ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জীবনহানি হলেও রাজীবের ক্ষতিপূরণের রিট মামলা চালাবো

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৮
জীবনহানি হলেও রাজীবের ক্ষতিপূরণের রিট মামলা চালাবো রাজীব হোসেন/সংগৃহীত

ঢাকা: দুই বাসের রেষারেষিতে হাত হারানো ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কলেজ ছাত্র রাজীব হোসেন মারা গেলেও হাইকোর্টে কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ মামলা ‘চালিয়ে যাবো’।
 

রাজীবের মৃত্যুর পর মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) সকালে এমন মন্তব্য করেছেন ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা রিট মামলার বাদী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
 
বাঁচানো গেলো না রাজীবকে

গত ৩ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পান্থকুঞ্জ পার্কের সামনে বিআরটিসি বাসের সঙ্গে স্বজন পরিবহনের বাস টক্কর দিতে গেলে বাস দু’টির মাঝখানে পড়ে ডান হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় রাজীবের।

সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের এ ছাত্রকে তাৎক্ষণিক নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও পরদিন ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে সরকারের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছিলো।
 
এ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর যুক্ত করে রিট আবেদনটি করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল।
 
৪ এপ্রিল ওই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রাজীব হোসেনকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট।
 
একইসঙ্গে তার চিকিৎসা ব্যয় ‘বিআরটিসি’ ও ‘স্বজন পরিবহন’র মালিকদের বহন করতে নির্দেশ দেন। এছাড়াও সাধারণের চলাচলে বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে কার্যকরে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তিরোধে প্রয়োজনে আইন সংশোধন ও নতুন করে বিধিমালা প্রণয়নের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
 
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামের রাজীব তৃতীয় শ্রেণিতে থাকাকালে মাকে এবং অষ্টম শ্রেণিতে থাকাকালে বাবাকে হারান। এরপর মতিঝিলে খালা জাহানারা বেগমের বাসায় থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। মহাখালীর তিতুমীর কলেজে স্নাতকে ভর্তি হওয়ার পর যাত্রাবাড়ীতে মেসে ভাড়ায় থেকে পড়াশোনা করছিলেন রাজীব। এর পাশাপাশি তিনি একটি কম্পিউটারের দোকানেও কাজ করছিলেন। নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি ছোট দুই ভাইয়ের খরচও চালাতে হতো রাজীবকে।
 
রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, রাজীবের মৃত্যুর মাধ্যমে এ মামলাটির বিষয়বস্তু শেষ হয়ে যাবে না। কারণ রাজীব তো প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া ঘটনার একটা নজির। ঘটনা তো প্রতিদিন ঘটছে। তাই রিট আবেদনে বলেছি বিদ্যমান আইনের প্রয়োগ করতে, আর বিদ্যমান আইনে কাভার না করলে নতুন আইন বা বিধি করতে। যেন মানুষ নিরাপদে যানবাহনে চলতে পারেন।
 
তিনি বলেন, রাজীবের মৃত্যুর কারণে এ রিটের সারবার্তা আরও বেড়ে গেলো। এখন আমি আদালতের কাছে বলতে পারবো, হাত হারানো রাজীবের জন্য এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়েছিলাম, যে ছেলের জীবন চলে গেলো, যার সম্ভাবনা সারাজীবনের জন্য ধূলিস্মাৎ হয়ে গেলো, তার ভাইদের দেখাশোনার কেউ নেই, তার ক্ষতিপূরণ তো অর্থ দিয়ে হবে না। তা সত্ত্বেও আদালতের কাছে তার এ জীবনহানি, যেটা তার কোনো দোষে নয়, এর একটা যথাপোযুক্ত বিচার চাই। ক্ষতিপূরণ হতে পারে। আদালত আরও কিছু নির্দেশ দিতে পারেন।
 
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ মামলায় আমি লড়বো, চালিয়ে যাবো। কারণ এ মামলার রায় হলে পাবলিক যানবাহনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নির্দেশনা আসবে। সমাজের উপকার হবে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে বলে আমি আশা করি।  
 
রুহুল কুদ্দুস কাজল আরও বলেন, রাজীব শুধু হাতই হারাইনি, জীবনও চলে গেছে। এমন অসংখ্য ঘটছে। ভবিষ্যতেও ঘটতে পারে। রাজীবের ঘটনা তো দুর্ঘটনা বলার কোনো সুযোগ নেই। একজন যাত্রী দুই বাসের রেষারেষির কারণে হাত হারাবেন, এটা কেউ ডিসপিউট করবে না।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৮
ইএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।