ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

স্পেনের রাজার সমালোচনায় কাতালান প্রেসিডেন্ট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০১৭
স্পেনের রাজার সমালোচনায় কাতালান প্রেসিডেন্ট রাজা ষষ্ঠ ফিলিপ ও কাতালান প্রেসিডেন্ট কার্লেস পুইগডেমন্ট

কাতালোনিয়ার প্রেসিডেন্ট কার্লেস পুইগডেমন্ট তাদের স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোটকে ঘিরে স্পেনের রাজা ষষ্ঠ ফিলিপের অবস্থানের সমালোচনা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, রাজা জেনেশুনেই লাখো কাতালানকে অবজ্ঞা করছেন। 

বুধবার (৪ অক্টোবর) রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে পুইগডেমন্ট মাদ্রিদ সরকারের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় রাজার এ সমালোচনা করেন।

আগামী সপ্তাহের শুরুতেই (সোমবার, ৯ অক্টোবর) কাতালোনিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পারে ইঙ্গিত দিয়ে পুইগডেমন্ট বলেন, এই মুহূর্তে দরকার (কারও) মধ্যস্থতা।

২৪ ঘণ্টা আগে মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন রাজা ফিলিপ। সেখানে কাতালোনিয়ার গণভোটকে অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক বলে আখ্যা দেন তিনি। রাজা স্প্যানিশ জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকারও আহ্বান জানান।

পুইগডেমন্টের বুধবারের ভাষণের পর স্প্যানিশ সরকারও বিবৃতি দিয়ে বলেছে, মাদ্রিদ কাতালান নেতার কোনো ‘ব্ল্যাকমেইল’ পাত্তা দেবে না। রাজার  সমালোচনা করে তিনি দেখিয়েছেন, কতোটা বাস্তবতাবহির্ভূত চিন্তাভাবনায় রয়েছেন তিনি।

কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র বিরোধিতার মুখে রোববার (১ অক্টোবর) ওই গণভোটের আয়োজন করা হলে তাতে বাধা দেয় পুলিশ। এতে দিনভর সংঘর্ষ ও রক্তারক্তি হয়। সারাদিনে প্রায় ৯০০ স্বাধীনতাকামী আহত হয়। আহত হয় ৩০ পুলিশও।  

বরাবরের মতোই গণভোট শেষে স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাজয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, স্পেনের জনগণ এই অসাংবিধানিক গণভোট ও তার ফলাফলকে মানবে না। তবে তারপরই পুইগডেমন্ট জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, কাতালানরা স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ার অধিকার জিতে গেছে।

এরপর মঙ্গলবার এক সাক্ষাৎকারে কাতালান প্রেসিডেন্ট বলেন, আমাদের স্বাধীনতা ঘোষণা এখন কয়েকদিনের ব্যাপার মাত্র।

যদি বিষয়টি না মেনে কেন্দ্রীয় সরকার হস্তক্ষেপ করে কিংবা কাতালোনিয়ার সরকারেরও নিয়ন্ত্রণে নেয়, তবে কী হবে? এমন এক প্রশ্নের জবাবে পুইগডেমন্ট বলেন, এমন কোনো ভুল যদি করা হয়, তবে সব কিছুই বদলে যাবে।

গণভোটে পুলিশের বাধা দেওয়ায় মঙ্গলবার ধর্মঘট পালন করে কাতালানরা। আঞ্চলিক রাজধানী বার্সেলোনার রাস্তায়ই নেমেছিল প্রায় ৭ লাখ মানুষ। এই ধর্মঘটে সংহতি জানিয়ে বন্ধ ছিল নগরের দুই ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা ও এস্পানিয়লের স্টেডিয়াম এবং কার্যালয়ও।

স্পেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী প্রায় ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটারের কাতালোনিয়ায় রয়েছে ৭৫ লাখ মানুষের বসবাস, যা স্পেনের মোট জনগণের ১৬ শতাংশ। স্পেন থেকে যা রফতানি হয়, তার ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ রফতানি হয় এই অঞ্চল থেকে। স্প্যানিশ জিডিপিতে কাতালোনিয়ার অবদান ১৯ শতাংশ। স্পেনে বিদেশি বিনিয়োগের ২০ দশমিক ৭ শতাংশ যায় এই অঞ্চলে।

নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির কাতালানরা সর্বোচ্চ স্বায়ত্তশাসনের অধিকার ভোগ করলেও সাংবিধানিকভাবে পৃথক রাষ্ট্র হতে চায়। এখানকার আঞ্চলিক সরকার গত প্রায় পাঁচ বছর ধরেই আলাদা রাষ্ট্র গঠনের চাপ হজম করছে জনগণের। ২০১৫ সালের আঞ্চলিক নির্বাচনে স্বাধীনতাকামী দল বিজয়ী হলে এই চাপ আরও স্পষ্ট হয়।

তবে স্বাধীনতার দাবিতে কাতালানরা সরব হওয়ার পর থেকেই বিরোধিতা করে আসছে স্প্যানিশরা। এই বিরোধিতার মধ্যেই ২০১৪ সালে কাতালানরা পরীক্ষামূলক গণভোট করলে তার ফলাফলকে উড়িয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী রাজয়। তিনি সেসময় বৈধ উপায়ে গণভোট আয়োজনের আবদারও না মানার কথা স্পষ্ট জানিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত গণভোটের পর এখন মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার তৎপরতার দিকেই নজর ইউরোপসহ বিশ্ববাসীর।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১৭
এইচএ/

** ক’দিনের মধ্যেই স্বাধীনতা ঘোষণা করবে কাতালোনিয়া?
** ‘স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের অধিকার জিতে গেছে কাতালানরা’
** কাতালোনিয়ায় সংঘর্ষে আহত ৭৬১, ধর্মঘটের ডাক
** কাতালোনিয়ায় গণভোট নিয়ে সংঘর্ষে আহত তিন শতাধিক
** কাতালানদের স্বাধীনতার গণভোট রোববার, বার্সেলোনায় র‌্যালি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।