ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ মে ২০২৪, ০০ জিলকদ ১৪৪৫

শিক্ষা

প্রতিবন্ধীদের উপযোগী শিক্ষায় অভাব প্রশিক্ষিত শিক্ষকের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৮
প্রতিবন্ধীদের উপযোগী শিক্ষায় অভাব প্রশিক্ষিত শিক্ষকের এসডিএসএল’র মতবিনিময় সভায় অতিথিরা। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: প্রতিবন্ধী শিশুদের একীভূত শিক্ষার বিষয়ে দেশে চমৎকার সব নীতি রয়েছে, তবে সেগুলো বাস্তবায়নের জায়গাটি খুব দুর্বল। এ কারণে প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষায় দেখা যাচ্ছে নানা প্রতিবন্ধকতা।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউটের সেমিনার কক্ষে এক মতবিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা এ মতামতই দিয়েছেন। মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) এ সভার আয়োজন করে বধির ও ইশারায় ভাষা ব্যবহারকারীদের সংগঠন এসডিএসএল।

মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও প্রতিবন্ধী শিশুরা উপযোগী শিক্ষা পাচ্ছেন না। স্কুল-কলেজে প্রতিবন্ধী শিশুদের একীভূত শিক্ষা দিতে প্রশিক্ষিত শিক্ষক না থাকায় নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। এতে প্রতিবন্ধী শিশুরা স্কুলে কয়েক শ্রেণি পড়ার পর ঝরে পড়ছে।  

‘একদিকে প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা দিতে প্রশিক্ষিত শিক্ষকের যেমন অভাব, অন্যদিকে শিক্ষাগ্রহণের ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও স্কুল-কলেজে প্রতিবন্ধী শিশুদের ভর্তি নেওয়া হয় না। ’

শারীরিক প্রতিবন্ধী শামীমা সুলতানা তার বক্তব্যে বলেন, আমি শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে নিজেই শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত। তারপরও হাল ছাড়িনি। আমার ছোট বোনও প্রতিবন্ধী শিশু। ওকে স্কুল-কলেজে ভর্তি করতে গিয়েও ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।  

‘এক্ষেত্রে যেটা হয়, শিক্ষকরাই প্রতিবন্ধী শিশুকে সাধারণ স্কুলে ভর্তি করতে নিরুৎসাহিত করেন। তারা বলে থাকেন, ও পারবে না, সবার সঙ্গে মিশতে পারবে না, সবার মত বুঝবে না, এমন সব কথা বলেন। যদি প্রতিটি স্কুল-কলেজেই প্রতিবন্ধী শিশুকে শিক্ষা দিতে প্রশিক্ষিত শিক্ষক না থাকেন, তবে এমন সমস্যায় পড়তে হয়। ’

প্রতিবন্ধী শিশুর অভিভাবকরা বলেন, প্রতিবন্ধীদের জন্য শিক্ষকের বড় অভাব। প্রতিবন্ধীদের মধ্যে যারা শিক্ষিত, তাদের যদি বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, তবে তাদের মতো করে বুঝিয়ে শিক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে।

সভায় বিশিষ্টজনেরা বলেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতির বইসহ শিক্ষকের ব্যবস্থা থাকলেও শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উপযোগী কোনো শিক্ষক নেই। ফলে এই স্তরের শিক্ষার্থীরা কিছুদিন স্কুলে গেলেও ক্লাসের পাঠ বুঝতে না পেরে পড়ালেখায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এ বিষয়ে সরকারের সহযোগিতা করা প্রয়োজন।

সভায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রতিবন্ধী শিশুদের একীভূত শিক্ষার বিষয়ে সবাই যে সমস্যগুলো তুলে ধরেছেন, সেগুলো আমার অজানা নয়।

তিনি বলেন, বাঙালিরা একে অপরের বিষয়ে অনেক আন্তরিক। যে কোনো কিছুই সহজভাবে নিতে পারে। আর এটা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষদের মধ্যেই বেশি। আমাদের মাঝে একীভূত বিষয়টি আগেও ছিলো, এখনো রয়েছে। তাই এ বিষয়টি কাজে লাগিয়ে আমরা প্রতিবন্ধী শিশুদের সুশিক্ষা দিতে কাজ করে যাচ্ছি।

সভায় এসডিএসএলের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১১ সালের পর থেকে সরকারি ও নতুন জাতীয়করণ প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিবন্ধী শিশুর অন্তর্ভূক্তি উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। বিগত ছয় বছর ধরে প্রতিবন্ধী শিশু ভর্তির সংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পেতে থাকলেও সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এর কারণ অনুসন্ধানে উদ্যোগ নেননি।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন এসডিএসএল’র সভাপতি এম ওসমান খালেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সাইফুল মালেক, ইউনিসেফ’র বিশেষজ্ঞ ইকবাল হোসেন প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৮
এসজেএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।