ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হলেন ইমরান খান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৮
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হলেন ইমরান খান

ঢাকা: সবকিছু আগে থেকে প্রায় নির্ধারিতই ছিল। বাকি ছিল কেবল আনুষ্ঠানিকতা। শেষ তক আনুষ্ঠানিকভাবেই জাতীয় পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের ভোটে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রধান ইমরান খান। ১৯৯২ ক্রিকেট বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক দেশের ২২তম সরকারপ্রধান হিসেবে পাকিস্তান পরিচালনা করবেন।

শুক্রবার (১৭ আগস্ট) বাংলাদেশ সময় বিকেলে জাতীয় পরিষদে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন হয়। এতে তিনি মনোনীত হন সংখ্যাগরিষ্ঠ পিটিআই থেকে।

তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল মুসলিম লিগের (পিএমএল-এন) নেতা শাহবাজ শরিফ। নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৭৬ সদস্যের ভোট পান ইমরান। আর শাহবাজ পান ৯৬ সদস্যের ভোট।

শনিবার (১৮ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেবেন তিনি। রাজনীতিতে প্রবেশের প্রায় দুই দশক পর দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হচ্ছেন তিনি।

গত ২৫ জুলাই অনুষ্ঠিত দেশের সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাওয়া দল পিটিঅাই’র প্রার্থী ইমরান খান একরকম প্রধানমন্ত্রী হয়েই ছিলেন। শুক্রবার কেবল অনুষ্ঠানিক ভোটে তিনি সংসদ নেতা ও সরকারপ্রধান হলেন।

যদিও প্রধানমন্ত্রী পদে ভোটাভুটির সময় বেশ নাটকীয়তা দেখা গেছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, ভোটাভুটি শুরুর আগে করমর্দন করেন দুই প্রার্থী ইমরান ও শাহবাজ শরিফ। এরপর প্রক্রিয়া শুরুর ঘোষণা দেন নতুন স্পিকার আসাদ কায়সার। এসময় দু’জনের সমর্থনে ভোটারদের আলাদা হয়ে যেতে বলা হলে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। ইমরানের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা হাত তুললেও চেঁচামেচি করেন শাহবাজের পক্ষের পিএমএল-এন সদস্যরা।

ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল বিলাওয়াল ভুট্টোর দল পিপিপি। ভোটাভুটির শেষ মুহূর্তে পিএমএল-এন নেতারা পিপিপির কাছে ভোট চাইলেও তারা তাতে সায় দেয়নি।

পরে ইমরানকেই প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করা হয়। এরপর তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। ভাষণে ইমরান খান দাবি করেন, দেশের সবচেয়ে সম্মানিত নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র পর তাকেই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নেতৃত্বে আসতে হয়েছে। তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, যারা দেশকে লুটে নিয়েছে, তাদের কাউকে ছাড়া হবে না।

গত জুলাইয়ে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন হয়। এতে জয় পেলেও সরকার গঠনের জন্য একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি পিটিআই। এ কারণে জোট সরকার গঠন ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হতে ছোট রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র সদস্যের দ্বারস্থ হন ইমরান।

ফাঁস হওয়া পানামা পেপার্সে নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে তাকে গত বছরের জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রী পদে অযোগ্য ঘোষণা করেন সুপ্রিম কোর্ট। এতে সংসদ ভেঙে দেওয়া হলে নতুন নির্বাচন ডাকা হয়। নির্বাচনের আগে নিজের প্রচারণায় ‘নতুন পাকিস্তান’ গড়ে তোলার অঙ্গীকার দেন ৬৫ বছর বয়সী ইমরান। দুর্নীতিবিরোধী স্লোগান দিয়েও তিনি তরুণদের মধ্যে সাড়া ফেলেন।

সমালোচকেরা অবশ্য মনে করেন, ইমরান পাকিস্তানের প্রভাবশালী সশস্ত্র বাহিনীর আশীর্বাদেই সরকারপ্রধান হয়েছেন। বিগত মেয়াদে নওয়াজ সরকার গঠনের পর থেকেই তার সরকারের পদত্যাগ দাবিতে সরব ছিলেন তিনি। পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারি ছড়িয়ে পড়লে রাজপথ কাঁপিয়ে এর সুরাহার জন্য সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। যার ফল নওয়াজ সরকারের পতন। আর নির্বাচনে তার পক্ষে সেনাবাহিনীর গড়াপেটার অভিযোগ এখন সবমহলেরই জানান।

তবে সব অভিযোগ আর বিতর্ক ছাপিয়ে এখন ইমরানই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। ‘নতুন পাকিস্তান’ গড়ার যে অঙ্গীকার দিয়ে সরকারের প্রধান পদে বসেছেন তিনি, সেটা কতোটা বাস্তবায়ন করতে পারেন, সেদিকেই তাকিয়ে থাকবে ‘বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক’র ভক্তরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৮
টিএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।