ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সাইফুলের কাছে বিস্ফোরক পৌঁছে দেয় অন্যজন!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৭
সাইফুলের কাছে বিস্ফোরক পৌঁছে দেয় অন্যজন! জঙ্গি আস্তানায় নিহত জঙ্গি সাইফুলের পা/ ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: ছাত্র পরিচয়ে ১৩ আগস্ট হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে ওঠে জঙ্গি সাইফুল ইসলাম। তবে সে সময় তার সঙ্গে কোনো ধরনের ব্যাগ ছিল না। বিস্ফোরকসহ দুটি ব্যাগ ১৪ আগস্ট দিনের বেলায় তার কাছে পৌঁছে দেয় অন্য একজন।

হোটেল কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে এ তথ্য জানান।

মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের অদূরে হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে জঙ্গিবিরোধী অভিযান ‘আগস্ট বাইট’ চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

 

অভিযানে এক জঙ্গি নিহত হয়। হোটেলের রেজিস্ট্রার খাতার তথ্য, সিটিটিসি’র গোয়েন্দা তথ্য এবং স্থানীয়ভাবে পুলিশের প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ওই জঙ্গির পরিচয় নিশ্চিত করা হয়।

সিটিটিসির কর্মকর্তা জানান, জঙ্গি সাইফুল হোটেলের রেজিস্টার বইয়ে সাইফুল নামেই স্বাক্ষর করেন। সে হোটেল কর্তৃপক্ষকে জানায়, খুলনা থেকে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে ঢাকায় এসেছে এবং ১৫ আগস্ট হোটেল ছেড়ে দেবে। সোমবার দিনের বেলা অন্য একজন তার কাছে দুটি ব্যাগ পৌঁছে দেয়। যে ব্যাগগুলোতে একটি সুইসাইডাল ভেস্টসহ তিনটি বোমা ছিল। সাইফুলকে ব্যাগ পৌঁছে দেওয়া ওই ব্যক্তির সন্ধান চালানো হচ্ছে।

সিটিটিসির কর্মকর্তা আরও বলেন, যশোর-ঝিনাইদহ এলাকার সাইফুল নামে নব্য জেএমবির এক সদস্য সক্রিয় ছিল বলে আমাদের কাছে তথ্য ছিল। তবে, সাইফুল এই হোটেলেই যে অবস্থান করছে সে তথ্য ছিল না।

জাতীয় শোক দিবসে ধানমন্ডি-৩২ নম্বর কেন্দ্রিক কর্মসূচিতে আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করছে বলে সিটিটিসির কাছে আগাম তথ্য ছিল। নব্য জেএমবির একটি সেলের একাধিক সদস্য ধানমন্ডি-৩২ নম্বর এলাকার আশপাশে অবস্থান করছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে রোববার থেকে ওই এলাকায় ব্লক রেইড শুরু করে পুলিশ।

সিটিটিসি জানায়, সোমবার রাতে রাসেল স্কয়ার থেকে কলাবাগান ও পান্থপথ এলাকায় ব্লক রেইড চালানো হয়। এরই ধারাবাহিকতায় মধ্যরাতে চারতলা ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় অবস্থিত হোটেল ‘ওলিও’তে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ।

সে সময় হোটেলটিতে ২৮ জন বোর্ডার অবস্থান করছিলেন উল্লেখ করে সিটিটিসির এক কর্মকর্তা জানান, তল্লাশি শুরু হলে হোটেলের সকল বোর্ডারই দরজা খুলে বের হয়ে আসেন। কিন্তু চতুর্থ তলায় ৩০১ নম্বর কক্ষের সামনে গেলেই সন্দেহ হয় পুলিশের। হোটেলের ম্যানেজার ওই রুমে অবস্থান করা ব্যক্তিকে বের হয়ে আসতে বললে তিনি জানান, আগামীকাল সকালে দেখা করবে। পরে পুলিশ পরিচয় দেওয়ার পর ভেতর থেকে আর কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি।

অভিযানে অংশ নেওয়া একাধিক কর্মকর্তা জানান, যখন রুমের ভেতর থেকে সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছিলো না তখন জানালা দিয়ে ভেতরে দেখার চেষ্টা করেন এক পুলিশ সদস্য। তখন তিনি দেখেন ভেতরে থাকা ওই যুবক তার ব্যাগ নাড়াচাড়া করছেন এবং সঙ্গে থাকা ট্রলি ব্যাগটি জানালার পাশে নিয়ে আসেন।

তাৎক্ষণিক সন্দেহ হলে দরজার বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে অন্যান্য বর্ডারদের নিরাপদে বের করে আনে পুলিশ। আনুমানিক রাত সাড়ে তিনটা থেকে ওই হোটেল ভবনটি ঘিরে রাখে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় সোয়াটের সদস্যরা। পরে সকালে সোয়াটের অভিযানের সময় আত্মঘাতী হয়ে মারা যান জঙ্গি সাইফুল।

বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) ছানোয়ার হোসেন বলেন, জঙ্গি সাইফুল সঙ্গে থাকা ট্রাভেল ব্যাগের একটি বোমা এবং তার ভেস্টে থাকা আরেকটি বোমা অভিযানের সময় বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে তার ব্যাকপ্যাকে থাকা আরেকটি বোমা নিষ্ক্রিয় করা হয়। তবে ঘটনাস্থলে আর কোনো অস্ত্র পাওয়া যায়নি।

নিহতের ধরন বিবেচনা করে পুলিশের ধারণা, বোমাটিতে দাহ্য পদার্থ কম ছিল, তবে প্রেসার বেশি ছিল। এজন্য বিস্ফোরণের সময় দেওয়াল ধসে যায়।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৭
পিএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।