ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রোহিঙ্গা শিবিরে অবাধ ইন্টারনেট চায় ৫০ সংস্থা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০২০
রোহিঙ্গা শিবিরে অবাধ ইন্টারনেট চায় ৫০ সংস্থা

ঢাকা: কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ বন্ধ করা এবং চলমান মোবাইল ইন্টারনেট বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলা চিঠি দিয়েছে আর্টিকেল নাইনটিনসহ ৫০টি মানবাধিকার সংস্থা।

শুক্রবার (০৩ এপ্রিল) আর্টিকেল-১৯ থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা কোভিড-১৯ মহামারি বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে এবং শরণার্থী, মানবিক সহায়তাকর্মী ও বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের জীবন বাঁচানোর জন্য মোবাইল এবং ইন্টারনেট যোগাযোগের মাধ্যমে তথ্যে অবাধ অভিগমন/প্রবেশের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেছে।

চিঠিতে বলে, মহামারির বিস্তারকালে এই বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের কেবল হালনাগাদ ও সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য নির্দেশিকা দ্রুত গ্রহণ এবং দেওয়া-নেওয়ায়ই সক্ষম করবে না; কমিউনিটি লিডারদের সঙ্গে সমন্বয়েও সহায়তা করবে। মানবাধিকার এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষার স্বার্থে চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা শরণার্থী, স্থানীয় জনগোষ্ঠী এবং মানবিক সহায়তাকর্মীরা যাতে একইভাবে মোবাইল এবং ইন্টারনেট পরিষেবায় অবাধে প্রবেশ করতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে।

আর্টিকেল নাইনটিনের বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন, নিরাপত্তার জন্য ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা শরণার্থীদের যোগাযোগ ও তথ্যে অবাধ অভিগমন/প্রবেশ করার ক্ষমতা সীমিত করেছে। ইন্টারনেটে বিধিনিষেধের কারণে পুরোপুরি সচেতনতা ছড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সেখানে কোভিড-১৯ মহামারিটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে।

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সিমকার্ড সংগ্রহে বাধা দিয়ে আসছে এবং টেলিযোগাযোগ অপারেটরদের মাধ্যমে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে ইন্টারনেট কভারেজ সীমিত করার নির্দেশ জারি রেখেছে।

কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাহবুব আলম তালুকদারের মতে, কর্তৃপক্ষ সেপ্টেম্বরের পর থেকে শরণার্থীদের কাছ থেকে ১২ হাজারেরও বেশি সিমকার্ড বাজেয়াপ্ত করেছে এবং শরণার্থীরা জানিয়েছেন যে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ মোবাইল ফোন ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেছে।

যারা কোভিড-১৯ এর উপসর্গগুলো অনুভব করছেন, তাদের প্রতি সরকারের নির্দেশনা হলো, তারা যাতে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) হটলাইনে যোগাযোগ করেন। সরকারের এই পরামর্শের আলোকেই বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া উচিত। কেননা, ফোন বা সিমকার্ড ছাড়া এই নির্দেশনা মেনে চলা অসম্ভব। এছাড়াও মোবাইল এবং ইন্টারনেট পরিষেবায় অবাধ প্রবেশ না থাকলে মানবিক সহায়তাকর্মী ও অন্যরা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জরুরি তথ্য ব্যক্তিগতভাবে সরবরাহ করতে বাধ্য হবেন। যা তাদের কোভিড-১৯ আক্রান্ত সংস্পর্শে আসার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলবে এবং প্রতিকার ব্যবস্থার কার্যকারিতাকে ধীর রাখবে।

এই সময়ে বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত সঠিক ও সময়োপযোগী তথ্য প্রচারে এবং শিবিরগুলোতে ও সংলগ্ন স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি প্রশমনে মানবিক সেবা কার্যক্রম পরিচালনাকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং রোহিঙ্গা নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করা। যাতে অহেতুক আমলাতান্ত্রিক বাধার সম্মুখীন না হয়েই অধিকসংখ্যক মানবিক স্বাস্থ্যসেবাকর্মী নিরাপদে বাংলাদেশ ও শিবিরগুলোতে প্রবেশ করতে পারেন, এ জন্য সরকারের ভ্রমণ বিধিনিষেধকে আরও ভারসাম্যপূর্ণ করা উচিত।

এই চিঠির মাধ্যমে আমরা শরণার্থী শিবিরগুলোর চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ বিষয়েও আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করছি। বাংলাদেশের উচিত হবে চলাচলের স্বাচ্ছন্দ্যসহ স্বাস্থ্যসেবায় যথাযথ অভিগমন নিশ্চিত করা। প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ এবং শিশুসহ শরণার্থী শিবিরগুলোতে যারা সবচেয়ে বেশি দুর্বল, তাদের জন্য এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সমষ্টিগতভাবে এখনও দুর্বল। এই সময়ে শিবিরগুলোতে মানবিক সেবা কার্যক্রমে অভিগমন বজায় রাখা তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশপাশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নারী, পুরুষ এবং যুবসমাজকে এ মুহূর্তে তাদের কমিউনিটিকে সহায়তা করার মতো উপযুক্ত করে তোলাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা সময় মতো কোভিড-১৯ পরীক্ষা করানো এবং চিকিৎসা পাওয়ার ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও দেশে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্যহীনতা নিশ্চিত করার জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০২০
টিআর/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।