ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

শবে বরাত নিয়ে বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি কোনোটাই কাম্য নয়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৯ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৭
শবে বরাত নিয়ে বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি কোনোটাই কাম্য নয় শবে বরাত নিয়ে যেমন বাড়াবাড়ি ঠিক নয়, তেমনি  ছাড়াছাড়িও সমীচীন নয়

শবে বরাত একটি মহিমান্বিত রাত। এ কথা অস্বীকারের কোনো সুযোগ নেই। শবে বরাত নিয়ে যেমন বাড়াবাড়ি ঠিক নয়, তেমনি  ছাড়াছাড়িও সমীচীন নয়।

এ রাতে করণীয় সম্পর্কে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আলী (রা.) সূত্রে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ১৫ শাবানের রাত যখন হয়, তোমরা রাতটি ইবাদত-বন্দেগিতে পালন করো এবং দিনের বেলা  রোজা রাখো। কেননা, এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহতায়ালা প্রথম আসমানে এসে বলেন, কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো।

কোনো রিজিক অন্বেষণকারী আছো কী? আমি তাকে রিজিক প্রদান কর‍বো। আছো কী  কোনো রোগাক্রান্ত? আমি তাকে আরোগ্য দান করবো। এভাবে সুবহে সাদেক পর্যন্ত আল্লাহতায়ালা মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে ডাকতে থাকেন। -সুনানে ইবনে মাজাহ

সারারাত জাগ্রত  থেকে ইবাদত-বন্দেগি করে পরদিন নফল রোজা রাখার চেষ্টা করা। তবে এ রোজা বাধ্যতামূলক নয়।

শবে বরাতে নিজের যাবতীয় গোনাহের জন্য তওবা করে রাব্বুল আলামিনের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা। নিজের মনের নেক আশা-আকাঙ্খা পূরণে ও মৃতদের মাগফিরাতের জন্য বেশি বেশি দোয়া করা।

‍নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, দোয়া-দরুদ, তওবা-ইস্তিগফার, দান-সদকা, কাজা নামাজ আদায়, কবর জিয়ারতসহ নফল আমলের মাধ্যমে রাতটি কাটানো।

শবে বরাতে কবর জিয়ারত করতেই হবে, এটা জরুরি নয়। তাই কবর জিয়ারতকে রুসম বা রেওয়াজে পরিণত করা যাবে না। হাদিসে বলা হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) চুপিসারে একাকী জান্নাতুল বাকিতে কবর জিয়ারত করেছেন। এমনকি হজরত আয়েশা সিদ্দিকাকে (রা.) নিদ্রা  থেকে জাগ্রত করেননি এবং পরবর্তীকালেও (এ রাতে) কবর জিয়ারত করার কথা বলেননি। তবে দলবদ্ধ ছাড়া একাকীভাবে কবর জিয়ারতে কোনো সমস্যা নেই।  

কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিকতা ও জামাত ছাড়া একাকীভাবে সামর্থ্য অনুযায়ী নফল ইবাদত-বন্দেগি করা। তবে হ্যাঁ, কোনো প্রকার ঘোষণা ছাড়া, প্রস্তুতি ছাড়া কিছু মানুষ একত্রিত হয়ে গেলে সমস্যা নেই।  

কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে, যেসব ইবাদত সমবেতভাবে আদায় করার প্রচলন রাসূল (সা.) থেকে প্রমাণিত, তা সমবেতভাবে আদায় করা। বাকিগুলো একাকী করা।  

ইসলামি স্কলারদের মতে, আল্লাহতায়ালা নফল ইবাদতকে নিরবে পালনকারীকে বেশি ভালোবাসেন। আর ইখলাসের সঙ্গে স্বল্প আমল ঐকান্তিকতাহীন অধিক আমল থেকে উত্তম।

শবে বরাতের আলাদা কোনো নামাজ নেই। নির্দিষ্ট সূরা দিয়ে নির্দিষ্ট রাকাত নামাজ পড়ার রীতি ভুল প্রচলন। এটা থেকে বেঁচে থাকা দরকার। পারলে রাতে ইবাদত-বন্দেগি করা। সেটা হতে পারে কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, নফল নামাজ ইত্যাদি।  

শবে বরাত উপলক্ষে হালুয়া-রুটির ব্যবস্থা, মসজিদে তাবারুকের আয়োজন, অতিরিক্ত আলোকসজ্জ্বা, রাস্তা-ঘাটে ঘুরাঘুরি করা- এ রাতের আধ্যাত্মিক আবহকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। শরিয়তে এ সব কাজের কোনো ভিত্তি নেই। এগুলো অবশ্যই বর্জন করতে হবে। এ সব কার্যক্রম কিংবা আনুষ্ঠানিকতার পেছনে পড়ে শবে বরাতের মূল উদ্দেশ্য যেন ব্যহত না হয়ে যায়- সেদিকে খেয়ালা রাখতে হবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।  
আরও পড়ুন:
** শবে বরাতে নবী করিম সা. যেসব আমল করেছেন
** শাবান মাসের রোজাকে ভালোবাসা ফজিলতের কাজ
** পবিত্র শবে বরাত: মুক্তির রাত মুক্তির নিশ্চয়তা
** ক্ষমার রাত শবে বরাতেও যারা ক্ষমা পাবে না

লেখক: ভাইস প্রিন্সিপাল, দারুল আজহার ইনস্টিটিউট, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।