জানা যায়, পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা ছিটমহলবাসীর একমাত্র চলাচলের পথ ‘তিনবিঘা করিডোর’ গেটটি ২০১৩ সালে উন্মুক্ত করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এরপর থেকে এ ছিটমহলের বাসিন্দাদের নাগরিক সুবিধা ও জীবনমান উন্নয়নে নানামুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দহগ্রাম আঙ্গোরপোতা তিস্তার চরাঞ্চলের ভূমিহীনদের বসবাসের জন্য সাম্প্রতিক সময় ৮০টি পরিবারের বসবাসের জন্য একটি গুচ্ছগ্রাম তৈরী করে সরকার। সেখানে ৩০টি পরিবারের ঘর-বাড়ি ফাঁকা রেখে পাশে আরও একটি আশ্রয়ন করার পরিকল্পনা হাতে নেয় সরকার। যদিও আশ্রয়নটি কৃষি জমিতে নির্মাণ না করতে স্থানীয় কৃষকরা জজ আদালত থেকে হাইকোর্ট পর্যন্ত মামলা করেছেন। হাইকোর্ট ভূমি সচিবের মাধ্যমে দহগ্রামের ভূমি রেকর্ডপত্র তলব করেছেন।
কৃষকরা জানান, ১৯৯২ সালে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাত্র এক ঘণ্টা করিডোর গেট মুক্তি পাওয়া দহগ্রামে মাঠ জরিপের কাজ শুরু হয় ১৯৯৪ সালে। সে সময় বন্যার কারণে দহগ্রামের বড়বাড়ি, সৈয়দপাড়া, শালতলি প্রভৃতি গ্রামের প্রায় ১৪৫০ একর জমি মাঠ জরিপ না করেই কাজের সমাপ্ত করা হয়। যা পরবর্তীতে সরকারি খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত হয়। কৃষকরা বিষয়টি জানতে পেয়ে লালমনিরহাট জজ আদালতে দুইটি মামলা ও সাম্প্রতি হাইকোর্টে একটি মামলা করেন। এদিকে, মামলা বিচারাধীন থাকলেও সরকারিভাবে ওই আশ্রয়ন প্রকল্পের এক একর মাঠ ভরাট করতে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অধীনে ৭০ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রকল্পটির চেয়ারম্যান হিসেবে দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান দুইটি বোমা মেশিনে বালু-পাথর তুলে আশ্রয়নের মাঠ ভরাট কাজ শুরু করেছেন। এতে বোমা মেশিনের তাণ্ডবে গুচ্ছগ্রামের মাঠ ও ঘরবাড়ি ভেঙে যেতে বসেছে। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে প্রধানমন্ত্রীর গুচ্ছগ্রাম।
বড়বাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ফজলুল হক বাংলানিউজকে জানান, কৃষি জমিতে আশ্রয়ন না করতে এবং তাদের জমি ফেরত পেতে তারা হাইকোর্টের আশ্রয় নিয়েছেন। হাইকোর্ট কাজ বন্ধের নির্দেশ দিলেও কাজ বন্ধ করেনি সরকার পক্ষ। এক গুচ্ছগ্রামে থাকার লোক নেই। সেখানে আরও আশ্রয়নের প্রয়োজন কী ? প্রশ্ন তোলেন তিনি।
গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কাদের বাংলানিউজকে বলেন, গরীবের কথা কে শুনে। গরীব মানুষ মরুক, পানিতে ভাসি গেলেও কারও কিছু হয় না। চেয়ারম্যান নিজেই গুচ্ছগ্রামের ঘরের পেছনে বোমা মেশিন বসাইছেন। এখন কাকে বিচার দিবু বাহে?
দহগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, উপজেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তে ওই জমিতে বালু ভরাট করা হচ্ছে। বোমা মেশিনে কেন? এমন প্রশ্নে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।
পাটগ্রাম উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নন্দী কুমার বাংলানিউজকে জানান, শ্রমিক দিয়ে আশ্রয়ন প্রকল্পের মাঠ ভরাটে বরাদ্দের অর্ধেক বিল ইতোমধ্যে দেয়া হয়েছে। তবে বোমা মেশিনে বালু উত্তোলন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি।
পাটগ্রাম উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুর কুতুবুল আলম বাংলানিউজকে জানান, হাইকোর্টের একটি পত্র কৃষকরা হাতে হাতে দিয়েছেন। কিন্তু কোন অফিস কপি তিনি পাননি। অফিস কপি এলে আদালতের নির্দেশনা মেনে কাজ করা হবে। বোমা মেশিনে বালু উত্তোলন করে থাকলে খোঁজ নিয়ে প্রকল্প চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৮ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৮
এনটি