ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মা-বাবাকে খুঁজে ফিরছে কায়াস

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭
মা-বাবাকে খুঁজে ফিরছে কায়াস মা-বাবাকে খুঁজে ফিরছে দশ বছরের শিশু কায়াস। ছবি: সোহেল সরওয়ার

কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প থেকে, উখিয়া, কক্সবাজার: কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের বিপরীত পাশের রাস্তায় দাঁড়িয়ে ১০ বছরের শিশু নূরে কায়াস। নতুন রোহিঙ্গাদের আসতে দেখলেই দৌড়ে যাচ্ছে। আবার চোখ ছল ছল করে নিরাশ হয়ে ফিরে আসছে। বড় চাচাতো বোন বিলকিস জোর করে ঘরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ।

চলমান সহিংসতার শিকার হয়ে মিয়ানমারের বলিপাড়া থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে মেয়েটি। অন্য শরণার্থীদের সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছে ক্যাম্পটিতে।

   

দেশে হারিয়ে ফেলা বাবা- মা, ভাই-বোনদের খুঁজছে কায়াস। দিনের বেশিরভাগ সময়ই ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। ফর্সা রংয়ের মিষ্টি চেহারার মেয়েটির আজ সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যত।

বাবা সিরাজুল ইসলাম আর মা মদিনার পাঁচ সন্তানের তৃতীয় কায়াস। ১৭ দিন আগে বাবা-মা আর ভাই-বোনদেরকে হারিয়ে ফেলেছে সে।

ওইদিন খালার সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিলো নূরে কায়াস। এরই মধ্যে গ্রামে শুরু হয়ে যায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। মানুষ প্রাণ নিয়ে ছুটছেন এদিক-সেদিক। নূরে কায়াসও ছোটে বাড়ির পথে।

বাড়ি ফিরতেই ছোখ ছানাবড়া। সব ঘরের দরজা খোলা, কেউ কোথাও নেই। প্রতিবেশিদেরও বেশিরভাগেরই বাড়ি খালি।

যে দু’একজন আছেন, তাদের কেউ জানান, পুরো পরিবারকে ধরে নিয়ে গিয়েছে সেনাবহিনী। কেউবা কায়াসকে আশ্বস্ত করেন যে, তার বাবা-মা, ভাই-বোনেরা পালিয়ে গেছেন।

কি করবে তখন কায়াস? চোখের সামনে শুধুই অন্ধকার। মনে পড়ে চাচার কথা।

চাচা মোহাম্মদ সালামের বাড়িতে গিয়ে দেখলো, চাচা-চাচী সন্তানদের নিয়ে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে বাড়ি ছাড়ছেন। কায়াস জানায়, তার পরিবারকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। চাচার পরিবারের সঙ্গে রওনা হয় বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে।

সাতদিন হেঁটে নাফ নদী পার  হয়ে পৌঁছে কক্সবাজারের বালুখালি ক্যাম্পে। সেখান থেকে দু’দিন আগে আসে কুতুপালং ক্যাম্পে।

বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর থেকেই শরণার্থীদের জনস্রোতের মাঝে মা-বাবাকে খুঁজে ফিরছে নূরে কায়াস। রাস্তার পাশে রোহিঙ্গা শরণার্থীবাহী গাড়ি দেখলেও দৌড়ে যাচ্ছে, মা-বাবাকে না পেয়ে অন্যদের কাছে তাদের খোঁজ চাইছে।

কায়াস বাংলানিউজকে বলে, ‘আমি জানি না, বাবা- মা বেঁচে আছেন কি-না। খোদা যেন তাদের বাঁচিয়ে রাখেন। নয়তো আমার কি হবে? আমি কোথায় যাবো? এখন চাচা-চাচীর কাছে আছি। কিন্তু তারাই বা আমাকে কতোদিন রাখবেন?’

‘আমাদের এলাকা থেকে কেউ এসেছেন শুনলেই মনে হয়, আমার মা-বাবা এসেছেন’- বলেই কেঁদে ওঠে শিশুটি।

কায়াসের মতো অসংখ্য শিশু মা-বাবাকে হারিয়েছে মিয়ানমারের চলমান সহিংসতায়। কারো মা-বাবা নিখোঁজ, কারো মারা গেছেন।

ভালো করে জীবনকে দেখার আগেই অসম জীবনযুদ্ধে পড়েছে ওই শিশুরা।

জাতিসংঘ ও সরকারের তথ্যমতে, মিয়ানমারের চলমান সহিংসতায় গত প্রায় একমাসে নতুন করে প্রায় চার লাখ ১৭ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশে। তাদের মধ্যে ৬০ শতাংশই শিশু। সে হিসাবে প্রায় আড়াই লাখ শিশু শরণার্থী নতুন যোগ হয়েছে।  

তবে স্থানীয়দের মতে, নতুনদের সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী ১৫টি ক্যাম্পে অবস্থান করছেন।

** কলার মোচা খেয়ে দিন কাটছে গর্ভবতী মায়েদের 
**সীমান্তের ওপারে নবজাতক হোসেনের ঘর
** চর্মরোগ-নিউমোনিয়ায় কাহিল রোহিঙ্গারা 
** ২ বছরের কাছেরের দেখাশোনা করে ৩ বছরের লালা

** পেটে ভাত নেই, কাপড় দিয়ে কী হবে!​

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭
ইউএম/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।