ট্রেন বা বাসের ছাদে, দরজা-জানালায় বাদুরঝোলা হয়ে ঝুলেও আপনজনের কাছে ফিরছে মানুষ। মা-বাবা, ভাই-বোন আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ঈদের বাঁধভাঙা আনন্দ উপভোগ করতে হাসি মুখে সইছে পথের হাজারও যাতনা।
শনিবার (২৪ জুন) শেষ কর্মদিবস, তাই শেষ মুহূর্তে রেল ও সড়ক পথে বাড়ি ফিরছেন বিপুল সংখ্যক ঘরমুখী মানুষ। তাই সকাল থেকেই জনসমাগম বেড়েছে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে।
স্টেশনের বাইরে যানবাহনের বাড়তি জটলা ক্ষণে ক্ষণে জানান দিচ্ছে ট্রেন আসছে। আসছে হাজারও যাত্রী। তাই ঈদ উপলক্ষে রেল যাত্রীদের বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে স্টেশন চত্ত্বরেও।
বর্তমানে রেল ভ্রমণের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি করা হচ্ছে সিসি টিভি ক্যামেরায়। জিআরপি পুলিশের টহলের পাশাপাশি কাজ করছে রেলের নিরাপত্তাকর্মীরাও। কাউকে সন্দেহ হলেই চালানো হচ্ছে তল্লাশি। তাদের সঙ্গে রয়েছে বিজিবি ও এলিট ফোর্স র্যাব। এছাড়া যাত্রীদের হয়রানি এড়াতে প্রথমবারের মতো রেল স্টেশনে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্ববধানে ভ্রাম্যমাণ আদালত স্থাপন করা হয়েছে।
শনিবার দুপুরে রাজশাহী রেল স্টেশনে কথা হয় রাজধানী থেকে আসা সরকারি কর্মচারী আফসাদ আহমেদের সঙ্গে।
তিনি বাংলানিউজকে জানান, পথে কষ্টের সীমা নেই। আগাম টিকিট কাটার পরও নির্ধারিত আসনে বসে পরিবারে নিয়ে রাজশাহী আসতে পারেননি। ভোরে কমলাপুর রেল স্টেশনের আসার পর তিনি দেখতে পালেন পুরো ট্রেনই মানুষে ঠাসা। কোথাও যেন তিল ধারণেরও ঠাঁই নেই। এরপর জানালা দিয়ে অনেক কষ্টে স্ত্রী, সন্তানকে ভেতরে ঢুকিয়েছেন। তিনি এসেছে দরজায় দাঁড়িয়ে। যেই বগির টিকিট ছিল মানুষের চাপে সেখানে পৌঁছাতেই পারেননি। যে বগিতে উঠেছেন, সেখানেই দাঁড়িয়ে বসে পথটা পাড়ি দিয়ে এসেছেন। তবে সিডিউল বিপর্যয় না থাকায় রক্ষা। অনেক কষ্ট হলেও সময় মতো রাজশাহী ফিরতে পেরেছেন।
তবে পথের এতো ভোগান্তির পরও প্যান্টের পকেট থেকে রুমাল বের করে মাথার ঘাম মুছতে মুছতে আফসাদ আহমেদ বলেন, ‘মায়ের সঙ্গে ঈদ করার যেই আনন্দ, তার কাছে পথের এই কষ্ট কিছুই না’।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সুপারিনটেনডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ছয় বছর পর রাজশাহী-ঢাকা রুটে এবার ঈদ স্পেশাল ট্রেন সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এছাড়া ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ সামলাতে এরই মধ্যে বিভিন্ন রুটের ট্রেনে ২৮টি বাড়তি কোচ সংযোজন করা হয়েছে। তাই কিছুটা দুর্ভোগ কমেছে। বাড়তি চাপ থাকলেও রেলপথে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিরাপদে মানুষ বাড়ি ফিরতে পারছেন।
তিনি বলেন, এবার ঈদে পশ্চিম রেলের যাত্রীদের নিরাপদ ভ্রমণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরায় মনিটরিং ছাড়াও থাকছে বিশেষ টহল। রেল স্টেশনের নিরাপত্তায় রেল পুলিশ, জিআরপি পুলিশের পাশাপাশি পর্যবেক্ষণে থাকছেন বিজিবি ও র্যাব সদস্যরাও। টিকিট কালোবাজারি, প্রতারণা, যাত্রী হয়রানিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক সন্ত্রাসী তৎপড়তা বন্ধে তারা কাজ করছেন। এছাড়া যাত্রাকালীন দুর্ঘটনা এড়াতে পর্যবেক্ষণ চলছে রেলপথেও। বিশেষ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ সেঁতুগুলোও।
এক প্রশ্নের জবাবে জিয়াউর রহমান বলেন, এবার আগে থেকেই রেল লাইন সংষ্কার ও পর্যবেক্ষণ কাজ শেষ হয়েছে। তাই ঈদের বাড়তি চাপেও বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা নেই। তবে ঈশ্বরদী-উল্লাপাড়া সেকশনের কৈডাঙ্গা ও শান্তাহার-জয়পুরহাট সেকশনের হলহলিয়া ব্রিজ দু’টি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় কর্তৃপক্ষ সতর্ক রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৭
এসএস/জিপি