ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

দল থেকে বহিষ্কার মুগাবে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৭
দল থেকে বহিষ্কার মুগাবে রবার্ট মুগাবে (ফাইল ফটো)

যা জল্পনা চলছিলো, তা-ই সত্য সত্য হলো। জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবেকে তার দল জানু-পিএফের (জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়ন-প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্ট) প্রধান পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর সপ্তাহ দুয়েক আগে যে ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাগবাকে অপসারণ করেছিলেন মুগাবে, তাকেই দলের নতুন প্রধান ঘোষণা করা হয়েছে।

রোববার (১৯ নভেম্বর) জানু-পিএফের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সভা শেষে মুগাবেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এর আগে শনিবার (১৮ নভেম্বর) প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ৯৩ বছর বয়সী এই শাসককে সরে যাওয়ার দাবিতে রাজধানী হারারেসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়।

প্রায় ৩৭ বছরের এ শাসকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে সামরিক বাহিনীর ইন্ধন রয়েছে বলে মনে করছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।

জানু-পিএফের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে অংশ নেওয়া এক সাংবাদিক জানান, ক’দিন ধরেই দলের সবার মধ্যে প্রস্তুতি চলছিলো। বৈঠকে সেই প্রস্তুতিরই প্রতিফলন দেখা গেলো। প্রায় সবাই মুগাবেকে দলীয় প্রধান থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত দেন।  

বৈঠকের স্বাগত বক্তৃতায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা ওবার্ত এমপোফু বলেন, বর্ষিয়ান নেতার (মুগাবে) কাছ থেকে ফার্স্ট লেডি গ্রেস ও তার মিত্ররা অনেক বেশি সুবিধা ভোগ করছিলেন এবং দেশের সম্পত্তির অপব্যবহার করছিলেন। সেজন্য আজ আমরা এখানে ভগ্ন হৃদয়ে মিলিত হয়েছি। আজ এই ঐতিহাসিক বৈঠক নতুন যুগের সুচনা করবে, শুধু আমাদের দলের জন্য নয়, আমাদের দেশের জন্যও। ফার্স্ট লেডি গ্রেসের সঙ্গে রবার্ট মুগাবেবৈঠকে মুগাবের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত পড়ে শোনানো হলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা। তাদের এই উচ্ছ্বাসের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।

গত ৬ নভেম্বর ভাইস প্রেসিডেন্ট নানগাগবাকে অপসারণের পর জিম্বাবুয়ে রাজনীতিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। সেনাবাহিনীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ৭৫ বছর বয়সী নানগাগবাকে ৯৩ বছর বয়সী মুগাবের উত্তরসূরী ভাবা হচ্ছিলো। কিন্তু আগামী বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ঘিরে মুগাবের ৫২ বছর বয়সী স্ত্রী গ্রেসও রাজনীতির ময়দানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে উঠে-পড়ে লাগেন।

নানগাগবার অনুসারীদের বাদি, গ্রেস এই উচ্চাভিলাস থেকে মুগাবেকে বাধ্য করেন নানগাগবাকে অপসারণ করতে। তারপর ১৩ নভেম্বর সেনাপ্রধান জেনারেল কনস্ট্যান্টিনো চুইঙ্গা সংকট সমাধানে সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করতে প্রস্তুত বলে হুঁশিয়ারি দেন। ১৪ নভেম্বর রাস্তায় নামে সেনাবাহিনীর চারটি ট্যাংক। ১৫ নভেম্বর সকাল থেকেই রাস্তায় রাস্তায় দেখা যায় সেনাটহল। সেনাবাহিনী ঘোষণা দেয়, তারা মুগাবের আশপাশের অপরাধীদের সরাতে অভিযানে নেমেছে। তবে এটা কোনো অভ্যুত্থান (ক্যু) নয় বলেও দাবি করে তারা।

সেনাবাহিনীর রক্তপাতহীন এমন ‘অভ্যুত্থান’র পর এ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। খবর ছড়ায়, সেনাবাহিনী মুগাবেকে ‘গৃহবন্দি’ করে রেখেছে। আর গ্রেস দেশে ছেড়ে পালিয়েছেন পড়শী দেশ নামিবিয়ায়। ১৭ নভেম্বর হারারের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে দেখা যায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মুগাবেকে।  

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানায়, সেনাবাহিনী মুগাবেকে আর ক্ষমতায় দেখতে চাইছে না। সেজন্য তাদের ইন্ধনে হারারেতে শুরু হয় মুগাবে-বিরোধী বিক্ষোভ। এই বিক্ষোভ থেকে অশীতিপর প্রেসিডেন্টকে সরে যাওয়ার দাবি তোলা হয়। একইসঙ্গে নানগাগবার হাতে ক্ষমতা ন্যস্ত করার দাবিও ওঠে বিক্ষোভে। তারই প্রতিফলন এলো জানু-পিএফের বৈঠক থেকে।

সেনাবাহিনী সামরিক শাসন জারি করলেও স্থগিত করেনি সংবিধান, এমনকি উৎখাত করেনি প্রেসিডেন্টকেও। কিন্তু এখন খোদ দল থেকেই মুগাবে বহিষ্কৃত হওয়ায় তিনি আর প্রেসিডেন্ট পদে থাকতে পারবেন কি-না, সে নিয়ে নতুন আলোচনা তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৭
এইচএ/

আরও পড়ুন
** রোববারই অপসারণ হচ্ছেন মুগাবে!
** মুগাবেকে ক্ষমতা ছাড়তে বললো তার দলও
** মুগাবের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে প্ররোচিত করছে সেনাবাহিনী
** গৃহবন্দি থেকে জনসম্মুখে মুগাবে
** সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন মুগাবে
** মুগাবে নিজেই করছেন পদত্যাগ!
** মুগাবে ‘গৃহবন্দি’, দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন স্ত্রী গ্রেস!
** মুগাবে আটক, নানগাগবাকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা সেনাবাহিনীর!
** জিম্বাবুয়ের নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী, ক্যু’র অভিযোগ নাকচ
** মুগাবে-সেনাপ্রধান পাল্টা বক্তব্য, রাস্তায় জলপাই ট্যাংক
** ‘অবাধ্য’ ভাইস প্রেসিডেন্টকে বহিষ্কার করলেন মুগাবে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।