ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ আশ্বিন ১৪৩২, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০ রবিউস সানি ১৪৪৭

জাতীয়

ময়মনসিংহে ঘন ঘন লোডশেডিং, গরমে হাঁসফাঁস

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪:০৭, মে ৩১, ২০১৮
ময়মনসিংহে ঘন ঘন লোডশেডিং, গরমে হাঁসফাঁস ময়মনসিংহে ঘন ঘন লোডশেডিং। ছবি: অনিক খান

ময়মনসিংহ: নগরীর দুর্গাবাড়ি রোডের মেডিসিন পয়েন্টে বসে বেশ ঘামছেন ফার্মেসী মালিক ও কর্মচারীরা। চার্জার লাইটের আলোয় কোনোমতে ওষুধ বিক্রির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। এমন সময় সেখানে প্রবেশ করলেন মাজাহারুল ইসলাম (৩৫) নামে এক কসমেটিকস ব্যবসায়ী।

জোরে হাঁক দিয়ে বললেন, লোডশেডিং আর ভালো লাগে না। কথা নেই, বার্তা নেই ঘন ঘন লোডশেডিং।

আমাদের মার্কেটেও কয়েক মিনিট পর পর বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। কখনো দ্রুত চলে আসছে, আবার কখনো ঘণ্টা দেড় বা দুয়েক পর আসছে। এতে ঈদ কেনাকাটা করতে আসা মানুষজন ও ব্যবসায়ীদের হাঁসফাঁস অবস্থা।

এসব কথোপকথন মঙ্গলবার (২৯ মে) রাত ১১ টার। এরপর রাত ১২টার পর দুর্গাবাড়ি রোড এলাকায় বিদ্যুতের দেখা মেলে।

গত কয়েক দিন ধরেই একেতো তাপদাহে অতিষ্ঠ জনজীবন এরপর আবার ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং হাঁপিয়ে তুলেছে নগরীর বাসিন্দাদের।

বিদ্যুতের এমন ভেল্কিবাজির চিত্রই তুলে ধরেন নগরীর আঠারবাড়ি বিল্ডিং এলাকার গ্রাফিক্স গ্যালারির মালিক মো. নূর আলম।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে দিনে তিন থেকে চার বার এবং রাতে কমপক্ষে দুইবার লোডশেডিং হচ্ছে। দিনের বেলায় আধ ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুৎ এলেও রাতে ঘণ্টা দেড়েক বা দুয়েক পর মিলছে। এতে করে ব্যবসা-বাণিজ্যের চরম ক্ষতি হচ্ছে।

কেবল নগরীর দুর্গাবাড়ি, আঠারবাড়ি এলাকার বাসিন্দারাই লোডশেডিংয়ের গাঢ় অন্ধকারে দুর্ভোগের মুখে পড়ছেন না, এর চেয়েও ভয়াবহ অবস্থা নগরীর গোহাইলকান্দি এলাকার।

নগরীর ৪নম্বর ওয়ার্ডের এই এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, দিন নেই, রাত নেই লোডশেডিং, যেনো এখানকার বাসিন্দাদের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে তা। এমনকি সেহেরি ও ইফতারের সময়ও বিদ্যুৎ যাচ্ছে। এতে করে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয় রোজাদারদের।

এই এলাকার খানবাড়ি বাইলেনের বাসিন্দা বুলবুল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে ভ্যাপসা গরমে বাসায় টেকাই দায় হয়ে পড়ে। এই রকমের গরমে সবচেয়ে কাহিল হয়ে পড়ছেন শিশু ও বয়স্করা। পাশাপাশি ঘন ঘন এমন লোডশেডিংয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাও ব্যাহত হচ্ছে।

জানা গেছে, ময়মনসিংহের গ্রাম থেকে শহর, সবখানেই লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়ে গেছে। এতে করে দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে স্থানীয়দের জীবন। একদিকে স্বাভাবিক জীবন-যাত্রা ব্যাহত হচ্ছে পাশাপাশি মানুষের বেঁচে থাকাটাই যেনো কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সামান্য ঝড়-বৃষ্টি হলেই বিদ্যুৎ হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো সময় পাক্কা ২৪ ঘণ্টা পর বিদ্যুতের দেখা মিলছে। তাই ক্ষোভ নিয়ে নগরীর গোহাইলকান্দি এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, সরকার এতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে, কিন্তু ময়মনসিংহে রহস্যজনক কারণে লোডশেডিং হচ্ছে।

ময়মনসিংহ বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, ময়মনসিংহ নগরীতে ১১০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। সরবরাহ ব্যবস্থাও ঠিক আছে। এরপর সামান্য বাতাস হলেই কেনো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা এ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

তবে নগরীতে ঘন ঘন বিদ্যুৎ হাওয়া হয়ে যাওয়াকে ‘লোডশেডিং’ বলতে নারাজ ময়মনসিংহ বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের (উত্তর) নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে টেকনিক্যাল কিছু সমস্যা যেমন ট্রান্সফরমারের সুইচ নষ্ট হয়ে গেলে বিদ্যুৎ চলে যায়। এ সমস্যা সমাধানে কাজ চলছে। তবে এটাকে কোনো অবস্থাতেই লোডশেডিং বলা যাবে না।

একই রকম দাবি করে দক্ষিণের নির্বাহী প্রকৌশলী ইন্দ্রজিৎ দেবনাথ বাংলানিউজকে বলেন, আমার অংশের অন্তর্ভুক্ত চরপাড়া ও দুর্গাবাড়ি এলাকায় ট্রান্সফরমারের কিছুটা সমস্যা ছিল। সেই সমস্যা কাটিয়ে ওঠেছি। ময়মনসিংহে কোনো লোডশেডিং নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৩ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৮
এমএএএম/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।