মহানবী (সা.) শ্রমিকের মর্যাদা ভালোভাবে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। তার কারণ—তিনি নিজেও জীবনে শ্রমের কাজ করেছেন।
আর এই পেশা সব নবী-রাসুলেরই জীবনের অংশ ছিল। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘নবুয়ত ও রিসালাতের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হওয়ার আগেই সব নবী ও রাসুল বেশ কিছুকাল পশুচারণ ও পালন করেছেন। ’ একবার তাঁকে প্রশ্ন করা হলো—‘আপনিও কি পশুচারণ করেছেন?’ জবাবে মহানবী (সা.) বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি বেশ কিছু দিন কারারিত উপত্যকায় মক্কাবাসীদের পশু চড়িয়েছি। ’
শ্রমিকের মজুরি নির্ধারণ ও পরিশোধের ব্যাপারে আল্লাহর নবী (সা.) সতর্ক ও ইনসাফপূর্ণ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘মজুরি নির্ধারণ ছাড়া কোনো শ্রমিককে কাজে নিয়োগ করা অনুচিত। ’ (নাসাঈ, হাদিস : ৩৫৮২)
শ্রমিক যাতে কাজ করার আগে তার শ্রমের মূল্য জানতে পারে, তার ব্যবস্থা করেছেন মহানবী (সা.)। কারণ পাছে মজুরি নিয়ে মনোমালিন্য যাতে না হয়।
মহানবী (সা.) বলেন, ‘তুমি যখন কোনো মজুর নিয়োগ করবে তখন তাকে তার মজুরি কত হবে অবশ্যই জানিয়ে দেবে।
’ (বুলুগুম মারাম, হাদিস : ৯১৪)
শ্রমিকের মজুরি বা পারিশ্রমিক পরিশোধ না করার ব্যাপারে মহানবী (সা.) সতর্ক করে বলেন, ‘কিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির সঙ্গে আমার বিবাদ হবে, এর মধ্যে একজন সে, যে মজুরের দ্বারা কাজ পুরোপুরি আদায় করে নিয়েছে, কিন্তু তার পারিশ্রমিক দেয়নি। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২২২৭)
শ্রমিকের মজুরি নিয়ে টালবাহানা না করে মহানবী (সা.) তা দ্রুত পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকাবার আগেই তার মজুরি পরিশোধ করে দাও। ’
(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৪৪৩)
শ্রমিকের বেতন বা পারিশ্রমিক পরিশোধ না করলে মালিককে ভয়াবহ পরিণাম ভোগ করার ব্যাপারেও মহানবী (সা.) সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেছেন। যারা শ্রমিকের পাওনা ঠিকমতো পরিশোধ করে না, তারা জালিম।
আর জালিমের পরিণাম সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন জালিমের পুণ্য থেকে মজলুমের পাওনা পরিমাণ পুণ্য প্রদান করা হবে। যদি তার পুণ্য শেষ হয়ে যায়, তাহলে মজলুমের পাপ জালিমের ঘাড়ে চাপানো হবে। তারপর তাকে (জালিমকে) জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৫৮১)
শুধু প্রাপ্য পারিশ্রমিকই নয়, শ্রমিককে দিয়ে বাড়তি কাজ করালে তাকে বাড়তি পারিশ্রমিক দেওয়ার কথা মহানবী (সা.) ঘোষণা করেছেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা যদি তাদের ওপর বেশি কাজ করার দায়িত্ব চাপাও, তবে সেই হিসাবে বাড়তি মজুরি দিয়ে তাদের সাহায্য করো। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৫৩৫)
আল্লাহর রাসুল (সা.) মালিক-শ্রমিকের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক গড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তোমাদের অধীন ব্যক্তিরা তোমাদের ভাই। আল্লাহ যে ভাইকে অন্য ভাইয়ের অধীন করে দিয়েছেন তাকে তাই খাওয়াবে যা সে নিজে খায় এবং তাকে তাই পরতে দিতে হবে যা সে নিজে পরিধান করে। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৬১৭)
শ্রমিকরাও মানুষ। তাই তাদের সামর্থ্যের বাইরে কাজ না দেওয়ার কথা বলেছেন মহানবী (সা.)। তিনি বলেন, ‘শ্রমিককে এমন কাজ করতে বাধ্য করা যাবে না, যদি এমনটা করতে হয়, তা হলে সে যেন তাকে সাহায্য করে। ’
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৬১৭)
মনে রাখতে হবে, মালিক-শ্রমিক দৃঢ় সম্পর্ক ও স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গির ওপর উভয় শ্রেণির সব উন্নতি ও অগ্রগতি নির্ভর করে। আমরা আমাদের ভৃত্য, গৃহপরিচারিকা, শ্রমিক ও অধীন কর্মচারীদের স্বার্থের প্রতি খেয়াল রাখব। তাদের প্রতি ইসলামের সীমারেখার মধ্যে থেকে যথাযথ আচরণ করব।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও সিনিয়র ইসলামী ব্যাংকার