ছাত্রীর সঙ্গে সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় ‘নিপীড়নের’ জেরে তার স্বামীর পরিকল্পনায় আলাউদ্দিন আলাওলকে খুন হতে হয়েছে, তদন্তে পাওয়া এমন তথ্যই তুলে ধরা হয়েছে অভিযোগপত্রে। বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) অভিযোগপত্র এবং দোষীপত্র নগর পুলিশের প্রসিকিউশন শাখায় জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
আলাউদ্দিন আলাওল (২৪) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের মাস্টার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল। গত ২২ মার্চ রাতে বায়েজিদের শহীদনগর এলাকায় একটি বাসার বাথরুম থেকে আলাউদ্দিনের হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডের ছয়দিনের মধ্যে খুনের সঙ্গে জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করে বায়েজিদ বোস্তামি থানা পুলিশ। এরা হলেন, মো. ইকবাল হোসেন (২৭) ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার রুম্পা (২১) এবং দুই সৎ ভাই মো. তৈয়ব ও মো. হেলাল।
অভিযোগপত্রে এই চারজনকে আসামি এবং ৩০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। দোষীপত্রে অভিযুক্ত করা হয়েছে মাকসুদ উল্লাহ প্রকাশ মাসুদ (১৭) নামে ইকবালের আরেক সৎ ভাইকে। মাসুদকে পলাতক উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বায়েজিদ বোস্তামি থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) শামীম শেখ বাংলানিউজকে বলেন, অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছি। আরেকজনের বিরুদ্ধে দোষীপত্র দিয়েছি। বয়সে কিশোর হওয়ায় তার বিচার শিশু আদালতে হবে। গ্রেফতারের পর দুই আসামির জবানবন্দিতে যাদের নাম এসেছে তদন্তে তাদের বাইরে আর কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।
হত্যাকাণ্ডের কারণ নিয়ে তদন্তে পাওয়া তথ্য সম্পর্কে এস আই শামীম শেখ বলেন, ভিকটিম এবং আসামি রুম্পার মধ্যে সম্পর্ক ছিল। বিয়ের পরও সম্পর্ক অব্যাহত রেখেছিল তারা। রুম্পার স্বামী ভিকটিমকে তার স্ত্রীকে ফোন না করার জন্য বলেছিল। এরপরও ফোন করে যোগাযোগ অব্যাহত রাখায় ক্ষুব্ধ হয়ে রুম্পার স্বামী তার সৎ ভাইদের নিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটায়। আর রুম্পা ভিকটিমকে প্ররোচিত করে এনে স্বামীর হাতে তুলে দেয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, রুম্পা অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় প্রতিবেশি আলাউদ্দিন আলাওল তার গৃহশিক্ষক ছিলেন। সেই সুবাদে তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক পর্যায়ে রুম্পার বিয়ে হয়ে যায় এবং পরে আবার ছাড়াছাড়ি হয়। রুম্পা পিত্রালয়ে চলে আসার পর তাদের পুরনো সম্পর্ক আবার জেগে উঠে। পরে প্রবাসী ইকবাল হোসেনের সঙ্গে রুম্পার আবারও বিয়ে হয়।
এতে আরও বলা হয়, বিয়ের পর ইকবাল তার স্ত্রীর সঙ্গে আলাউদ্দিনের সম্পর্কের বিষয়টি জেনে যান। ইকবাল স্ত্রীকে আলাউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে নিষেধ করেন। এরপর রুম্পা যোগাযোগ বন্ধ করলেও আলাউদ্দিন তার মোবাইলে কল দিতেন। ইকবাল আলাউদ্দিনকেও ফোন করে তার স্ত্রীর মোবাইলে ফোন না করার অনুরোধ করেন।
কিন্তু বিদেশে থাকা অবস্থায় ইকবাল জানতে পারেন, রুম্পা এবং আলাউদ্দিনের মধ্যে যোগাযোগ অব্যাহত আছে। বিষয়টি শুনে ইকবাল বিদেশ থেকে চলে আসেন। দেশে ফিরে তিনি আরও জানতে পারেন আলাউদ্দিনের মোবাইলে রুম্পার আপত্তিকর কিছু ছবি আছে।
ইকবাল আলাউদ্দিনকে ছবিগুলো ফেরত দেয়া এবং রুম্পার সঙ্গে যোগাযোগ না রাখার অনুরোধ করেন। কিন্তু আলাউদ্দিন ছবি ফেরত দেয়নি। এরপরও রুম্পার মোবাইলে কল করা অব্যাহত রাখেন।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পরিকল্পনা করে রুম্পার মাধ্যমে আলাউদ্দিনকে বায়েজিদে একটি বাসায় ডেকে এনে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে তদন্তে পাওয়া তথ্য সবিস্তারে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। দোষীপত্রে একইভাবে তদন্তে পাওয়া তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগপত্র এবং দোষীপত্র রোববার (২০ আগস্ট) আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখায় জমা দেওয়া হবে। এরপর সেটি সংশ্লিষ্ট আদালতে দাখিল করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৭
আরডিজি/টিসি