ঢাকা, সোমবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

টেকসই বেড়িবাঁধসহ ২১ দফা দাবিতে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৫ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০২০
টেকসই বেড়িবাঁধসহ ২১ দফা দাবিতে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন .

সাতক্ষীরা: উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধসহ ২১ দফা দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটি।

মঙ্গলবার (৯ জুন) সাতক্ষীরা কালেকটরেট চত্বরে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।

মানববন্ধনের বক্তারা বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে সম্প্রতি সাতক্ষীরাসহ বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত হানে।

সরকারসহ স্থানীয় প্রশাসনের নানামুখী উদ্যোগের কারণে ঝড়ে ব্যাপক জীবনহানির ঘটনা এড়ানো গেলেও সহায়-সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলায় বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফলে ভাঙন এলাকার হাজার হাজার মানুষের সহায় সম্পদ এখনো পানির মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে। সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ তাদের দিন অতিবাহিত করছে।

এমন দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্যে গত ২ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ এর নির্বাহী কমিটি একনেকের বৈঠকে সাতক্ষীরা শহর ও সংলগ্ন এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে ৪৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার ১, ২, ৬-৮ এবং ৬-৮ (এক্সটেনশন) এর নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে।

এর আগে এই এলাকার জলাবদ্ধতা সমস্যা নিয়ে 'সিজিআইএস' নামক একটি প্রতিষ্ঠান সরেজমিনে সমীক্ষা চালায় এবং জনসাধারণের মতামত গ্রহণ করে।

একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পে সেই সমীক্ষা ও জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটলে এই প্রকল্পের মাধ্যমে সাতক্ষীরা শহরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হবে বলে বক্তারা উল্লেখ করেন। বক্তারা এ জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।  
বক্তারা আরো বলেন, উক্ত প্রকল্পটি অনুমোদনের পর একনেকের সভা শেষে মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে সাতক্ষীরার বেড়িবাঁধ ভেঙে সমুদ্রের লবণাক্ত জোয়ারের পানি কৃষি এলাকায় ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির প্রেক্ষিতে জরুরি ভিত্তিতে এই প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।

এ প্রসঙ্গে বক্তারা আরো বলেন, সাতক্ষীরা জলাবদ্ধতা সমস্যা দীর্ঘদিনের। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আম্পানে বেড়িবাঁধ ভেঙে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেটি এই প্রকল্প এলাকার নয়। বাঁধ ভেঙে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনি, আটুলিয়া, শ্রীউলা, প্রতাপনগর, খাজরাসহ সংলগ্ন এলাকা। ফলে বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে স্পষ্ট করা না হলে আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত সহানুভূতি থেকে তারা বঞ্চিত হবে।

বক্তারা আরো বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ মে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় আইলার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালের ২৩ জুলাই সাতক্ষীরার শ্যামনগরে আসেন। তিনি দুর্গত মানুষের প্রতি সহমর্মিতা জানান। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার ঘোষণা দেন। তিনি বাঁধ কেটে, পাইপ ঢুকিয়ে লোনা পানি তোলা বন্ধ করারও নির্দেশ দেন। কিন্তু দীর্ঘ ১১ বছরে প্রধানমন্ত্রীর সেই ঘোষণা বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফলে ঘূর্ণিঝড় আম্পান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে অনেক কম গতিতে বাংলাদেশে আঘাত হানলেও বেড়িবাঁধের ক্ষতি ভারতের চেয়ে বাংলাদেশেই বেশি হয়েছে।

সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে বক্তারা সাতক্ষীরা জেলার উন্নয়নে ২১ দফার বাস্তবায়নসহ জরুরি ভিত্তিতে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের দাবি জানান।

এসব দাবির মধ্যে রয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগকে মাথায় রেখে স্থায়ী, মজবুত ও টেকসই বেড়িবাঁধ পুনঃনির্মাণ করা, বাঁধের নদীর সাইডে পর্যাপ্ত জায়গা রাখা এবং সেখানে বৃক্ষরোপণ করা। লোকালয় সাইডেও বেড়িবাঁধকে ঘেরের বাঁধ হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করা এবং বেড়িবাঁধ ও ঘেরের বাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে বৃক্ষরোপণ করা। যেসব স্থানে বারবার বাঁধ ভাঙছে সেইসব স্থান চিহ্নিত করে সেখানে ব্লকের মাধ্যমে কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণ করা। বাঁধ নির্মাণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব জমি না থাকলে ক্ষতিপূরণ দিয়ে জমি অধিগ্রহণ করা। বাঁধের নিচে ১০০ ফুট, উপরে ৩০ ফুট এবং উচ্চতা ৩০ ফুট করা। বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জরুরি তহবিল গঠন ও বাঁধ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকারকে সম্পৃক্ত করা ও বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে সবধরনের দুর্নীতি বন্ধ করা।

বক্তারা আরো বলেন, উপকূলীয় সকল মানুষের খাবার পানির টেকসই ও স্থায়ী সমাধান করতে হবে। অন্যান্য প্রাণিকূলের জন্য মিষ্টি পানির আধার গড়ে তুলতে হবে। দুর্যোগ প্রবণ এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্রসহ মাটির কেল্লা তৈরী করতে হবে। এ বছর বর্ষা মৌসুমে সাতক্ষীরা শহরসহ পাশ্ববর্তী এলাকায় যাতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি না হয় সেজন্য দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি-ঘর নির্মাণে বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই সরকারি সহায়তা প্রদান করতে হবে।

বক্তারা চিংড়িসহ অন্যান্য ফসল ও আমসহ মৌসুমি ফলের ক্ষয়ক্ষতির শিকার চাষীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান দ্রুত সংস্কার করার দাবি জানান।

মানববন্ধন থেকে আগামী ১৫ জুন বেলা ১১টায় মানববন্ধনসহ প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এছাড়া জেলা প্রশাসকের নিকট বিভিন্ন দাবি-দাওয়া সম্বলিত স্মারকলিপি পেশ করা হয়।

জেলা প্রশাসকের অনুপস্থিতিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. বদিউজ্জামান স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেন।

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক আনিসুর রহিম। সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল হামিদ, অ্যাড. শেখ আজাদ হোসেন বেলাল, মধাব চন্দ্র দত্ত, অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, আনোয়ার জাহিদ তপন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদর উপজেলা কমান্ডার হাসানুর ইসলাম, সিপিবি নেতা আবুল হোসেন, জাসদের পাপিয়া আহমেদ, বাংলাদেশ জাসদের প্রভাষক ইদ্রিশ আলী, বাসদের নিত্যানন্দ সরকার, জেএসডির সুধাংশু শেখর সরকার, ওয়ার্কার্স পার্টির মকবুল হোসেন, বঙ্গবন্ধু পেশাজীবী পরিষদের সভাপতি আল মাহামুদ পলাশ, সাধারণ সম্পাদক প্রবীর মুখার্জি, মুনসুর রহমান, রঘুনাথ খাঁ, মনির উদ্দিন, লিডার্সের মোহন কুমার মণ্ডল, পানি কমিটির মনিরুজ্জামান জোয়াদ্দার, চুপড়িয়া মহিলা সমিতির মরিয়ম মান্নান, উদীচীর সিদ্দিকুর রহমান, তপন কুমার শীল, আবুল কালাম আজাদ ও আলী নুর খান বাবলু।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০২০
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।