ঢাকা, বুধবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ মে ২০২৪, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জাতীয় গণগ্রন্থাগারে কোনো কথা নয়, শুধুই পড়া

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৭
জাতীয় গণগ্রন্থাগারে কোনো কথা নয়, শুধুই পড়া সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারে পড়ায় ব্যস্ত বইপ্রেমীরা/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: রাজধানীর শাহবাগের সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগার ভবনের নান্দনিক স্থাপত্যশৈলি মনে মুগ্ধতার আবেশ ছড়ায়। পাঠকক্ষের অপরুপ দৃশ্যও কেবলই বই পাঠের প্রেরণা দেয়। শত শত পাঠক চুপচাপ বসে বইয়ের ভেতরে গভীর মনোনিবেশ করে আছেন। কেউবা বই থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য খাতায় টুকছেন।

সবকিছুই চলছে নি:শব্দে। সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষটিতে একেবারে পিনপতন নীরবতা।

স্নিগ্ধ, কোমল, নমনীয়, শান্ত পরিবেশটিই যেন পবিত্রতা ছড়াচ্ছে। সকলে মিলে পড়ার এ দৃশ্য দেখার মতো, চমৎকার।

ভবনের ব্যতিক্রম সিঁড়িটিও আকর্ষণীয়। দোতলার পাঠকক্ষে যাওয়ার এ সিঁড়ির ধাপগুলো দু’টি দেয়ালের মাঝে ৯০ ডিগ্রি কোণ রেখে নিচ থেকে ওপরের দিকে তোলা হয়েছে। বাইরের তপ্ত রোদে অনেকেই সিঁড়ির ওপরের শ্যাডোর তলে বসে বিশ্রাম নেন।

তবে পড়ুয়াদের ঢোকা আর বের হয়ে যাওয়ার দৃশ্যটি সবচেয়ে সুন্দর।
সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগার/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
জাতীয় গণগ্রন্থাগার ‍তিন ভাগে বিভক্ত। নিচ তলায় শিশু কর্নার। লাল রঙা সিঁড়ির ধাপ মাড়িয়ে দোতলার সোজা সামনের কক্ষটি সাধারণ সেকশন আর তৃতীয় তলায় বিজ্ঞান ও রেফারেন্স সেকশন।

শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সাধারণ পাঠকক্ষ খোলা থাকে। শিশু পাঠকক্ষ খোলা থাকে রোববার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এখানকার মুক্তিযুদ্ধ কর্নারের কাঁচের বাক্সে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান সংরক্ষিত আছে। জাতীয় গণগ্রন্থাগারকে এটি বঙ্গভবনের তোষাখানা থেকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের ইতিহাস ও রাজনীতি সংশ্লিষ্ট বইগুলোও এ কর্নারে রয়েছে।

সাধারণ সেকশনের পশ্চিমের এককোণে জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের পড়ার স্থান। সেখানে আহমেদ আলী বলেন, ‘জ্ঞান অর্জনের কোনো বয়স নেই। এখানে নানা ধরনের বই রয়েছে। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর বই পড়ার অনেক সুযোগ এসেছে। তাই মাঝে মাঝেই এখানে এসে পড়ি’।

সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারে পড়ায় ব্যস্ত বইপ্রেমীরা/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
লাইব্রেরি সহকারী ইসরাত জাহান মুক্তা বলেন, ‘যারা এখানে পড়ছেন, তারা ভোরে এসে লাইন ধরে ভেতরে ঢোকেন। আর বের হয়ে যান রাতে। অনেক সময় বসার জায়গা না পেয়ে অনেকেকে দাঁড়িয়েও থাকতে হয়’।

‘যারা এখানে আসেন, তারা কোনো সমস্যা তৈরি করেন না। প্রত্যেকেই গুরুত্বটা বোঝেন। তাই সব সময় পিনপতন নীরবতা থাকে। এখানে কোনো কথা নয়, কেবল পড়ার জন্যই সবাই আসেন’।

প্রিন্সিপাল লাইব্রেরিয়ান মো. জিল্লুর রহমান জানান, জাতীয় গণগ্রন্থাগারের সদস্য সংখ্যা ২৫০ জন। যারা ৫শ’ টাকা ফেরতযোগ্য) দিয়ে সদস্যপদ নেন। সদস্য হলে ১৫ দিনের জন্য বাড়িতে বই ধার করে নেওয়া যায়। তবে নির্ধারিত দিনের মধ্যে বই ফেরত না দিলে প্রতিদিনের জন্য ১০ টাকা করে ফি দিতে হয়।

সহকারী পরিচালক ফাতেমা খাতুন জানান, গত ফেব্রুয়ারি মাসে এখানে এসে পাঠ করেছেন ৭৫ হাজার ৪৮৪ জন। মার্চে এসেছেন ৮১ হাজার ১৩২ জন। মার্চে ৩ হাজার ৪৯ জন শিশু পাঠকও এসেছিল।
সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের ভেতরে/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের মহাপরিচালক আশিষ কুমার সরকার বলেন, ‘জাতীয় গণগ্রন্থাগারে মোট ২ লাখ ৬ হাজার ৯শ’ বই রয়েছে। রয়েছে অনেক দুষ্প্রাপ্য বইও। প্রতি বছর নতুন বইও কেনা হচ্ছে। শিগগিরই নতুন বই কেনার পর আমরা নিউ অ্যারাইভাল বলে প্রচারণাও চালাবো’।

তিনি আরো বলেন, ‘একটি জাতীয়, পাঁচটি বিভাগীয়, ৫৮টি জেলা, চারটি শাখা সরকারি এবং জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ ও বকশিগঞ্জ উপজেলাসহ মোট ৭০টি গণগ্রন্থাগার রয়েছে দেশে। প্রতিটি গণগ্রন্থাগারেই সুন্দর, মনোরম, শান্ত, স্নিগ্ধ পাঠকক্ষ রয়েছে। রয়েছে বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ। বিভাগীয় পর্যায়ের গ্রন্থাগারগুলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত’।

‘৭০টি গণগ্রন্থাগারেই প্রতিদিন উল্লেখ্যযোগ্য হারে পত্রিকা রাখা হয়। তবে সবচেয়ে বেশি থাকে জাতীয় গণগ্রন্থাগারে। এখানে প্রতিদিন ৯টি পত্রিকা ছাড়াও ২২টি দেশি-বিদেশি সাময়িকী রাখা হয়’।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৮
ইইউডি/এএসআর

আরও খবর...


** ‘পাঠাগার নয়, কোচিং সেন্টার প্রিয় অভিভাবকদের’
** জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রে বই আছে, পাঠক নেই!
** ‘জনবল ও অর্থ সংকটে’ বাংলা একাডেমি গ্রন্থাগার
** খুলনা বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারের দুর্দশা চরমে
** ময়মনসিংহের আলোর পাঠশালায় দু’দিন তালা!
** বরিশাল গণগ্রন্থাগারের সেমিনার কক্ষও বেহাল!
** গরুর অভ্যর্থনা মৌলভীবাজার গণগ্রন্থাগারে!
** ফেনীর পাবলিক লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে জম্পেশ আড্ডা
** মানিকগঞ্জ সরকারি গণগ্রন্থাগার কুকুরের বিচরণক্ষেত্র!
** সপ্তাহে ৩ দিনই ছুটি দিনাজপুর পাবলিক লাইব্রেরিতে!‍
** কুষ্টিয়া পাবলিক লাইব্রেরির হালচাল
** পাঠকের খোরাক সাতক্ষীরা পাবলিক লাইব্রেরিতে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।