দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী, বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে কোনো স্কুল-কলেজ, ক্লাব, সংগঠন, সড়ক, অলিগলি, ফ্লাইওভার তন্ন তন্ন করে খুঁজে পাওয়া যাবে না এমএ হান্নানের নামে। কোথাও নেই এ কর্মবীরের কোনো ম্যুরাল, ভাস্কর্য, এফিটাপও।
১৯৭১ সালে এমএ হান্নান চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
এমএ হান্নানের আদি বাড়ি ছিল ভারতের মুর্শিদাবাদে। সেখান থেকে কুষ্টিয়ার মেহেরপুরে বাড়ি করেন। ঢাকায় লেখাপড়ার সময় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন। চট্টলার সিংহপুরুষ এমএ আজিজের সঙ্গে পরিচয়ের সুবাদে চট্টগ্রামে চলে আসেন। তার বাসা ছিল আলকরণে। যুদ্ধের সময় পরিবারের সদস্যদের ফটিকছড়ির মির্জা আবুল মনসুরের বাড়িতে রেখে তিনি ভারতে দায়িত্ব নেন ক্যাম্পের।
এমএ হান্নানের ছয় ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে দেশে থাকেন শুধু সৈয়দ মো. মাহফুজ। তিনি বাংলানিউজকে বললেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আমার বাবার নামে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের নামকরণ করেছিলেন। পরবর্তীতে সেটির নাম পরিবর্তন করে বিএনপি সরকার। এত দিন ছিল স্বাধীনতার ঘোষণা বেতারে প্রচার নিয়ে ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই। এখন সেটি মিমাংসিত সত্য। বাবাই প্রথম বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা বেতারে প্রচার করেছিলেন। ’
সৈয়দ মো. মাহফুজ বলেন, আমার পাঁচ ভাই থাকেন কানাডায়। তিন বোন কানাডা। এক বোন অস্ট্রেলিয়ায়। আমাদের চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আপার কাছে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) অনুরোধ জানাব যদি সম্ভব হয় তবে কর্ণফুলীর তলদেশে যে টানেল নির্মাণ করছেন সেটি এমএ হান্নানের নামে নামকরণ করা হোক।
তিনি বলেন, চৈতন্যগলিতে বাবার যে কবরটি আছে সেটিও নিশ্চিহ্ন প্রায়। কোনো পরিচিতি ফলক নেই, স্মৃতিস্তম্ভ নেই। ২০১০ সালে ডা. মাহফুজুর রহমান চাচা কবরস্থানের দেয়ালে একটি স্মৃতিফলক দিয়েছিলেন সেটিও বলতে গেলে উধাও হয়ে গেছে।
এমএ হান্নানের স্মৃতি সংরক্ষণে উদ্যোগ নেবেন জানিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, নগর বাইশ মহল্লা সর্দার কমিটি পরিচালিত চৈতন্যগলি কবরস্থানের কবরের ওপর কোনো স্মৃতি সৌধ না করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। তাই এমএ হান্নানের কবরে দৃষ্টিনন্দন কিছু করা যায়নি। এখন আমি উদ্যোগ নিয়েছি আশাকরি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমরা দৃশ্যমান কিছু করতে সক্ষম হবো। এটি আমাদের দায়িত্ব।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ঐতিহাসিক কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রকে ঘিরে সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে। সেখানে জাদুঘর, কমপ্লেক্সসহ অনেক ম্যুরাল, ভাস্কর্য, এফিটাপ তৈরির জন্য মুক্তিযোদ্ধারা প্রস্তাব দিয়েছেন। আমি চাইব সেখানেও এমএ হান্নানের একটি ভাস্কর্য যেন আবশ্যকভাবে রাখা হয়।
২১ নম্বর জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন বাংলানিউজকে জানান, নগরীর কাজীর দেউড়ি থেকে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ সড়কের মুখ পর্যন্ত নূর আহমদ সড়কে আমরা প্রায় ৩৪ জন চট্টল মনীষার টাইলসের ওপর লাইন ড্রয়িংয়ের ম্যুরাল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি। শিল্পী শ্রীকান্ত আচার্য ম্যুরালগুলো তৈরি করবেন। যাতে মনীষীদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতিও থাকবে। আশাকরি, এখানে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচারকারী এমএ হান্নানের ম্যুরালও থাকবে।
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমএ সালাম বাংলানিউজকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা বেতারে প্রথম প্রচার করেছিলেন এমএ হান্নান। তার স্মৃতিতে যে বিমানবন্দরের নামকরণ করা হয়েছিল তা যখন বিএনপি সরকার এসে পাল্টে দিল তখন খুব দুঃখ পেয়েছি। পরে যখন সিভাসুতে দুটি হলের নামকরণের সুযোগ পেলাম আমার উদ্যোগেই বলতে গেলে এমএ হান্নানের নামে একটির নামকরণ করা সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, এমএ হান্নান বাংলাদেশের ইতিহাসে অনিবার্য। তাকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য অনেক কিছু করার আছে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে কমপ্লেক্সসহ অনেক কিছু করার উদ্যোগ নিয়েছিল। আশাকরি, সেখানে এমএ হান্নানকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া হবে। এ ছাড়া আমার পক্ষ থেকে যা যা করার আমি করব।
স্বাধীনতার ‘ঘোষণা’ যে বেতার কেন্দ্রে সেটি এখন নিঃস্ব!
জুপিটার হাউসেই স্বাধীনতা ঘোষণা প্রচারের সিদ্ধান্ত
চট্টগ্রাম বন্দরের জলযুদ্ধের চলচ্চিত্র ‘অপারেশন জ্যাকপট’
‘শপথ ভাঙলে জ্যান্ত পুঁতে ফেলবে জনতা’
বাংলাদেশ সময়: ২৩২১ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৮
এআর/টিসি