ঢাকা, শনিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ মে ২০২৪, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

নিজের করোনামুক্তির গল্প বললেন করোনা ল্যাবের প্রধান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪২ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০২০
নিজের করোনামুক্তির গল্প বললেন করোনা ল্যাবের প্রধান

চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (বিআইটিআইডি) করোনা ল্যাব প্রধান অধ্যাপক ডা. শাকিল আহমেদ করোনামুক্ত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছেন তার করোনা মুক্তির পেছনের গল্প। 

তিনি করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠতে অনুসরণ করেছেন বিভিন্ন পদ্ধতি। যা অন্যদের জন্য হতে পারে করোনা মুক্তির উপায়।

ডা. শাকিল আহমেদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন- এখন সুস্থ বোধ করছি। করোনা আক্রান্তের এগারো দিনে আমার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।

আমার বয়স সাতান্ন। বারো বছর ধরে প্রেশার আর কিছু হার্টেরও সমস্যা আছে। কিন্তু ডায়াবেটিস নেই।  

সেই হিসেবে আমি রিস্কি গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত। সবাই জানতে আগ্রহী করোনা মোকাবিলায় কি করেছি তাই এই লেখা

মনোবল ঠিক রাখতে হবে: প্রথম দিকে বাসাতেই একরুমে আলাদা থাকতে হবে। রাতে ঘুমানো ছাড়া সারাদিন ঘুমিয়ে বা শুয়ে থাকা যাবে না। কিছু বিশ্রাম বাদে বাকি সময় পায়চারি করে, বসে, বই পড়ে, মোবাইল বা নামাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম।

হালকা ব্যায়াম: উঠবস করে, কোমর বাঁকিয়ে ও হাত প্রসারিত করে দু’বেলা ব্যায়াম করতাম।

ফুসফুসের ব্যায়াম: করোনা শ্বাসযন্ত্রের অসুখ হওয়ায় এই ব্যায়াম জরুরি। সোজা দাঁড়িয়ে লম্বা শ্বাস নিয়ে কিছুক্ষণ ধরে রেখে ছেড়ে দিতাম। ৫-৬ বার করে একটু থেমে আরেকবার রিপিট করতাম।  

একবার বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে বুকে বালিশ রেখে পিঠের দিকটা ফুলিয়ে জোরে শ্বাস নিয়ে ছাড়তাম তিনবার। বন্ধ হয়ে থাকা এলভিওলাইগুলো সচল করতে এটা খুব উপকারী।

শ্বাসনালী পরিস্কার রাখা: পানি ফুটিয়ে বাষ্প লম্বা শ্বাস টেনে গ্রহণ করতাম দিনে ২-৩ বার। নাক বন্ধ থাকলে মেন্থল বা কিছু মসলা দিতে পারেন। আমি কিছুই দেইনি।

গলা পরিষ্কার রাখা: বাষ্প নেওয়া শেষ হলে সেই পানিতেই একটু লবন মিশিয়ে গরগরা করতাম ৩ বার।

পানীয়: গরম আদা চা ৩-৪ বার খেতাম। প্রচুর পানি (গরম নয়) খেতাম, লেবু চিপে চিনি লবন দিয়ে শরবত খেতাম। মালটার রস খেয়েছি।

খাবার: কিছু বেছে খাইনি। প্রচুর প্রোটিন খেয়েছি। সকালে দুটো ডিম, দুপুরে ও রাতে মাংস, মুরগী বা বড় মাছ। ফাঁকে সবধরনের ফল খেয়েছি।

চিকিৎসা: করোনার কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। লক্ষণ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হয়। আমার সর্দি আর গায়ে ব্যথা ছিলো। যার জন্য কোনো ওষুধ নেইনি।  

প্রেশারের ওষুধ আর এসপিরিন ছাড়া নিয়মিত কিছু খাইনি। ওষুধের ব্যাপারে আমার পরামর্শ হলো- ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাবেন। আমি কোনো ওষুধই রিকমেন্ড করবো না।

সতর্কতা: সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো- ওয়ার্নিং সাইন বুঝা। পালস অক্সিমিটার সঙ্গে রাখবেন ও চারবার চেক করবেন। অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে গেলে বা শ্বাসকষ্ট শুরু হলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। বয়স কম হলে বাসায় অক্সিজেনের ব্যবস্থা রাখতে পারেন।  

কিন্তু ৬০ এর বেশি বয়স বা অন্যান্য রোগ থাকলে অবশ্যই হাসপাতালে নেবেন। কারণ যে কোনো সময় ভেন্টিলেটর লাগতে পারে। রিস্ক গ্রুপের অন্তর্ভুক্তরা ডাক্তারের পরামর্শে কিছু বেজলাইন পরীক্ষা করিয়ে রাখতে পারেন।

মনে রাখবেন করোনায় আক্রান্ত ৯৭ শতাংশ মানুষই সুস্থ হয়ে যান। যাদের ৮০% এরই তেমন কোনো চিকিৎসা লাগে না। তাই ভয় নয় সাহস দিয়ে করোনাকে জয় করুন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই মহামারি থেকে রক্ষা করুন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০২০
এমএম/এমআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।