তবে গত ৩০ জুলাই জলাবদ্ধ এলাকার একাংশ অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মনদীপ ঘরাইয়ের এক ফেসবুক স্ট্যাটাস বদলে দিয়েছে দৃশ্যপট। কোনো জনপ্রতিনিধি, অনুদান নয়, এলাকাবাসীই উদ্বুদ্ধ হয়ে দিচ্ছে স্বেচ্ছাশ্রম।
শুক্রবার (৪ আগস্ট) উপজেলার ভৈরব নদের সঙ্গে যুক্ত আমডাঙ্গা থেকে মুক্তেশ্বরী নদী পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার খাল অবমুক্ত করতে লেগে পড়েছেন এলাকাবাসী। প্রায় দেড় সহস্রাধিক মানুষ সাঁতরিয়ে ওঠাচ্ছেন কচুরিপানা। তুলছেন নেট-পাটা। আর এই কর্মযজ্ঞে খালে নেমে পানিতে ভিজে নেতৃত্বে রয়েছেন খোদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মনদীপ ঘরাই।
সরেজমিন অভয়নগর উপজেলার সুন্দলী এলাকার পাথরঘাটা খালে নিয়ে দেখা যায়, শ’দুয়েক মানুষ কচুরিপানা তুলছেন। এদের মধ্যে সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ যেমন রয়েছেন, তেমন রয়েছে ১৫ বছরের কিশোর। পানিতে নেমে কাজ করছে স্কুলছাত্রী, সামাজিক সংগঠনের সদস্য, রাজনৈতিক কর্মীও।
একই চিত্র দেখা গেলো উপজেলার ওয়াবদা, ভাটবিলা, ফুলেরগাতি, রাজাপুর এলাকায়। এসব এলাকার খালের কচুরিপানা আর নেট-পাটা অপসারণে স্বেচ্ছাশ্রমে পানিতে নেমে গেছেন শত শত নারী-পুরুষ।
কাজের ফাঁকে পাথরঘাটা খালে কথা হয় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিকাশ রায় কপিলের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ইউএনও সাহেব এই উদ্যোগ নিয়েছেন। তার একটি স্ট্যাটাস দেখে স্থানীয় যুবকরা আমাকে জানায়। এরপর আমি নিজে তার সঙ্গে কথা বলেছি। স্থানীয়দের বুঝিয়েছি। তারা সবাই নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করার উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী দু’দিনের মধ্যে আমরা ২০ কিলোমিটার খাল পানি চলাচলের জন্য উপযুক্ত করে ফেলবো।
এ বিষয়ে প্রধান উদ্যোক্তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মনদীপ ঘরাই বাংলানিউজকে বলেন, খালে জমে থাকা কচুরিপানার কারণে পানি সরতে পারছে না। এজন্য বন্যা পরিস্থিতির দিন দিন অবনতি হচ্ছে। এ নিয়ে করণীয় ভাবতে গিয়ে আমার মাথায় কচুরিপানা অবমুক্তকরণের বিষয়টি আসে। এ কাজে স্থানীয় জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি আহ্বান জানাই। চারশোজন কর্মঠ ব্যক্তিকে এ কাজে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানাই। কিন্তু কাজে এসে দেখি দেড় হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, আশা করছি আমরা আমাদের পরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবো। কাজ শেষে দুপুরে একসঙ্গে খিচুড়ি ও ডিম ভাজি খাওয়ার আয়োজন করেছি। এছাড়াও অংশগ্রহণকারী সবাইকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বীকৃতি সনদ দেওয়া হবে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জলাবদ্ধ অঞ্চলের অভয়নগর অংশের সীমানা খাল ও ডুমুরিয়া খাল কচুরিপানায় এতোটাই ভরে গেছে যেখান দিয়ে পানি সরতে পারছে না। এই কচুরিপানা অপসারণে শুক্র ও শনিবার কাজ করবে দেড় সহস্রাধিক স্বেচ্ছাসেবী। যাদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক, সাংবাদিক, কবি, লেখক, জনপ্রতিনিধি, শ্রমজীবী, পেশাজীবী, সাংস্কৃতিক সংগঠক, এনজিও কর্মী, মুক্তিযোদ্ধা, ছাত্র-ছাত্রী, সমাজসেবক, নারী নেত্রী, সরকারি, বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ স্থানীয় সাধারণ মানুষ।
এর আগে বৃষ্টিতে ভিজে খালের নেট-পাটা উচ্ছেদে নামেন ইউএনও মনদীপ ঘরাই। এতে দুর্গতদের আস্থা অর্জন করেন তিনি। অভয়নগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে যোগ দিয়ে তিনি অফিস দালালমুক্ত করেন। ভূমি অফিসের মধ্যে অরক্ষিত জায়গা পরিপাটি করে গড়ে তোলেন মুক্তিযুদ্ধ অঙ্গন। যেখানে যশোরের মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র ও ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০১৭
এএ