ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৩১ মে ২০২৪, ২২ জিলকদ ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

বগুড়ায় নেপিয়ার ঘাস চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা

কাওছার উল্লাহ আরিফ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৪ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০২০
বগুড়ায় নেপিয়ার ঘাস চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা

বগুড়া: বগুড়ায় দিন দিন বাণিজ্যিকভাবে নেপিয়ার ঘাস চাষের প্রতি ঝুঁকছেন কৃষকরা। অনেকেই এখন এ ঘাস চাষ করে নিজের গবাদি পশুর প্রয়োজন মিটিয়ে বাড়তি অংশ বাজারে বিক্রি করছেন। আর এতে করে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় আর্থিকভাবে লাভবানও হচ্ছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, নেপিয়ার ঘাস নিয়ে কৃষকদের কর্মব্যস্ততা। নির্ধারিত সময়ে জমি থেকে ঘাস তুলে কেউবা ভারে করে, কেউ কাঁধে, অনেকেই ভ্যানগাড়ি ও ভটভটিতে চাপিয়ে বিক্রির জন্য স্থানীয় হাট-বাজারে চলে যান।

নেপিয়ার ঘাস চাষে পরিশ্রম কম। এর চারা একবার জমিতে লাগালে ৩ বছরের মধ্যে নতুন করে লাগাতে হয় না। গবাদি পশুর প্রিয় খাদ্য হিসেবে ভিটামিন ‘এ’ ও অন্যান্য পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এ ঘাসের চাহিদা দিনদিন বাড়ছে।

নেপিয়ার ঘাস নিয়ে কৃষকদের কর্মব্যস্ততা।

নেপিয়ার চাষ প্রসঙ্গে জানইতে চাইলে সদর উপজেলার শাখারিয়া ইউনিয়নের আরিফ হোসেন জানান, তিনি পেশায় একজন কৃষক। চাষাবাদ ও গাভী পালন করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বাড়িতে তার দুটি দুধের গাভী রয়েছে। এরা প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ২৫ লিটার দুধ দেয়। ওই দুধ বিক্রি ও কৃষি কাজ করে তার সংসার খুব ভালোভাবেই চলে। এরই মাঝে গত বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি নেপিয়ার ঘাসের চাষ করছেন। প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের পরামর্শ অনুসারে, সামান্য কিছু জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করেন তিনি। কিন্তু এরই মাঝে নিজের গবাদি পশুর চাহিদা মিটিয়ে এ ঘাসের অনেকটা অংশই তিনি বাজারে বিক্রি করেন। এ থেকে তার সংসারে বাড়তি স্বচ্ছলতাও এসেছে।

শাবগ্রাম ইউনিয়নের চান্দপাড়া গ্রামের সুরুজ মিয়া বাংলানিউজকে জানান, তিনি মূলত পেশায় একজন কৃষক ও ভ্যানগাড়ি চালক। বাড়িতে গবাদি পশু আছে। এসবের পাশাপাশি বিঘাখানেক জমিতে নেপিয়ার জাতের ঘাস লাগিয়েছেন তিনি। নিজের গবাদি পশুগুলোকে খাওয়ানোর পাশাপাশি মাঝেমধ্যেই এই ঘাস বাজারে বিক্রি করেন তিনি। বাণিজ্যকভাবে নেপিয়ার ঘাস বিক্রি করে তার পরিবারে সচ্ছলতা ফিরেছে।

বাণিজ্যকভাবে নেপিয়ার ঘাস বিক্রি করে কৃষকের পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরেছে।

সুরুজ মিয়া আরও জানান, আসন্ন কোরবানির ঈদে বাজারে এ ঘাসের চাহিদা বেড়ে যাবে। তিনি তখন ভ্যান গাড়িতে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরেঘুরে বেশ ভালো দামেই এই নেপিয়ার ঘাস বিক্রি করবেন।

গাবতলী উপজেলার সোলায়মান, ফজলু শেখ, শাহজাহানসহ আরও কয়েক কৃষক জানান, নেপিয়ার ঘাস চাষে  অনেকেই আর্থিকভাবে উপকৃত হচ্ছেন। এ ঘাস সহজ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা যায় এবং পরিশ্রমও অনেক কম। কেবল মাঝে-মাঝে খেতের ভেতরে জন্মানো আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। সব দিক দিয়ে লাভজনক হওয়ায় বেশ কয়েক বছর ধরে তারা এ জাতের ঘাস চাষ করে আসছেন বলে জানান।

এ কৃষকরা আরও জানান, শুরুতে নিজেদের গবাদি পশুর চাহিদা মেটাতেই এই ঘাস চাষ শুরু করেন তারা। পরে বাড়তি অংশ বাণিজ্যকভাবে বিক্রি করতে শুরু করেন। বর্তমানে এ উপজেলার অনেক কৃষকই তাদের দেখাদেখি নেপিয়ার ঘাস চাষ করছেন। বছরের সাধারণ সময়ে স্থানীয় হাটবাজারে এক মুঠো (আটি) ঘাস ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে এবং কোরবানির ঈদের সময় ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি হয় বলে জানান তারা।

চলতি মৌসুমে বগুড়া জেলায় প্রায় ৪ হাজার ৯৬৮ কৃষকপরিবার মোট ৬৩৬.৩৭ একর জমিতে নেপিয়ার জাতের ঘাস চাষ করেছেন।

নেপিয়ার ঘাস চাষে কৃষকদের আগ্রহ প্রসঙ্গে জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, অন্য ফসলের তুলনায় নেপিয়ার ঘাস বেশ লাভজনক। স্বল্প খরচে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হয় এই ঘাস চাষে। চলতি মৌসুমে বগুড়া জেলায় প্রায় ৪ হাজার ৯৬৮ কৃষকপরিবার মোট ৬৩৬.৩৭ একর জমিতে নেপিয়ার জাতের ঘাস চাষ করেছেন। এতে ঘাস উৎপাদন হয়েছে ৪ হাজার ৬৬৩ মেট্রিক টন। অনেক চাষিই নেপিয়ারকে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৪ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০২০
কেইউএ/এইচজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।