শাহবাগ থেকে বাংলা একাডেমী ঘুরে: শেষপর্যন্ত পৌঁছুতে পারলাম শাহবাগ! সারা ঢাকাই যেন বৈশাখী উৎসবের রঙে পায়ে হাঁটা পথ। ফার্মগেট থেকে হেঁটে যখন জাতীয় জাদুঘরের সামনে থামি, তখন আমি যেন মানুষের ঢলে এক হারানো মানুষ।
আমাকে দেখে যেন মুচকি হাসে জাদুঘরের সামনের গাছে ফোটা কাঠগোলাপ আর জারুল ফুল।
চারদিকে কেবল হৈ-হল্লা আর বাঁশির প্যাঁ-পোঁ শব্দ, উল্লসিত মানুষের ছাড়া গলার গান। তরুণ-তরুণী, ছেলে-শিশু-বুড়ো সবার গায়েই রঙ-বেরঙের পোশাক। এবারের মতো আগের বছরগুলিতে বাঁশির এতো প্যাঁ-পো শব্দ শুনিনি।
রাস্তার দুপাশে বসেছে বিভিন্ন রকমের সরবত আর ভ্রম্যমাণ খাবারের দোকান- সেগুলোতে পান্তাভাত, খিচুড়ি, মুরালি, বাতাসা, রকমারী পানীয়, শুকনা বরই, বেতফল, পেয়ারা ও আমের লোভনীয় আয়োজন। আছে কাঁচা আমের পসরাও।
হাতে হাতে দেখা ব্যাগ- মুখোশ, পুরনো বই, বাঁশি, ঢোল, ডুগডুগি, একতারাসহ নানা জিনিস।
বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের স্পন্সরে ছোট ছোট মঞ্চ সাজিয়ে গানের আসর বসেছে। কোথাও হচ্ছে দেশের গান, লালনগীতি, কোথাওবা রবীন্দ্র সঙ্গীত বা নজরুল গীতি। আছে ব্যান্ডসঙ্গীতও। বিনে পয়সায় বিজ্ঞাপন সম্বলিত হাতপাখা আর ক্যাপ বিলাচ্ছে কোন কোন কোম্পানি।
জাদুঘর থেকে শুরু করে বাংলা একাডেমী পর্যন্ত পুরোটাই বৈশাখের মেলা।
২.
পুরো মেলা পার হয়ে যখন বাংলা একাডেমীতে প্রবেশ করি, আমার কাছে মনে হয় মেলার পেটের মধ্যে যেন বসেছে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মেলা। বাংলা একাডেমীর ভেতরের পুরনো চেহারা বদলে গেছে। এখানে চলছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পী সংস্থা (বিসিক) এবং বাংলা একাডেমীর যৌথ উদ্যোগে দশ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা। নজরুল মঞ্চের সামনেই সারি সারি চেয়ারে মেলায় আসা মানুষ।
শনিবার সকাল ৮টায় বাংলা একাডেমীর নজরুল মঞ্চে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সমবেত সংগীতের আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় একাডেমীর বর্ষবরণ। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। তারই সমাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা দেন নিসর্গবিদ অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা।
নববর্ষের এ অনুষ্ঠানে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এগারোজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে বাংলা একাডেমী ফেলোশীপ ২০১২ দেওয়া হয়। এঁরা হলেন- অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার, কবি শেখ হাফিজুর রহমান, ভাষা-সংগ্রামী তোফাজ্জল হোসেন, কমান্ডার (অব.) আবদুর রউফ, নূরুল ইসলাম, অধ্যাপক সোনিয়া নিশাত আমিন, লোকশিল্পী সাইদুর রহমান বয়াতি, ড. মীজানূর রহমান শেলী, খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ।
ফেলোশীপপ্রাপ্তদের হাতে ফুল, ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন বাংলা একাডেমীর সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ও মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।
নজরুল মঞ্চের পাশেই বৈশাখী মেলার সারি সারি দোকানে বিভিন্ন পাঞ্জাবি, শাড়ি, থ্রি-পিস, ফতুয়া, গামছা, বাঁশের ঝুঁড়ি, ব্যাগ, শো-পিচসহ নানা সামগ্রী।
এছাড়া এ মেলার মধ্যে রয়েছে নাগরদোলা ও গ্রামের ঐতিহ্যবাহী পুতুল নাচ। ৩০ টাকায় টিকিট কেটে অনেককেই দেখা যায় পুতুল নাচের আসরে ঢুকতে। পুরো বাংলা একাডেমী ঘুরে মনে হয় এখানকার মেলা যেন আমাদের ঐতিহ্যকেই হাতছানি দিয়ে ডাকছে। দর্শনার্থীরাও কেনাকাটায় আগ্রহী হচ্ছেন। জমে উঠছে বিকিকিনি।
এছাড়াও এখানে বাংলা একাডেমীতে চলছে বইয়ের আড়ং। এতে বাংলা একাডেমীর বিভিন্ন বই ৩৫-৬০ ভাগ ছাড়ে বিক্রি হচ্ছে।
বাংলা একাডেমীর এ বৈশাখী মেলা চলবে প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ৮ টা পর্ন্ত। ২৩ এপ্রিল মেলা শেষ হবে।
বাংলাদেশ সময় : ১৯০০ ঘণ্টা, ১৯০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১২
সম্পাদনা: জাকারিয়া মন্ডল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর