ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

করোনা সঙ্কটে বিশেষ প্রস্তুতি নেই দুই সিটির

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০২০
করোনা সঙ্কটে বিশেষ প্রস্তুতি নেই দুই সিটির

ঢাকা: দিন যতই যাচ্ছে, ততই বাড়ছে দেশে করোনা আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা। সামনের দিনগুলো, বিশেষ করে এপ্রিল মাস ব্যাপক ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশেষ কোনো প্রস্তুতি নেই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের। আপাতত জনগণের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের যোগান দেওয়াই মূল লক্ষ্য এ দুই করপোরেশনের কাছে।

যদিও করোনা পরিস্থিতিতে নিজেদের মতো বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর (ডিএনসিসি) ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এর মধ্যে সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে জীবাণুনাশক স্প্রে করা, দরিদ্র-অসহায়দের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ ও হটলাইন নম্বর চালু করা অন্যতম।


 
কিন্তু এই যথেষ্ঠ নয়। ইতোমধ্যেই করোনার প্রকোপে দুই সিটি করপোরেশনের আওতাধীন প্রায় ৫২টি এলাকা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। সামনের দিনগুলো নিয়ে আছে ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। বড় হতে পারে লকডাউন হওয়া এলাকার তালিকা।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন কোনো বিশেষ পদক্ষেপ বা আগাম প্রস্তুতির পরিকল্পনা চলছে কি না, প্রশ্ন ছিল দুই মেয়রের কাছে। তবে উল্লেখযোগ্য নতুন কিছু পাওয়া যায়নি তাদের উত্তরে। তাদের মতে, মূল দায়িত্ব স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের হাতে।
 
এ ব্যাপারে ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাইদ খোকনের কাছে জানতে চাইলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এখন মাত্র সমস্যার শুরু। বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে কথা বলে যতোটুকু বুঝতে পেরেছি, আমরা এখন সমস্যার প্রাথমিক পর্যায়ে আছি। আমাদের পক্ষ থেকে জনগণকে সাহায্য করার ব্যাপারটা আছে। কর্মহীন হয়ে পড়া প্রায় ৫০ হাজার শহরবাসীর এক মাসের খাদ্যসামগ্রী সরবরাহের কাজ আমরা করছি, সচেতনতার কাজ করছি। প্রধান সড়ক, অলিগলিতে জীবাণুনাশক ছেটানোর কাজ করছি। তবে করোনার ‘কেইস ম্যানেজমেন্ট’ বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য লকডাউন করা হচ্ছে, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী করছে। কেইস ম্যানেজমেন্ট তো মূলত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করছে।

যেসব এলাকা লকডাউন হচ্ছে, সেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এবং সেবা যেন অব্যাহত থাকে আমরা সেই ব্যাপারগুলো দেখছি। যারা মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত, যাদের জন্য সামনে এসে ত্রাণ বা খাদ্যসামগ্রী নেওয়া বিব্রতকর, আমরা তাদের জন্য দুটি হটলাইন চালু করেছি। এগুলোতে এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ১৭৪ নাগরিক ফোন করে খোঁজখবর নিয়েছেন এবং ২ হাজার ৫৭৩ জন খাবার সংগ্রহে নিবন্ধন করেছেন। তাদের মাঝে ১ হাজার ৫৮৭ জনের বাসায় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। বাকি ৯৮৬ জনের বাসায় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কাজ প্রক্রিয়াধীন।
 
সামনের আশঙ্কাপূর্ণ দিনগুলোতে বিশেষ কোনো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ডিএসসিসি নেবে কি না, জানতে চাইলে খোকন বলেন, এখানে কেইস ম্যানেজমেন্টের কোনো বিকল্প নেই, অর্থ্যাৎ আক্রান্তদের চিকিৎসা। এটা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করছে এবং করবে। কিন্তু চিকিৎসকরা সেভাবে চিকিৎসা করছেন না। তাদের সহযোগীতা সেভাবে নেই, যেভাবে আশা করা হয়েছিল। অনেক হাসপাতালে রোগী নেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু আমরা জনগণকে সচেতন করার কাজ করছি। এ মুহূর্তে ঘরে থাকার কোনো বিকল্প নেই। স্টে হোম, স্টে সেফ। সবাইকে সবার কাজ করতে হবে। এভাবেই ক্ষয়ক্ষতি যতোটা হ্রাস করা যায়।  
 
এদিকে দক্ষিণের মেয়রের বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি শোনা যায় উত্তরের প্যানেল ও ভারপ্রাপ্ত মেয়র জামাল মোস্তফার কণ্ঠে। এসব প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মূলত কাজটি হচ্ছে, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং প্রশাসনের। আমরা সবাইকে সতর্ক এবং সচেতন রাখতে কাজ করছি, বিভিন্ন স্থান পরিষ্কার রাখতে জীবাণুনাশক স্প্রে করছি। প্রতিটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলররা এসব কাজের তদারকি করছেন।
 
সিটি করপোরেশনের বাজারগুলোতে সামাজিক দূরত্ব না মানার আশঙ্কা আছে, এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জামাল মোস্তফা বলেন, আমরা সবাইকে সতর্ক করছি, যেন বেশি ভিড় করে তারা কেনাকাটা না করেন। এ জন্য পুলিশকেও বলা হয়েছে। বাজারগুলোও নির্দিষ্ট সময় খোলা থাকবে। ওই সময়ের মধ্যে কেনাকাটা করতে হবে।
 
লোক সমাগম এড়াতে বিভিন্ন জায়গায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা থেকে নগরবাসীকে বিরত থাকার আহ্বান জানান ডিএনসিসির প্যানেল মেয়র বলেন, পথে পথে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে, এমন সংবাদ শুনে অনেক মানুষই ঘরে না থেকে পথে বের হচ্ছেন। এ ব্যাপারে আমরা একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করবো, যেন নগরবাসী এমন না করেন। কারণ এখান থেকেও করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। যারা ত্রাণ দেবেন, তারা যেন গ্রহীতার বাসা-বাড়িতে, বস্তি হলে বস্তিতে গিয়ে দিয়ে আসেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০২০
এসএইচএস/এইচজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।