ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত ১০৮ রোহিঙ্গা শনাক্ত, ৫ জনের মৃত্যু

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০১৭
ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত ১০৮ রোহিঙ্গা শনাক্ত, ৫ জনের মৃত্যু কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প

কক্সবাজার: প্রায় বিশ/পঁচিশ বছর আগে বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হওয়া রোগ ডিপথেরিয়া কক্সবাজারে আশ্রয়রত রোহিঙ্গাদের মধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে।এ পর্যন্ত ‘করনিব্যাক্টেরিয়াম ডিপথেরি’নামক ব্যাকটেরিয়া সংক্রামক এই রোগে আক্রান্ত ১০৮ জন রোহিঙ্গাকে শনাক্ত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তাদের মধ্যে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। 

আর এই সংক্রামক ব্যাধির হাত থেকে রোহিঙ্গাসহ স্থানীয়দের রক্ষা করতে শনিবার (০৯ ডিসেম্বর) থেকে ডিপথেরিয়া প্রতিষেধক টিকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের সিভিল সার্জন।  

অন্যদিকে বিলুপ্ত এই রোগটির সঙ্গে অপরিচিত দেশের নতুন চিকিৎসকরা।

তাই এই সংক্রামক ব্যাধি থেকে রোহিঙ্গাসহ স্থানীয়দের রক্ষা করা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে গত ২৫ আগস্ট থেকে প্রায় ছয় লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। রাখাইনে দমন নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গারা দশকের পর দশক মৌলিক স্বাস্থ্য সেবা থেকেও বঞ্চিত রয়েছে।

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালাম বলেন, ৭ ডিসেম্বর রাত পর্যন্ত ১০৮ জন ডিপথেরিয়া রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তাদেরকে এমএসএফ হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতালে  চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত এই রোগে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। সংক্রামক ব্যধি ডিপথেরিয়া আক্রান্তের হাঁচি, কাশির মাধ্যমে খুব দ্রুত অন্যের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আক্রান্তের গলার পেছন দিকে সরু পর্দা তৈরি হয়। এতে শ্বাসকষ্ট, হৃদযন্ত্রের সমস্যা, পক্ষাঘাত, এমনকি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
 
উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য অফিসার ডা. মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ডিপথেরিয়া সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া যে বিষাক্ত পদার্থ উৎপন্ন করে তা শ্বাসনতন্ত্রের বিশেষ করে নাক ও গলার টিস্যুকে নষ্ট করে দেয়। ডিপথেরিয়ার লক্ষণগুলো দেখা যায় ইনফেকশন হওয়ার দুই থেকে সাত দিন পরে। ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১০০. ৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রার জ্বর থাকে। ক্লান্তি ও শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। গলা ব্যথা হয়। গলার গ্রন্থি ফুলে যায়। ঢোক গিলতে সমস্যা ও ব্যথা হয়। অনেক বেশি কাশি হয়।

তিনি আরো বলেন, দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া যখন ভালো টিস্যুকে নষ্ট করে দেয় তখন মৃত টিস্যুগুলো পুরো ধূসর আবরণ তৈরি করে রোগীর গলা ও নাকে, একে সিউডোমেমব্রেন বলে। বিষাক্ত পদার্থ রক্তস্রোতে মিশে যেতে পারে যার ফলে হার্ট, কিডনি ও নার্ভ ড্যামেজ হয়ে যায়। গলার ভেতরে ধূসর আবরণ বা ফুলে যাওয়া টনসিল দেখে প্রাথমিকভাবে এ রোগ শনাক্ত করা হয়। এরপর আক্রান্ত স্থান থেকে টিস্যু নিয়ে কালচার করতে ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়ে নিশ্চিত হতে হয়।
  
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার শাহীন মো. আব্দুর রহমান চৌধুরী বলেন, ডিপথেরিয়া একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। প্রচন্ড জ্বর, গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট হচ্ছে ডিপথেরিয়ার প্রাথমিক লক্ষণ। তাই এই রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রথমে অ্যান্টিটক্সিন ইনজেকশন দিয়ে ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে হয়। এছাড়াও ইরাথ্রোমাইসিন ও পেনিসিলিনের মত এন্টিবায়োটিক দেওয়া হয় ইনফেকশন দূর করার জন্য। যেহেতু এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ তাই ডিপথেরিয়া আক্রান্ত রোগীদের আলাদা রাখা হয়।

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. আবদুস সালাম বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকার ৯ ডিসেম্বর থেকে উখিয়ার ৪৮টি ও টেকনাফের ১২টি ভ্রাম্যমাণ ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের মাঝে ডিপথেরিয়ো রোগের প্রতিষেধক টিকা দেওয়া হবে। এতে ১২০ জন স্বাস্থ্যকর্মী কাজ করবে। তিনি আরো বলেন, এছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প অধ্যুষিত এলাকার স্থানীয় শিশুদের মাঝেও এই টিকা দেওয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, ডিপিটি ভ্যাক্সিন, ডিপথেরিয়া পারটুসিস, টিটেনাস টিকার মাধ্যমে একজন শিশু জীবনের জন্য ডিপথেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা লাভ করে।

সিভিল সার্জন আরো বলেন, রোগটি এদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়েছে অনেক যুগ আগে। এই রোগের সঙ্গে তাই আমাদের নতুন ডাক্তার অপরিচিত। একারণে এই রোগের মোকাবেলা আমাদের জন্যও একটি চ্যালেঞ্জ।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৭
টিটি/বিএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।