ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

উচ্চ আদালতেও ন্যায়বিচার প্রত্যাশী নুসরাতের পরিবার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২০
উচ্চ আদালতেও ন্যায়বিচার প্রত্যাশী নুসরাতের পরিবার

ফেনী: ১০ এপ্রিল ২০১৯, সোনাগাজী পৌর শহরের উত্তর চরচান্দিয়া এলাকার নুসরাত জাহান রাফির বাড়ির চিত্র যেমনটা ছিল। ঠিক এক বছর পরেও আছে প্রায় তেমনটাই। বাড়ির সামনে আজও রয়েছে পুলিশ পাহারা। পুরো পরিবারটিকে এখনও গ্রাস করে আছে স্বজন হারানোর শূন্যতা। মেয়ের জন্য মায়ের আহাজারি। বোনের জন্য ভাইয়ের কান্না আজও থামেনি। এ শোক বুকে চেপেই তারা অপেক্ষা করছে আসামিদের রায় কার্যকরের খবর শুনতে। তাকিয়ে আছে উচ্চ আদালতের দিকে। 
 

সোনাগাজীর আলোচিত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির মৃত্যুবার্ষিকী ১০ এপ্রিল। ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষার আররি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে গেলে হল থেকে ডেকে নিয়ে পাশের ভবনের তৃতীয় তলার ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের বিরদ্ধে দায়েরকৃত মামলা তুলে নিতে রাজি না হওয়ায় তাকে গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে হত্যার চেষ্টা চালায়।

এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। চার দিন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় মৃত্যু হয় রাফির। ১১ এপ্রিল বিকেলে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে সোনাগাজী মো. ছাবের সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নামাজে জানাজা শেষে তাকে সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। সেই কবরেই চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছে রাফি।

মৃত্যুবার্ষিকীর দিন তার বাড়িতে গেলে দেখা যায় সুনশান নিরবতা। নুসরাতের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তায় তিনজন পুলিশ সদস্য বাড়ি পাহারায় রয়েছেন।

নুসরাতের মা শিরিনা আক্তার বলেন, আমরা বিচারিক আদালতে ন্যায় বিচার পেয়েছি। শুনেছি উচ্চ আদালতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা আপিল করেছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির কাছে আসামিদের রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানাচ্ছি।  

আবেগে আপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, আজ একটি বছর আমি আমার মেয়ের কণ্ঠে মা ডাকটি শুনতে পাই না। রাতে ঘুম হয় না।  

কবর জেয়ারত করছে নুসরাতের ভাই নোমান। মামলার বাদী নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, আমরা বিচারিক আদালতে ন্যায়বিচার পেয়েছি। উচ্চ আদালতেও আমরা ন্যায়বিচার প্রত্যাশী।  

নুসরাতের ছোট ভাই রাশেদ তার ফেসবুক ওয়ালে লেখেন, দেখতে দেখতে একটি বছর পার হয়ে গেল। যদিও এ ৩৬৫ দিন আমাদের কাছে ছিল ৩৬৫টি রক্তগঙ্গা পাড়ি দেওয়ার সমান।

২০১৯ সালের ২৭ মার্চ নিজ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলার যৌন নিপিড়নের শিকার হন রাফি। ওই ঘটনায় তার মা বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজকে একমাত্র আসামি করে মামলা দায়ের করেন।  ৩ এপ্রিল খুনিরা সিরাজের সঙ্গে কারাগারে পরামর্শ করে এসে ৪ এপ্রিল মাদ্রাসার ছাত্রাবাসে নুসরাতকে খুন করার পরিকল্পনা নেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৬ এপ্রিল নুসরাত মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে খুনিরা পরিকল্পিতভাবে সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে নুসরাতকে হত্যার চেষ্টা চালায়। ঘটনাস্থল থেকে নুসরাতকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর তাকে স্থানান্তর করা হয় ফেনী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে। অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হওয়ায় সেখান থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। এ ঘটনায় নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ এপ্রিল মামলা দায়ের করেন। এদিকে ১০ এপ্রিল মারা যায় নুসরাত।

এ মামলায় ২৮ মে অভিযোগপত্র দাখিলের পর ২০ জুন অভিযোগ গঠন করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। পরে সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষে ৩০ সেপ্টেম্বর আদালত রায়ের জন্য ২৪ অক্টোবর নির্ধারণ করেন। মামলাটিতে মাত্র ৬১ কার্যদিবসে ৮৭ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্ততর্ক গ্রহণ করা হয়। ২৪ অক্টোবর রায়ে ১৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ। পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেন।  

বাদীপক্ষের আইনজীবী এম শাহজাহান সাজু জানান, ইতোমধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক (মামলার যাবতীয় নথি) ছাপানো শেষ করা হয়েছিল। পরে প্রয়োজনীয় কাজ শেষে শুনানির জন্য মামলাটি প্রধান বিচারপতি বরাবর উপস্থাপন করা হয়। আপিল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য বেঞ্চ গঠন করেছেন প্রধান বিচারপতি। বিচারপতি সৌমেন্দ্র সরকার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে এ মামলার শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। করোনা ভাইরাসের সংকটময় পরিস্থিতি কেটে গেলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মামলাটির শুনানি হবে ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২০
এসএইচডি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।