ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

মক্কার দর্শনীয় কিছু স্থান

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৭
মক্কার দর্শনীয় কিছু স্থান মুসলমানদের কিবলা কাবাঘর

ইসলামের ইতিহাসে ৬৩১ খ্রিস্টাব্দে নবম হিজরিতে হজের বিধান ফরজ হয়। পরের বছরে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ আদায় করেন। 

তিনি যেখানে, যে সময়ে, যে তারিখে, যে নিয়মে যেসব আহকাম-আরকান পালন করেন, প্রতিবছর ৮ থেকে ১৩ জিলহজ মক্কা মোকাররমা এবং এর ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নির্দিষ্ট নিয়মে সেভাবেই পবিত্র হজ পালিত হয়।

বছরের চাকা ঘুরে আবারও হজ মৌসুম শুরু হয়েছে।

হজ পালন উপলক্ষে এখন মক্কায় অবস্থান করছেন বিভিন্ন দেশের মুসলমানরা। এবার প্রায় ৩০ লাখ মুসলমান হজ পালনের জন্য সৌদি আরব গমন করবেন। হজ ও ওমরার অবসরে দেখতে পারেন দর্শনীয় বেশ কিছু স্থান। সে সব স্থানের অন্যতম হলো-

কাবাঘর: মুসলমানদের কিবলা কাবাঘর। এটা আল্লাহতায়াআলার এক অপূর্ব সৃষ্টি। হজের মৌসুমে প্রতিবছর লাখ লাখ মুসলমান কাবাঘর তাওয়াফ করতে মক্কায় গমন করেন। পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলে মক্কা নগরীর অবস্থান হওয়ায় আল্লাহতায়ালা ‘বায়তুল্লাহ’ বা ‘কাবাঘর’ মক্কাতেই স্থাপন করেন। আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতারা সর্বপ্রথম দুনিয়াতে কাবাগৃহ নির্মাণ করে এখানে ইবাদত করেন। কাবাঘরটি আল্লাহর আরশে মুয়াল্লার ছায়াতলে সোজাসুজি সপ্তম আসমানে অবস্থিত সম্মানিত মসজিদে বাইতুল মামুরের আকৃতি অনুসারে ভিত্তি স্থাপন করা হয়।  

আল্লাহতায়ালা কাবাগৃহকে মানব জাতির ইবাদতের কেন্দ্রস্থলরূপে নির্দিষ্ট করেন। কাবাঘর প্রায় বর্গাকৃতির। এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ যথাক্রমে আনুমানিক ৪৫ ও ৪০ ফুট। কাবা শরিফের দরজা একটি এবং দরজাটি কাবাঘরের পূর্ব দিকে অবস্থিত। কাবাঘরের চারদিকে অবস্থিত তওয়াফের স্থানকে ‘মাতাফ’ বা চত্বর বলা হয়।
হাজরে আসওয়াদ
হাজরে আসওয়াদ: কাবা শরিফের দক্ষিণ-পূর্বকোণে মাতাফ (তাওয়াফের জায়গা) থেকে দেড় মিটার ওপরে লাগানো ‘হাজরে আসওয়াদ’ বা কালো পাথর একটি প্রাগৈতিহাসিক ইসলামি নিদর্শন ও বহু মূল্যবান বরকতময় বেহেশতের উপকরণ।

কাবাগৃহের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে প্রায় চার ফুট উঁচু দেয়ালের কিছুটা ভেতরে পুঁতিত কালো থালার মতো একটি গোল পাথরের নাম হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথর। পাথরটি প্রথমে সাদা ছিল। বনী আদমের চুম্বন ও গোনাহ আকর্ষণ হেতু ক্রমে পাথরটি কালো হয়ে গেছে। পাথরটির চারপাশে রূপার বৃত্ত লাগানো।  
মাকামে ইবরাহিম
মাকামে ইবরাহিম: কাবা শরিফের পাশেই আছে ক্রিস্টালের একটা বাক্স, চারদিকে লোহার বেষ্টনী। ভেতরে বর্গাকৃতির একটি পাথর। পাথরটির দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা সমান, প্রায় এক হাত। এ পাথরটিই মাকামে ইবরাহিম। ‘মাকাম’ শব্দের অর্থ হচ্ছে- দাঁড়ানোর স্থান অর্থাৎ হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর দাঁড়ানোর স্থান। এ পাথরে দাঁড়িয়ে তিনি কাবা শরিফ নির্মাণ করেন। কাবা শরিফ থেকে মাকামে ইবরাহিমের দূরত্ব হচ্ছে ২৭ হাত।

মাকামে ইবরাহিম অর্থাৎ আল্লাহর ঘরের দরজার সামনে হজরত আদম (আ.) নামাজ পড়েছেন এবং তার পাশেই হজরত জিবরাইল (আ.) নামাজ পড়ে নবী করিম (সা.) কে নামাজের প্রথম সময় ও শেষ সময় এবং নামাজের তরিকা সম্বন্ধে ধারণা দিয়েছেন। এজন্য এই জায়গাটাকে মুসল্লায়ে আদম বা মুসল্লায়ে জিবরাইল বলা হয়।
আরাফাতের ময়দান
আরাফাতের ময়দান: প্রথম মানব হজরত আদম (আ.) ও মাতা হজরত হাওয়া (আ.)-এর স্মৃতিবিজড়িত স্থান আরাফাতের ময়দান। মক্কা থেকে ১৫ কিলোমিটার নিকটবর্তী সুবিশাল আরাফাতের ময়দান মুখরিত ও প্রকম্পিত করে বিশ্বের লাখ লাখ মুমিন বান্দা পবিত্র হজ পালন করেন।

ভাষা, বর্ণ ও লিঙ্গের ভেদাভেদ ভুলে বিশ্বের প্রায় ১৭২টি দেশের ২৫/৩০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান প্রতিবছর হজ পালনের লক্ষ্যে মিনা থেকে আরাফাতে গমন করেন। মূলত ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই হজ। এ প্রসঙ্গে হজরত নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আরাফাতে অবস্থান করাই হজ। ’ –তিরমিজি
জমজম কূপ
জমজম কূপ: কাবাগৃহের দ্বারপ্রান্তে মক্কা শরিফে অবস্থিত ‘জমজম কূপ’ আল্লাহর অসীম কুদরতের একটি অপূর্ব নিদর্শন। আরবদের কাছে জমজম শব্দের অর্থ প্রাচুর্য ও জমা হওয়া। পৃথিবীতে যত আশ্চর্যজনক সৃষ্টি রয়েছে, জমজম কূপ তন্মধ্যে অন্যতম। জমজমের পানি কখনও নিঃশেষ হয় না, যা অতি পবিত্র ও উপকারী।  

নবজাত শিশু হজরত ইসমাঈল (আ.)-এর পিপাসা নিবারণের জন্যই স্বর্গীয় আবে শেফা, আবে রহমত ও বরকতময় জমজম পানির উত্পত্তি হয়েছিল।  
মিজাবে রহমত
মিজাবে রহমত: বায়তুল্লাহর উত্তর দিকের ছাদে (হাতিমের মাঝ বরাবর) যে নালা বসানো আছে- তাকে ‘মিজাবে রহমত’ বলা হয়। এই নালা দিয়ে ছাদের বৃষ্টির পানি পড়ে।  
হাতিম
হাতিম: কাবাঘরের উত্তর দিকে অর্ধবৃত্তাকার মানুষ-সমান উঁচু প্রাচীরে ঘেরা একটি স্থান।  
জান্নাতুল মুআল্লা
জান্নাতুল মুআল্লা: মসজিদুল হারামের পূর্ব দিকে মক্কা শরিফের বিখ্যাত কবরস্থান।  

গারে হেরা: মক্কার সর্বাধিক উচ্চ পাহাড়ের একটি নির্জন স্থান। এখানে নবী করিম (সা.) ধ্যানমগ্ন থাকতেন এবং এখানেই সর্বপ্রথম অহি নাজিল হয়।

গারে সাওর: মসজিদুল হারামের পশ্চিমে হিজরতের সময় এই প্রকাণ্ড সুউচ্চ পাহাড়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তিন দিন অবস্থান করেছিলেন।
জাবালে রহমত
জাবালে রহমত: আরাফাতের ময়দানে অবস্থিত। এ পাহাড়ে সর্বপ্রথম নবী হজরত আদম (আ.)-এর দোয়া কবুল হয়। এখানে তিনি হজরত হাওয়া (আ.)-এর সাক্ষাত পান। নবী করিম (সা.) বিদায় হজের ভাষণ এখান থেকেই দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন
জেদ্দায় পৌঁছেছে প্রথম হজ-ফ্লাইট
ঢাকায় ফেরার পর প্রতি হাজিকে জমজমের ৫ লিটার পানি​
আল্লাহুম্মা লাব্বায়েকের ডাকে ঢাকা ছাড়লো ১ম ফ্লাইট
কাতারের নাগরিকদের হজ পালনে বাধা নেই
সংক্ষিপ্ত হজ গাইড: হজের কিছু বিশেষ স্থান ও পরিভাষা
সংক্ষিপ্ত হজ গাইড: হজের ধারাবাহিক কার্যক্রম
সংক্ষিপ্ত হজ গাইড: হজযাত্রীদের জন্য কিছু জরুরি পরামর্শ
সংক্ষিপ্ত হজ গাইড: মক্কায় পৌঁছার পর করণীয়
সংক্ষিপ্ত হজ গাইড: হজযাত্রীদের যা জানা আবশ্যক
নিবন্ধনের শেষদিন: হজের ১৫০ কোটা এখনও পূরণ হয়নি
মক্কা-মদিনায় প্রিয় নবী সা.-এর স্মৃতিময় কিছু স্থান
হজযাত্রীদের ট্রলি-ব্যাগ সরবরাহে অনিয়মে ছাড় নয়
সৌদির সঙ্গে সরাসরি হজ ফ্লাইট চায় ইসরাইল!
বেসরকারি হজযাত্রীদের ভিসার আবেদন গ্রহণ শুরু হয়েছে
হজের সময় সরকারি হজযাত্রীদের নিজ দায়িত্বে খেতে হবে
বাংলাদেশি হাজীদের স্বাস্থ্যসেবায় ২৬৭ সদস্যের দল ঘোষণা​
ইংল্যান্ড থেকে সাইকেলযোগে হজ পালনে যাত্রা শুরু
প্রতিবন্ধীকে কাবা তওয়াফে সহযোগিতার হৃদয়স্পর্শী ঘটনা
পবিত্র হজযাত্রায় যেসব উপকরণ সঙ্গে নিতে হবে
পবিত্র হজযাত্রার প্রস্তুতিতে যেসব বিষয় মনে রাখা দরকার
বদলি হজের বিধি-বিধান
২০১৮ সালের হজের প্রাক-নিবন্ধন শেষের পথে!
হজের সময় ইরানকে অস্থায়ী দূতাবাসের অনুমতি সৌদির
হাজীদের ট্রলি ব্যাগ দেবে এজেন্সি, তদারকি করবে হাব
২৪ জুলাই থেকে হজ ফ্লাইট, ১২ জুলাই থেকে টিকা
হাজীদের স্বস্তি দিতে বহুমাত্রিক ডিজিটাল ছাতা
সমুদ্রপথে পুনরায় হজ রুট চালু করবে ভারত

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।