ঢাকা, বুধবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ মে ২০২৪, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘যারা বাজার উচ্ছেদ করে তারাই আবার বসায়’

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৮
‘যারা বাজার উচ্ছেদ করে তারাই আবার বসায়’ রাস্তা দখল করে প্রতিদিন বসছে কাঁচা বাজার। ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: টেকনিক্যাল মোড় থেকে মিরপুর ১ নং যাওয়ার সড়কটি রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত সড়ক। এই সড়ক দিয়ে উত্তরা, মহাখালী, বাড্ডা, খিলগাঁও, রামপুরা, নিউমার্কেট, আজিমপুর, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন এলাকার পরিবহন চলাচল করে। অথচ ব্যস্ত এই সড়কের টোলারবাগ স্টাফ কোয়ার্টারের সামনের প্রায় ১০০ ফুট রাস্তা দখল করে প্রতিদিন বসছে কাঁচাবাজার।

প্রতিদিন ভোর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এই রাস্তার অর্ধেক দখল করে মাছ, মাংস, সবজির বাজার বসে। প্রায় শতাধিক ব্যবসায়ী রাস্তায় বসে পণ্য বিক্রি করেন।

এভাবে সড়ক দখল করে বাজার বসানোর কারণে অফিসগামী যাত্রীদের পড়তে হয় যানজটে।

রাস্তার অর্ধেক দখলে থাকায় যানবাহনের দীর্ঘলাইন পড়ে যায় ওই সড়কে। মাঝে মাঝে বাজারটি উচ্ছেদ হয়, দুই-একদিন যেতে না যেতেই আবার নতুন করে বসেন ব্যবসায়ীরা। যে পুলিশ সদস্যরা উচ্ছেদ করেন তারাই আবার বসার সুযোগ করে দেন বলে জানান দোকানিরা।
রাস্তা দখল করে প্রতিদিন বসছে কাঁচা বাজার।  ছবি: জিএম মুজিবুরশুক্রবার (২০ এপ্রিল) সকালে সরেজমিনে টোলারবাগে রাস্তা দখল করে বাজারের চিত্র দেখে মনে হয়নি এটা রাস্তা। যে কেউ দেখলে মনে ভাবতে পারেন স্থায়ী বাজার। কেননা রাস্তার ফুটপাতে টং দোকান দিয়ে মাংস, ব্রয়লার মুরগি, মুদি দোকান বসানো হয়েছে। তাবুর ছাউনি আর বেড়া দিয়ে বেশকিছু দোকান বসেছে ফুটপাতজুড়ে।

আর রাস্তা দখল করে নানা পদের সবজি ও মাছ নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। কাছাকাছি বাজার পেয়ে স্টাফ কোয়ার্টারের বাসিন্দারাও খুশি বাসা থেকে বের হয়েই টাটকা সবজি নিয়ে বাসায় ফিরছেন সবাই। অথচ কয়েক গজ পেরুলেই মিরপুর ১ নম্বরে রয়েছে বড় বাজার।

স্টাফ কোয়ার্টারের বাসিন্দা মোকছেদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের সুবিধা হয়েছে খুব সকালে বাজার খোলে আমরা বাজার করে অফিসে যেতে পারি। আগে মিরপুর ১ নম্বরে গিয়ে বাজার করতে হতো, এখন এখান থেকেই করি। মাঝে মাঝে এখানে পুলিশ উচ্ছেদ করে আবার পুলিশই টাকা খেয়ে বসতে দেয়। মানুষের তো সমস্যা হচ্ছেই। এখন দেখবে কে? যারা উচ্ছেদ করে তারাই বসায়!

রাস্তায় এভাবে বাজার বসানোতে সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের পড়তে হচ্ছে দুর্ভোগে। সিটি কর্পোরেশনের নির্দেশ মতে সকাল ৮টার মধ্যে রাস্তা পরিষ্কার কাজ শেষ করার কথা। তারা অনেকে তাই করেন। কিন্তু বাজার যেহেতু শেষ হয় ১০-১১টার পর তাই বাজারের বর্জ্য চলে যাচ্ছে ড্রেনে, ফলে একটু বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যাচ্ছে স্টাফ কোয়ার্টারের সড়ক।

পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতার মদদেই প্রতিদিন বসছে এই বাজার। আরো অভিযোগ রয়েছে কিছু কিছু টং দোকানে গাঁজা, ফেনসিডিলও বিক্রি হয়। পুলিশের নাকের ডগায় এই বাজার তারপরেও বহাল তবিয়তে রয়েছে।

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন টিটু স্বীকার করেন অবৈধ বাজারের পেছনে বড় একটি সিন্ডিকেট কাজ করে। যে কারণে ৪ বার উচ্ছেদ করেও তাদের বন্ধ করা যায়নি। আবারও উচ্ছেদ করার পরিকল্পনা রয়েছে তার।

ইকবাল হোসেন টিটু বাংলানিউজকে বলেন, পুলিশ চাইলে এই বাজার এখান থেকে একেবারে উচ্ছেদ করা সম্ভব। আমি নিজে নেতৃত্ব দিয়ে ৪ বার উচ্ছেদ করেছি, আবার বসছে।  

কারা বাজার বসায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তি আর পুলিশ প্রশাসন টাকা খেয়ে এটা করছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক কমোডর আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, রাস্তা-ফুটপাত দখল করে এভাবে বাজার বসানো মোটেই কাম্য নয়। এগুলো উচ্ছেদ হওয়া দরকার। এসব বাজারের কারণে আমাদের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আমরা পরিষ্কার করে যাওয়ার পর রাস্তায় আবার ময়লা আবর্জনা ফেলছে দোকানিরা। আর সেই আবর্জনা চলে যাচ্ছে ড্রেনে। এতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি তো হচ্ছেই, তীব্র যানজটেও মানুষ অতিষ্ঠ হচ্ছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৮
এসএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।