ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

গাইবান্ধা-৩ এ মনোনয়ন ‘বেকায়দায়’ আ’লীগ, বিএনপির সাদিক!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৭
গাইবান্ধা-৩ এ মনোনয়ন ‘বেকায়দায়’ আ’লীগ, বিএনপির সাদিক! গাইবান্ধা-৩ এ মনোনয়ন ‘বেকায়দায়’ আ’লীগ, বিএনপির সাদিক!

গাইবান্ধা-৩ আসন ঘুরে: টানা ছয়বার সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির ড. টিআইএম ফজলে রাব্বীকে হটিয়ে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো বিজয়ের মুখ দেখে আওয়ামী লীগ।যার মাধ্যমে জাতীয় পার্টির পর সাদুল্যাপুর-পলাশবাড়ীর (গাইবান্ধা-৩) আসনে আরেকটি রাজনৈতিক দলের ‘শক্তির’ আর্বিভাব ঘটে।

তবে এ আসন এখনও ‘অধরাই’ রয়ে গেছে দেশের অন্যতম শক্তিশালী রাজনৈতিক দল বিএনপির কাছে।
 
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এরই মধ্যে গাইবান্ধা-৩ আসনে দলগুলো কাকে মনোনয়ন দেবে সে নিয়ে শুরু হয়েছে গুঞ্জন।

জনসম্পৃক্ততা না থাকায় বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. ইউনুস আলী সরকারের ফের মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে।  

অন্যদিকে সাদুল্যাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শাহারিয়ার খান বিপ্লব মনোনয়ন প্রত্যাশী। তাই এ আসনে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে ‘বেকায়দায়’ পড়তে হতে পারে আওয়ামী লীগকে। সেক্ষেত্রে দলটি ‘নিউক্লিয়াস’ প্রার্থী খুঁজতে পারে বলেই মনে করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
 
তবে বিএনপির হয়ে দলটির গাইবান্ধা জেলা শাখার সভাপতি ডা. মইনুল হাসান সাদিক মনোনয়ন পাওয়ায় জোর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। নিজেও এ বিষয়ে ইচ্ছে পোষণ করেছেন, মাঝে মাঝে গণসংযোগেও তা বুঝিয়েছেন তিনি।
 
এছাড়া গাইবান্ধা-৩ আসনে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকার শিল্পীর নাম ঘোষণা করেছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।  

অন্যদিকে জাপার টিকিটে টানা ছয়বারের সংসদ সদস্য ডা. টিআইএম ফজলে রাব্বী তরী ভিড়িয়েছেন জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) গ্রুপে। কাজী জাফরের মৃত্যুর পর থেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন দলটির।
 
জাতীয় পার্টি (জাফর) এখন ২০ দলীয় জোটের শরিক হিসেবে রয়েছে। রাব্বী এ আসনে ২০ দলীয় জোটের মনোনয়ন চাইবেন। আর তিনি প্রার্থী হলে ভোটের হিসেব পাল্টে যেতে পারে।
 
অন্যদিকে ‘কর্তৃত্ব’ ধরে রাখতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিলে সেক্ষেত্রেও ঘোলাটে হতে পারে পরিস্থিতি।
 
সোমবার (১৪ আগস্ট) দিনভর সাদুল্যাপুর-পলাশবাড়ীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এসব চিত্রই উঠে আসে। যা বাংলানিউজ পাঠকদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে ‘মাঠে ঘাটে-ভোটের কথা’ বিশেষ আয়োজনে।
 
পলাশবাড়ী সদরের পশ্চিমপাড়ায় স্থানীয় চায়ের দোকানে কথা হয় মফিজুর ও নওশা মিয়ার সঙ্গে। এলাকার উন্নয়নে বর্তমান সংসদ সদস্য ইউনুস আলী সরকারের কাজের প্রসঙ্গে তারা বলেন, তেমন কোনো কাজই হয়নি এলাকায়।  

লাঙল প্রতীকে টানা ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া ড. টিআইএম ফজলে রাব্বী ফের নির্বাচনে অংশ নিলে জয়ের সম্ভাবনার প্রশ্নে মাদ্রাসা শিক্ষক রাব্বী বলেন, ক্ষমতার থাকার সময়ে কোনো কাজই করেনি। আর একবার যখন বিদায় দিয়েছি আবার, প্রশ্নই আসে না।

খানিক দূর এগিয়ে সাদেকের চায়ের দোকানে কথা হয় ২০ বছর ধরে ব্যবসায়িক কাজে সাদুল্যাপুরে অবস্থান করা রাজধানীর গাজীপুরের বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় আসবে। তবে বিএনপি থেকে ডা. মইনুল হাসান সাদিক মনোনয়ন পেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এছাড়া বর্তমান এমপি এলাকায় আসেন না। নেই কোনো জনসম্পৃক্ততা, ফোনেও পাওয়া যায়না। নিজের আশপাশে একটা বলয় তৈরি করে রেখেছেন।
 
অবশ্য ফোনে না পাওয়ার অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেলো ফোন দিয়ে তা বন্ধ পাওয়ায়।
 
কথা হয় সাদুল্যাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শাহারিয়ার খান বিপ্লবের সঙ্গে। পবিত্র হজব্রত পালনের জন্য বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করায় ফোনে তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। ২০১৪ সালেও মনোনয়ন চেয়েছিলাম। কিন্তু দলের নীতিগত কারণে তা হয়নি। এবার মনোনয়নের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী।  

এ সময় তিনি বর্তমান এমপির জনসম্পৃক্ততা না থাকার বিষয়ে অভিযোগ করেন।
 
মনোনয়ন না পেলে দলের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে তার পক্ষে কাজ করবেন বলেও জানান বিপ্লব। তবে ‘যোগ্য’ প্রার্থী সংকটে যদি আওয়ামী লীগ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় তবে তিনি কমান্ড মেনে চলবেন।
 
কথা হয় সাদুল্লাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রিপনের সঙ্গে। আগের তুলনায় তারা এখন আরো সুসংগঠিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রত্যেক থানায় কমিটি রয়েছে। প্রার্থী যিনিই হবেন হাই কমান্ডের নির্দেশে কাজ করবেন, সেক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর পক্ষেও আপত্তি নেই।
 
আসনে বিএনপির সভাপতি ডা. মইনুল হাসান সাদিক মনোনয়ন প্রত্যাশা করে জয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘ব্যক্তি সাদিকের ৫০-৬০ হাজার ভোট রয়েছে। এর সঙ্গে দলের প্রতীক যোগ হলে তা আরো বাড়বে। এতো সংখ্যক ভোট আর কোনো প্রার্থীর নেই’।
 
এদিকে গাইবান্ধা-৩ আসনের পলাশবাড়ী এলাকার লোকজন অভিযোগ করেন, বর্তমান সংসদ সদস্যের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তিনি তো এলাকাতেই আসেন না। আশেপাশে নিজের লোকদের একটা বলয় তৈরি করে রেখেছেন। এই আসনে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করে রেখেছেন সাদুল্যাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শাহারিয়ার খান বিপ্লব।
 
আগামী নির্বাচনে সাদুল্যাপুর-পলাশবাড়ী আসনে জাতীয় পার্টি থেকে কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকার শিল্পীর মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত। এরই মধ্যে তিনি নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেছেন। গণসংযোগ করেছেন অনেক এলাকায়।
 
নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, দলের অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভালো। গত জুনে কাউন্সিলের সময় পার্টির চেয়ারম্যান গাইবান্ধা এসেছেন। সে সময় আমাকে এখানে মনোনয়ন দিয়ে গেছেন। এরইমধ্যে অন্তত অর্ধেক এলাকায় গণসংযোগ করেছি।  

এ বছরের মধ্যে অবশিষ্ট কাজ শেষ হবে বলেও আশা করছেন শিল্পী।
 
আর জাপা থেকে বারবার নির্বাচিত ডা. টিআইএম ফজলে রাব্বী ২০ দলীয় জোট থেকে মনোনয়ন পেলে জাতীয় পার্টির ভোটে কোনো সমস্যা হবে কিনা এমন প্রশ্নে শিল্পী বলেন, তিনি (রাব্বী) যদি শরিক থেকে মনোনয়ন পান তাহলে তার প্রতীক হবে ধানের শীষ, লাঙল নয়। এখানে জনগণের কাছে প্রতীকটাই (লাঙল) ফ্যাক্টর, ব্যক্তি নয়।
 
এছাড়া গাইবান্ধা-৩ আসন থেকে এমপি পদে রাজনৈতিক দলগুলো থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী আরও বেশ কয়েকজনের নাম উঠে আসছে। তবে সবকিছু নিশ্চিত হতে অপেক্ষা করতে হবে বেশ কিছু সময়। তার উপরে রয়েছে জোটের জটিল হিসাব-নিকাশ। ততোদিনে হয়তো মনোনয়ন প্রত্যাশী সব প্রার্থীই প্রচারণা চালিয়ে যাবেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৭
জেডএস/ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।