান্তি নেই, আছে সুখলাগা-দোললাগা উপলব্ধির আভাস; আর ওই অনুভব কবিতাপাঠকের হৃদয়-দরোজায় পৌঁছে দেবার প্রচেষ্টা-শিহরণ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫, ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।