ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ মে ২০২৪, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

'ফুটে'র টাকা ভাগাভাগি নিয়েই ঘটে হত্যাকাণ্ড

শেখ জাহাঙ্গীর আলম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৭
'ফুটে'র টাকা ভাগাভাগি নিয়েই ঘটে হত্যাকাণ্ড সিজান রেস্টুরেন্ট

ঢাকা: রাজধানীর নিউ মার্কেট। হকারদের ব্যবসা করার জন্য এই এলাকায় রয়েছে ছয়টি ফুট (হকারদের বসার স্থান)। চাঁদনী চক মার্কেটের সামনে রাস্তার পাশেই রয়েছে দুই ফুট। এই দু’টিকে চাঁদনী চকের ফুট বলা হয়। 

চাঁদনী চকের এই দু’টি ফুটের টাকা (চাঁদা) তুলতেন খোকন, বাবুল এবং শাহবুদ্দিন। মূলত এই ফুটের টাকা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করেই শাহবুদ্দিনের ছুরিকাঘাতে খুন হন খোকন মোল্লা (৩০)।

এসময় আহত বাবুল বেপারী (৩৮)।

নিউমার্কেটের চাঁদনী চকের একাধিক ব্যবসায়ী ও পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এমনটাই জানিয়েছেন।

এর আগে, বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পৌনে ২টার দিকে রাজধানীর চাঁদনী চক মার্কেটের তৃতীয় তলায় সিজান রেস্টুরেন্টের সামনে বাবুল ও খোকনকে ছুরিকাঘাত করেন শাহবুদ্দিন। এই ঘটনায় খোকন মোল্লা নিহত হন। আর ছুরিকাঘাতে আহত বাবুল বেপারী বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) নিহত খোকন মোল্লার স্ত্রী মিনারা বেগম বাদী হয়ে শাহাবুদ্দিন, হানিফসহ মোট পাঁচজনকে আসামি করে নিউমার্কেট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

এদিকে, নিহত খোকন ও আহত বাবুলের পরিবারের সদস্যরা জানান, তিনদিন আগে শাহবুদ্দিন, সোহেল ও হানিফ মার্কেটের ছাদে বসে মাদক সেবন করছিলেন। এতে বাবুল বাঁধা দেওয়ায় তিনদিন পর পরিকল্পিতভাবে খোকন ও বাবুলকে ছুরিকাঘাত করা হয়।  

অপরদিকে, তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণ তদন্তে বেরিয়ে এসেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই বিস্তারিত কিছু বলা যাবে না বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।  এখানেই ছুরিকাঘাত করা হয়

নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, শুধু মাদক সেবনে বাঁধা দেওয়ার কারণে এ হত্যাকাণ্ড হয়নি। পূর্ব শক্রতার জেরে এ হত্যার ঘটনা ঘটেছে।

এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। তদন্ত চলছে। আসামিরাও শনাক্ত হয়েছেন। তাদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে বলেও জানান তিনি।

মার্কেট সমিতির একটি সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, চাঁদনী চক মার্কেটের সামনে এই দু’টি ফুট থেকে সপ্তাহে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা চাঁদা তোলা হতো। এই টাকা শাহবুদ্দিন, বাবুল ও খোকন ভাগবাটোয়ারা করতেন। শুধু তাই নয়, এই তিনজনেরই চাঁদনী চকে কসমেটিকসের দোকান রয়েছে। এছাড়া তারা তিনজনই পুরো মার্কেটে পানি সরবরাহ করতেন। এই ব্যবসাও তাদের তিনজনেরই।     

এদিকে, স্থানীয় একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, বাবুল, শাহবুদ্দিন ও খোকন সব সময় এক সঙ্গেই থাকতেন। মার্কেটের অন্যান্য দোকানিদের থেকে তাদের মধ্যে সম্পর্ক ভালো ছিল।  

মার্কেট সমিতি সূত্র জানিয়েছে, বেশ কিছুদিন ধরে তাদের মধ্যে ফুটের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। ফুট থেকে তোলা টাকা বাবুলের কাছে ছিল। যার ভাগ চাচ্ছিলেন শাহবুদ্দিন। বুধবার দুপুরে তারা চাঁদনী চকের তৃতীয় তলায় সিজান রেস্টুরেন্টে বসে টাকা ভাগাভাগির বিষয়ে কথা বলছিলেন। একপর্যায়ে শাহবুদ্দিন উত্তেজিত হয়ে বাবুলকে ছুরি দিয়ে আঘাত করতে গেলে খোকন তাকে বাঁচাতে এগিয়ে যান। এসময় শাহবুদ্দিন ওই দু’জনকেই কুপিয়ে জখম করেন। পরে খোকনের মৃত্যু হয়।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিহত খোকন মোল্লার বাড়ি ফরিদপুরের সালথা উপজেলার ফুলবাড়ী গ্রামে। তার বাবার নাম কালু মোল্লা। স্ত্রী মিনারা বেগম ও তিন মেয়ে পিয়া (১২), আছিয়া (৮) ও আনিকাকে (২) নিয়ে কামরাঙ্গীরচরের খলিফাঘাট এলাকায় বসবাস করতেন তিনি।  

অপরদিকে, আহত বাবুল ভোলা জেলার নজু মিয়ার ছেলে। তিনি কামরাঙ্গীরচরে রনি মার্কেট এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। বাবুল নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাতে ব্যবসা করেন। এর পাশাপাশি যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে তার।

এদিকে, মার্কেট সমিতির একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) চাঁদনী চক মার্কেটের ছাদে মাদক সেবন করছিলেন শাহবুদ্দিন, হানিফ ও সোহেলসহ কয়েকজন। খোকন মোল্লা এর প্রতিবাদ করেন। এছাড়া মাদক সেবনে বাঁধা দেওয়ায় বাবুলের সঙ্গেও তাদের বিরোধ হয়েছিল। পরে এ নিয়ে বিচার-সালিশও হয়েছিল।

নিহত খোকনের স্ত্রী মিনারা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, তিন সন্তান নিয়ে আমি এখন কী করবো? কই যাবো? আমি আমার স্বামীর খুনের বিচার চাই।

তবে, দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ চলছিল বলেও জানান তিনি।  

**মাদকের দ্বন্দ্বে খুন হয় খোকন

বাংলাদেশ সময়: ০১৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৭
এসজেএ/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।